বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ
Published : 17 May 2025, 08:03 PM
এমনিতে তাকে খুব একটা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে দেখা যায় না। একটু রাশভারী টাইপের, অন্তর্মুখী মানুষ আলফাজ আহমেদ। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে মোহামেডানের প্রথম শিরোপা নিশ্চিত হওয়ার পর সেই চেনা বৃত্ত থেকে বের হলেন তিনি। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সাথে আলাপচারিতায় উচ্ছ্বাসভরা কণ্ঠে বললেন, অনেক প্রচেষ্টার ফল অবশেষে পেল মোহামেডান।
কুমিল্লার শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়ামে শনিবার মুখোমুখি হয় আবাহনী ও ফর্টিস এফসি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে ম্যাচটি টিম স্টাফদের সাথে বসে ল্যাপটপে বসে ম্যাচ দেখছেন আলফাজও। তা দেখারই কথা ছিল। কারণ, এই ম্যাচের উপর নির্ভর করছিল, তিন ম্যাচ হাতে রেখে মোহামেডান লিগ জিতে নিবে কিনা।
ফর্টিসের বিপক্ষে আবাহনীর ২-১ গোলের হারে সে সমীকরণ মিলে যায়। ১৫ ম্যাচে ৩৮ পয়েন্ট নিয়ে আগে থেকেই লিগ শিরোপার ঘ্রাণ পাওয়া মোহামেডানের আঙিনায় ছড়িয়ে পড়ে প্রাপ্তির সুবাস। আবাহনীর বর্তমান পয়েন্ট ২৮। লিগের বাকি তিন রাউন্ড বাকি। তবে, এখন সেটা মোহামেডানের জন্য স্রেফ নিয়মরক্ষার ম্যাচ।
২০০৭ সালে পেশাদার লিগ নামকরণের পর গত মৌসুমেও হাহাকার দূরের খুব কাছাকাছি এসেছিল মোহামেডান, কিন্তু পূর্ণতা দিতে পারেনি। টেবিলে বসুন্ধরা কিংসের পরে অর্থাৎ দ্বিতীয় স্থানে থেকে তারা শেষ করেছিল আসর। এবার সে অপেক্ষার পালা ফুরালো আলফাজের মোহামেডানের। যদিও ‘আলফাজের মোহামেডান’ উপমায় ঘোর আপত্তি আলফাজের!
“মোহামেডানের এই সাফল্যে সবার ভুমিকা আছে। ক্লাব সভাপতি, কোচিং স্টাফদের অবদান অনেক। তবে খেলোয়াড়দের ভুমিকা সবচেয়ে বেশি। তারাই মাঠে সেরাটা দিয়েছে।”
বসুন্ধরা কিংসের মতো ‘বড় বাজেটের’ দল নয় মোহামেডান। সবশেষ দলবদলেও তারা খুব বেশি ব্যয় করেনি। সুজন হোসেন, সৌরভ দেওয়ান, শাকিল আহাদ তপু-এই স্থানীয়দের মতো সুলেমানে দিয়াবাতে, মোজাফ্ফর মোজাফ্ফরভের মতো বিদেশি নির্ভরযোগ্যদেরও ধরে রাখে দলটি। আলফাজের মনে হচ্ছে, লম্বা সময়ে এক সাথে খেলায় তাদের টিম বন্ডিং ছিল দারুণ।
“আমরা তিন চার বছর এই দলকে ধরে রেখেছি। নতুন খেলোয়াড় খুব বেশি দলে টানিনি আবার আমাদের ছেড়ে খুব বেশি খেলোয়াড়ও চলে যায়নি। ফলে আমরা একই দল নিয়ে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। নকীব (ইমতিয়াজ আহমেদ, টিম ম্যানেজার), আমরা মিলে বন্ডিং ধরে রেখেছি। ছেলেরাও আমাদের উপর আস্থা রেখে নিজেদের সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করেছে। এ কারণেই সাফল্য এসেছে।”
২০২২ সালে শন লেন চলে যাওয়ার পর মোহামেডানের হাল ধরেন শফিকুল ইসলাম মানিক। তার বিদায়ে ২০২৩ সালের মার্চে দলটির ডাগআউটে আসেন আলফাজ। সাবেক এই তারকা ফরোয়ার্ডের কোচিংয়ে মোহামেডান ২০২২-২৩ মৌসুমের ফেডারেশন কাপ জিতে নেয়। এ মৌসুমের শুরুতে বাংলাদেশ চ্যালেঞ্জ কাপ জয়ের আশাও জাগায় সাদাকালো জার্সিধারীরা। কিন্তু এগিয়ে গিয়েও পরে বসুন্ধরা কিংসের বিপক্ষে ৩-১ গোলে হেরে যায় তারা।
দেশের শীর্ষ লিগে গত কয়েক বছর ধরে কিংসেরই রাজত্ব চলছে। ২০১৮-১৯ মৌসুম থেকে দলটি টানা পাঁচ বার শিরোপা জিতে নেয়, মাঝে ২০১৯-২০ মৌসুমের লিগ পরিত্যাক্ত হয় করোনা মহামারির কারণে। শিরোপা ধরে রাখার মিশনে নামা কিংসকে এবার লিগের দুই পর্বেই যথাক্রমে ১-০ ও ২-১ ব্যবধানে হারায় মোহামেডান।
লিগ টেবিলে পিছু ছোটা চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনীর উপরও এবার ছড়ি ঘোরায় মোহামেডান। প্রথম লেগে ১-০ ব্যবধানের জয়ের পর দ্বিতীয় লেগে তাদের সাথে গোলশূন্য ড্র করে আলফাজের দল। চলতি লিগে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে কম ম্যাচ হেরেছে তারা, ১৫ ম্যাচে ১২ জয় ও দুই ড্রয়ের বিপরীতে হার মাত্র ১টি।
ওই হার ছিল চমক জাগানিয়া, টেবিলে নিচের দিকের দল ফকিরেরপুল ইয়ংমেন্সের বিপক্ষে গত জানুয়ারিতে ১-০ গোলে হেরেছিল তারা। তবে ওই হোঁচটটুকু বাদ দিলে মোহামেডান ছিল দুর্বার। লম্বা সময় ধরে অনেক প্রচেষ্টায় মোহামেডান দুর্বার হয়ে উঠেছে, মনে করেন আলফাজ।
“নিজেদের উপর আস্থা রেখে আমরা লম্বা সময় ধরে পরিশ্রম করেছি। খেলোয়াড়দের, টিম স্টাফদের, আমাদের কারো আন্তরিকতা বলেন, চেষ্টা বলেন, কোনো কিছুর কমতি ছিল না। বলতে পারেন, অনেক প্রচেষ্টার ফল মোহামেডানের এই লিগ জয়।”