Published : 16 Jun 2025, 03:20 PM
রোমাঞ্চকর এক নতুন আবিষ্কারে মহাসাগরে থাকা দুইশো ৩০টি আগে কখনও না দেখা জায়ান্ট বা বিশালাকার ভাইরাস শনাক্ত করেছেন বিজ্ঞানীরা। যার মধ্যে কিছু ভাইরাস সামুদ্রিক খাদ্য শৃঙ্খলে ও মানবস্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে বলে দাবি তাদের।
ভাইরাসের আকার নিয়ে বিজ্ঞানীদের আগে থাকা অনুমানের চেয়েও বড় ও জটিল নতুন এসব ভাইরাস। এগুলোর খোঁজ পেয়েছেন ‘ইউনিভার্সিটি অফ মায়ামি’র ‘রোসেনস্টিয়েল স্কুল অফ মেরিন, অ্যাটমসফেরিক অ্যান্ড আর্থ সায়েন্স’-এর গবেষকরা।
বিশালাকার এসব ভাইরাস দৈনন্দিন জীবনে শোনা সাধারণ ভাইরাসের মতো নয়। এগুলো ‘প্রোটিস্ট’ নামে পরিচিত এককোষী সামুদ্রিক জীবকে সংক্রমিত করে, যার মধ্যে রয়েছে শৈবাল, অ্যামিবা ও ফ্লাজেলেট।
সামুদ্রিক খাদ্য শৃঙ্খলের সবচেয়ে নিচের স্তরে থাকে শৈবাল, অ্যামিবা ও ফ্লাজেলেটের মতো এসব ক্ষুদ্র এককোষী জীব। এগুলোর ওপর নির্ভর করে আরও বড় নানা প্রাণীর জীবনধারা। ফলে এগুলো বিশালাকার ভাইরাসে আক্রান্ত হলে এদের সংখ্যা বা কার্যক্রম পরিবর্তন হতে পারে, যা পুরো খাদ্য শৃঙ্খলে বড় ধরনের প্রভাব পড়তে পারে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজ।
গবেষকরা বলছেন, কিছু ক্ষেত্রে ক্ষতিকর শৈবাল জন্মাতে ভূমিকা রাখে এসব ভাইরাস। এটি এমন এক প্রক্রিয়া, যেখানে শৈবালের অস্বাভাবিক ও দ্রুত বৃদ্ধি ঘটে। এতে মহাসাগরের পানির গুণমান নষ্ট হয়, পানি বিষাক্ত হয়ে ওঠে, মাছ মারা যায় ও তা মানবস্বাস্থ্যের জন্যও ঝুঁকি তৈরি করে।
গবেষণার জন্য উচ্চসক্ষমতার কম্পিউটার ব্যবহার করে উত্তর মেরু বা আর্কটিক থেকে শুরু করে গ্রীষ্ণমণ্ডল পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন মহাসাগর থেকে সংগ্রহ করা বিশাল আকারের ডিএনএ তথ্য বিশ্লেষণ করেছে গবেষক দলটি।
এতসব বিশাল ও জটিল ডেটাসেটের ভেতর থেকে বিশালাকার ভাইরাসের জিনোম বা ডিএনএ-এর গঠন খুঁজে বের করতে ‘বিইআরইএন’ নামের বিশেষ এক কম্পিউটার প্রোগ্রাম তৈরি করেছেন গবেষকরা, যা এসব নতুন ভাইরাস খুঁজে পেতে সাহায্য করেছে তাদের।
বর্তমানে বিশ্বের বিজ্ঞানীদের জন্য উন্মুক্ত ‘বিইআরইএন’ কম্পিউটার প্রোগ্রামটি, যার মাধ্যমে রহস্যময় এসব ভাইরাসকে শনাক্ত করা ও এ নিয়ে গবেষণা করা অনেক সহজ হয়েছে গবেষকদের জন্য।
গবেষণাটি প্রকাশ পেয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘নেচার এনপিজে ভাইরাসেস’-এ, যেখানে কেবল ২৩০টি নয়, বরং ৫৩০টি আগে কখনও দেখা না যাওয়া ভাইরাল প্রোটিনও আবিষ্কার করেছেন গবেষকরা।
এর মধ্যে নয়টি প্রোটিন ছিল সালোকসংশ্লেষণের সঙ্গে জড়িত, যে প্রক্রিয়ায় উদ্ভিদ ও শৈবাল সূর্যের আলো থেকে শক্তি তৈরিতে ব্যবহার করে। এর থেকে ইঙ্গিত মেলে, কিছু বিশালাকার ভাইরাস হয়ত নিজেদের টিকে থাকা বা প্রজনন বাড়ানোর জন্য এদের শিকার প্রাণীর, যেমন শৈবালের এ শক্তি তৈরির বিভিন্ন অংশকে দখল করে নেয়।
গবেষণার প্রধান লেখক ও ‘রোসেনস্টিয়েল স্কুল অফ মেরিন, অ্যাটমসফেরিক অ্যান্ড আর্থ সায়েন্স’-এর পিএইচডি শিক্ষার্থী বেঞ্জামিন মিনচ বলেছেন, এসব ভাইরাসে এমন জিন থাকে, যা কেবল জ্যান্ত কোষেই মেলে।
যার মানে হচ্ছে, এসব ভাইরাস এদের সংক্রমিত জীবের বিপাক নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, যা সমুদ্রে কার্বন ও অন্যান্য পুষ্টি উপাদানের ওপর প্রভাব ফেলে। সহজ ভাষায় বললে, এসব ভাইরাস কেবল সংক্রমণকারী নয়, বরং এরা পৃথিবীর সমুদ্রের রসায়নেও গুরুত্বপূর্ণ সক্রিয় এক খেলোয়ার।
সহ-লেখক মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান এই গবেষণার সম্ভাব্য প্রভাবের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। তিনি বলেন, এসব ভাইরাস কীভাবে সামুদ্রিক প্রাণীর সঙ্গে ক্রিয়া করে, তা বোঝা গেলে ক্ষতিকর শৈবাল বৃদ্ধির পূর্বাভাস ও নিয়ন্ত্রণে বিজ্ঞানীরা আরও দক্ষ হতে পারবেন—যা ফ্লোরিডার মতো উপকূলীয় অঞ্চলে দিন দিন বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
এ ছাড়াও, নতুন শনাক্ত এসব ভাইরাসে এমন এক ধরনের বিশেষ এনজাইম রয়েছে, যা আগে দেখা যায়নি এবং এগুলো ভবিষ্যতে জৈবপ্রযুক্তিতে গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যবহার হতে পারে।