ইংলিশ ফুটবল
Published : 20 May 2025, 05:10 PM
অধিনায়কের আর্মব্যান্ড বাহুতে জড়িয়ে ব্রাইটন অ্যান্ড হোভ অ্যালবিয়নের বিপক্ষে মাঠে নেমেই দুটি মাইলফলক স্পর্শ করেন মোহামেদ সালাহ। তার সামনে সুযোগ ছিল একটি রেকর্ড ছোঁয়ার। সুবর্ণ সুযোগও এসেছিল গোলের। কিন্তু পোস্ট ফাঁকা পেয়েও অভাবনীয়ভাবে গোল করতে পারেননি তিনি। তাতে অপেক্ষাও বেড়েছে লিভারপুল তারকার।
ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে সোমবার রাতে ব্রাইটনের মাঠে দুই দফায় এগিয়েও জিততে পারেনি আগেই শিরোপা জেতা লিভারপুল। রোমাঞ্চকর লড়াইয়ে ৩-২ গোলের জয় তুলে নেয় ব্রাইটন।
প্রিমিয়ার লিগে ৩০০তম ও লিভারপুলের জার্সিতে ৪০০তম ম্যাচ খেলতে নেমে সালাহ গোলের সেরা সুযোগটা পান দ্বিতীয়ার্ধের নবম মিনিটে। কোডি হাকপোর পাস বক্সে পান তিনি। পেছনে ছিল প্রতিপক্ষের এক ডিফেন্ডার, গোলরক্ষক এক পাশে সরে থাকায় পোস্ট ছিল ফাঁকা। কিন্তু স্রেফ সাত গজ দূর থেকে অবিশ্বাস্যভাবে বাইরে মেরে বসেন মিশরীয় ফরোয়ার্ড।
ওই বলটা জালে পাঠাতে পারলে প্রিমিয়ার লিগ যুগে এক আসরে সবচেয়ে বেশি গোলে সম্পৃক্ত (গোল ও অ্যাসিস্ট) থাকার রেকর্ড স্পর্শ করতেন সালাহ।
মাস দুয়েক আগেও রেকর্ডটা তার ভেঙে দেওয়া সময়ের ব্যাপার বলেই মনে হচ্ছিল। গত ৮ মার্চ সাউথ্যাম্পটনের বিপক্ষে জোড়া গোলের পর চলতি আসরে ২৯ ম্যাচে তার গোল হয়ে যায় ২৭টি ও অ্যাসিস্ট ১৭টি, দুইয়ে মিলে ৪৪টি। তখন দুই গ্রেট অ্যান্ড্রু কোল ও অ্যালান শিয়েরারের যৌথ রেকর্ড (৪৭) থেকে স্রেফ তিনটি দূরে তিনি।
প্রিমিয়ার লিগের এক আসরে থিয়েরি অঁরি ও কেভিন ডে ব্রুইনের সর্বোচ্চ অ্যাসিস্টের যৌথ রেকর্ডও (২০) ছাড়িয়ে যাওয়া তার জন্য তখন মনে হচ্ছিল সময়ের ব্যাপার।
কিন্তু সাউথ্যাম্পটন ম্যাচের পর থেকে ছন্দ হারিয়ে ফেলেন সালাহ। এই সময়ে লিগে আট ম্যাচে মাত্র একটি করে গোল ও অ্যাসিস্ট করতে পেরেছেন তিনি। ওই দুটি রেকর্ডও তাই এখনও ছুঁতে পারেননি।
গত ২৭ এপ্রিল, চার ম্যাচ বাকি থাকতে লিভারপুলের লিগ শিরোপা নিশ্চিতের পর সালাহ বলেছিলেন, “আশা করি আমি শিগগিরই (সর্বোচ্চ গোলে সম্পৃক্ত থাকার রেকর্ড) ভাঙতে পারব। এটা এমন কিছু যার জন্য এগিয়ে যেতে ও কঠোর পরিশ্রম করতে আমার নিজেকে তাগাদা দিতে হবে।”
টটেনহ্যাম হটস্পারকে ৫-১ গোলে গুঁড়িয়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর লিভারপুল লিগে আর জিততে পারেনি (৩ ম্যাচের ২টিতে হার ও ১টি ড্র)। প্রিমিয়ার লিগ যুগে শিরোপা নিশ্চিতের পর একই আসরে পরের তিন ম্যাচে জিততে না পারা প্রথম দল তারাই।
আসরে তাদের ম্যাচ বাকি আছে এখন আর একটি, অ্যানফিল্ডে আগামী রোববার ক্রিস্টাল প্যালেসের বিপক্ষে। রেকর্ড ভাঙতে পারবেন কি সালাহ?
ব্রাইটনের বিপক্ষে হারা ম্যাচটিতে প্রথমবারের মতো প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচে লিভারপুলের অধিনায়কত্ব করা সালাহর একটি রেকর্ড স্পর্শ করা অবশ্য প্রায় নিশ্চিত। ২৮ গোল নিয়ে এবারের লিগের সর্বোচ্চ স্কোরার তিনি অনেকটা ব্যবধানে এগিয়ে থেকে, দ্বিতীয় স্থানে থাকা নিউক্যাসল ইউনাইটেডের আলেকসান্দার ইসাকের চেয়ে ৫টি বেশি, নিউক্যাসলেরও ম্যাচ বাকি আর একটি।
শেষ রাউন্ডে অতি নাটকীয় কিছু না হলে চতুর্থবারের মতো প্রিমিয়ার লিগের সর্বোচ্চ স্কোরারের পুরস্কার গোল্ডেন বুট জিতবেন সালাহ। স্পর্শ করবেন সবচেয়ে বেশি চারবার জেতা আর্সেনালের সাবেক তারকা অঁরিকে।
ইউরোপের শীর্ষ লিগগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ গোলের পুরস্কার ইউরোপিয়ান গোল্ডেন শু জয়েরও হাতছানি সালাহর সামনে। বর্তমানে এই তালিকার শীর্ষে আছেন স্পোর্তিং লিসবনের সুইডিশ স্ট্রাইকার ভিক্তর ইয়োকেরেস। পর্তুগিজ লিগ এরই মধ্যে শেষ হয়ে যাওয়ায় অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে তাকে।
ইয়োকেরেসকে ছাড়িয়ে যেতে শেষ রাউন্ডে সালাহর প্রয়োজন দুটি গোল, এজন্য একটি গোল দরকার রেয়াল মাদ্রিদ তারকা কিলিয়ান এমবাপের, তাদেরও লা লিগায় ম্যাচ বাকি একটি।
গোলের দিক থেকে ইয়োকেরেস (৩৯) অবশ্য অনেক এগিয়ে আছেন সালাহ (২৮) ও এমবাপের (২৯) চেয়ে। তবে শুধু গোল বেশি হলেই ইউরোপিয়ান গোল্ডেন শু পাওয়া যায় না। লিগের শক্তির বিচারে এখানে আছে পয়েন্ট সিস্টেম।
ইয়োকেরেসের যেমন এখন আছে ৫৮.৫ পয়েন্ট, এমবাপের ৫৮ ও সালাহর ৫৬ পয়েন্ট।
১৯৬৭-৬৮ মৌসুমে শুরুর পর থেকে যেকোনো ইউরোপিয়ান লিগের সর্বোচ্চ স্কোরারকে দেওয়া হতো গোল্ডেন শু। তবে ১৯৯৭ সালে নিয়ম পরিবর্তন করে র্যাঙ্কিং ফরম্যাট ব্যবহার করে শীর্ষ লিগের খেলোয়াড়দের দেওয়া হয় এই পুরস্কার।
২০১৭ সালে রোমা থেকে লিভারপুলে যোগ দেওয়ার পর থেকে দলটির হয়ে ৪০০ ম্যাচে সালাহর নাম জড়িয়ে আছে ৩৫৪ গোলে (২৪৪ গোল ও ১১০ অ্যাসিস্ট)।
৩৮ ম্যাচের প্রিমিয়ার লিগে এক আসরে সবচেয়ে বেশি গোলে সম্পৃক্ত থাকার নতুন রেকর্ড আগেই করে ফেলেছেন তিনি। এখানে ছাড়িয়ে গেছেন অঁরি (২০০২-০৩ মৌসুমে ২৪ গোল ও ২০ অ্যাসিস্ট) ও আর্লিং হলান্ডের (২০২২-২৩ মৌসুমে ৩৬ গোল ও ৮ অ্যাসিস্ট) যৌথ রেকর্ড (৪৪টি)।
৪২ ম্যাচের আসরে সর্বোচ্চ ৪৭টি করে গোলে সম্পৃক্ত ছিলেন অ্যান্ড্রু কোল ও অ্যালান শিয়েরার। ১৯৯৩-৯৪ মৌসুমে কোল (৩৪ গোল ও ১৩ অ্যাসিস্ট) রেকর্ড গড়ার পরের মৌসুমে সেখানে ভাগ বসান শিয়েরার (৩৪ গোল ও ১৩ অ্যাসিস্ট)।
সালাহ তাদের ছুঁতে কিংবা ছাড়িয়ে যেতে পারেন কি না, সেটাই এখন দেখার অপেক্ষা।
২০০৬-০৭ মৌসুম থেকে ইংল্যান্ড, স্পেন, ইতালি, জার্মানি অথবা ফ্রান্সের শীর্ষ লিগে এক আসরে ৫০ বা এর বেশি গোলে সম্পৃক্ত থাকার কীর্তি গড়তে পেরেছেন কেবল চার জন- বার্সেলোনার হয়ে লিওনেল মেসি ও রেয়াল মাদ্রিদের হয়ে ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো (দুজনই তিনবার করে), বার্সেলোনার হয়ে লুইস সুয়ারেস ও পিএসজির হয়ে জ্লাতান ইব্রাহিমোভিচ (দুজনই একবার করে)।
২০১১-১২ মৌসুমে লা লিগায় অবিশ্বাস্যভাবে ৬৬ গোলে (৫০ গোল ও ১৬ অ্যাসিস্ট) সম্পৃক্ত ছিলেন মেসি, একবিংশ শতাব্দীতে ইউরোপের শীর্ষ পাঁচ লিগে যা রেকর্ড। আর্জেন্টাইন তারকার অমন অতিমানবীয় পারফরম্যান্সের পরও অবশ্য ওই মৌসুমে লিগ জিততে পারেনি বার্সেলোনা!