Published : 16 May 2024, 02:35 PM
টিয়া পাখির জীবন বেশ আলোড়নপূর্ণ। এদের জগৎ প্রেম ও প্রতিযোগিতায় ভরে রয়েছে, যেখানে এরা অন্য পাখিদের বাচ্চাদের যত্ন নেয় আবার কখনও কখনও এদের ক্ষতি করার মতো অপ্রত্যাশিত আচরণও করে।
ক্ষুদ্র আকারের দক্ষিণ আমেরিকান পাখিটি কেন এমন আচরণ করে, তা উঠে এসেছে সাম্প্রতিক এক গবেষণায়।
‘ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া বার্কলে’র অধ্যাপক স্টিভেন বেইসিংগারের নেতৃত্বে ভেনিজুয়েলায় প্রায় তিন দশক ধরে এ পালকযুক্ত প্রাণীর গতিবিধি পরীক্ষা করেছেন গবেষকরা।
গবেষণায় উঠে আসে, টিয়া পাখি নিজের স্বগোত্রীয় অন্যান্য পাখির বাচ্চা মেরে ফেলে বা দত্তক নিয়ে থাকে, যেখানে মূল উদ্দীপক হিসেবে কাজ করে প্রেম ও একটি ভালো নীড়ের খোঁজ।
এমন নাটকীয় ঘটনা দেখা যায় তৃণভূমিতে, যেখানে টিয়া পাখিরা ফাঁপা গাছে বাসা বাঁধতে বেশি পছন্দ করে।
এইসব পাখির পারিবারিক আচরণবিধি বুঝতে, বেইসিংগার ও তার গবেষণা দল কৃত্রিম বাসা বাঁধার বিভিন্ন জায়গা তৈরির পাশাপাশি কোড হিসেবে রঙের ব্যান্ড ব্যবহার করে বিভিন্ন একক পাখিকে ট্র্যাক করা শুরু করেন।
এতে দেখা যায়, টিয়া পাখি প্রতিদ্বন্দ্বী টিয়ার বাচ্চা মেরে ফেলে, যেখানে প্রায়শই এর সূত্রপাত ঘটে টিয়া পাখিদের বাসা বাঁধার জায়গা দখলে নেওয়ার জন্য যে তীব্র প্রতিযোগিতা, সেটি থেকে।
পাখিদের এমন আক্রমণাত্মক আচরণের প্রবণতা বেশি দেখা যায়, যেখানে টিয়া পাখির সংখ্যা বেশি ও সে তুলনায় রসদ কম। আর এতে অনুপ্রবেশকারী পুরুষ টিয়াপাখিরা অঞ্চল বা সঙ্গীর ওপর কর্তৃত্ব পাওয়ার উদ্দেশ্যে এরইমধ্যে তৈরি বাসাগুলোয় আক্রমণ করার মাধ্যমে এমন আচরণ করতে পারে।
তবে, বিস্ময়করভাবে কিছু কিছু টিয়া ভিন্ন পথও বেছে নেয়। উদাহরণ হিসেবে, যখন কোনও বাচ্চা টিয়া পাখির মা-বাবা মারা যায়, তখন অন্য টিয়া পাখি এই সম্পর্কহীন বাচ্চাকে দত্তক নিতে পারে।
টিয়া পাখির এ দত্তক নেওয়ার প্রবণতা ‘ন্যাচারাল সিলেকশন’-এর প্রচলিত ধারাকে রীতিমতো চ্যালেঞ্জ করলেও, তা জিনগতভাবে পরবর্তী প্রজন্মকে অহিংস পথের দিকে নিয়ে যেতে পারে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজ।
মজার বিষয় হল, দত্তক নেওয়া টিয়া পাখির বাচ্চারা নিজেদের প্রজনন ক্ষমতা হারায় না। বরং এরা সঙ্গী খুঁজে পাওয়ার পাশাপাশি প্রতিদ্বন্দ্বীদের তুলনায় কম বয়সে প্রজনন শুরু করে। এদের বিবেচনায় দত্তক নেওয়ার মানে, নতুন সঙ্গীর প্রেম ও একেবারে তৈরিকৃত বাসা, উভয়ই খুঁজে পাওয়া।
এ গবেষণাটিতে টিয়া এমন আচরণের পেছনে থাকা বিভিন্ন জটিল উদ্দীপক তুলে ধরা হয়েছে, যেখানে প্রেম, প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও বেঁচে থাকার মধ্যে এক সূক্ষ্ম ভারসাম্য দেখা যায়।
এমনকি কীভাবে সম্পদের জন্য প্রতিযোগিতা প্রাণীজগতে সহানুভূতি ও আগ্রাসন উভয় দিকেই নিয়ে যেতে পারে, তাও ফুটে উঠেছে এ গবেষণায়।
‘ন্যাশনাল সায়েন্স ফাউন্ডেশন’ ও ‘ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক সোসাইটি’র মতো বিভিন্ন সংস্থার অর্থায়ন করা গবেষণাটি ‘এভিয়ান পেরেন্টহুডে’র কৌতুহলী জগতের জানালা খুলে দেয় বলে প্রতিবেদনে লিখেছে নোরিজ।