Published : 17 May 2025, 12:31 PM
ছয় বছর বয়সে গুটি গুটি পায়ে লিভারপুলের একাডেমিতে পা রেখেছিলেন ট্রেন্ট অ্যালেকজ্যান্ডার-আর্নল্ড। সপ্তাহে দুই-তিন দিন অনুশীলন করতেন তখন। ক্রমে সেই একাডেমিই হলো তার ঠিকানা। নিজ শহরের ক্লাবকে আপন করে নিলেন একসময়। একাডেমি থেকে যুব দল হয়ে মূল দলে জায়গা করে নিলেন। শহরের প্রিয় সন্তান ঠাঁই করে নিলেন সমর্থকদের হৃদয়ে। ২০ বছরের সেই বন্ধন ছিন্ন করার ঘোষণা যখন দিলেন তিনি, স্বাদ পেলেন উল্টো এক অভিজ্ঞতার। দুয়ো শুনলেন সেই সমর্থকদের কাছ থেকেই!
মৌসুমে আরও দুটি ম্যাচ বাকি আছে লিভারপুলের। মঙ্গলবার তারা খেলবে ব্রাইটনের মাঠে। পরের রোববার ঘরের মাঠে তাদের প্রতিপক্ষ ক্রিস্টাল প্যালেস। সেটিই হতে পারে আলেকজ্যান্ডার-আর্নল্ডের বিদায়ী ম্যাচ।
ক্লাব ছাড়ার ঘোষণা দেওয়ার পর গত রোববার আর্সেনালের বিপক্ষে ম্যাচে ঘরের মাঠে সমর্থকদের একটি অংশ দুয়ো দেয় আলেকজ্যান্ডার-আর্নল্ডকে। বাকি দুই ম্যাচেও এমন কিছু দেখা যাওয়ার শঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
ওই ম্যাচের পরই অবশ্য কোচ ও সতীর্থদের কয়েকজন হতাশার প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন আলেকজ্যান্ডার-আর্নল্ডের সমর্থকদের আচরণে। এবার মুখ খুললেন সালাহ। লিভারপুলের তারকা ফরোয়ার্ড স্কাই স্পোর্টসকে বললেন, আলেকজ্যান্ডার-আর্নল্ডের এটা প্রাপ্য নয়।
“অবশ্যই (দুঃখ পেয়েছি সমর্থকদের আচরণে)… খুবই অবাক হয়েছিলাম আমি, কারণ লিভারপুলের সমর্থকদের আচরণ তো এমন হওয়ার কথা নয়। কারও প্রতিই এমন প্রতিক্রিয়া দেখানো উচিত না। যারা এখানে খেলেছে, অন্তত ছয় মাসের জন্য হলেও, সবাইকে সবসময় প্রশংসা করি আমরা।”
“ভেবে দেখুন, যে ছেলেটি গত ২০ বছর ধরে তার সবকিছু উজাড় করে দিয়েছে ক্লাবের প্রতি… তার সঙ্গে এরকম হওয়া উচিত নয়। আশা করি, পরের ম্যাচে এটা বদলাবে, তা ব্রাইটনের বিপক্ষে হোক বা মৌসুমের শেষ ম্যাচে…। কারণ দারুণ একটা বিদায় তার প্রাপ্য।”
মৌসুমজুড়ে সালাহর নিজের চুক্তি নিয়েও টানা টানাপোড়েন ও অনিশ্চয়তা ছিল। অবশেষে গত মাসে দুই বছরের নতুন চুক্তিতে সই করেছেন তিনি। লিভারপুলের ইতিহাসের সেরা ফরোয়ার্ডদের একজন বললেন, সতীর্থের ক্লাব ছাড়ার কারণটা তিনি অনুধাবন করতে পারছেন।
“এটা তার সিদ্ধান্ত। একটি ক্লাবে ২০ বছর কাটানো কঠিন। লোকে মনে করে, ক্লাবে থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়টা সহজ। আসলে তা নয়, কাজটা সহজ নয়। আমি ওর সঙ্গে এসব নিয়ে খুব একটা কথা বলতে চাইনি, কারণ ওকে আমার দলে চাই। কিন্তু কারণও বুঝি (ক্লাব ছেড়ে যাওয়ার)।”
“অবশ্যই অনেক মিস করব ওকে। গতকাল ওকে বলেছি বিদায়বেলায় যেন চোখে চোখ না রাখে, কারণ ওকে সত্যিই ভালোবাসি।”
সালাহর মতে, ভক্ত-সমর্থকেরা অনেক সময়ই একজন তারকার ভেতরের ছবিটা দেখতে পান না বা তাদের মানসিক অবস্থা বুঝতে চান না।
“ক্লাব ছেড়ে যাওয়ার সময় সেরা বিদায় সংবর্ধনা প্রাপ্য ওর। এই শহর ও এই ক্লাবের জন্য অনেক কিছু করেছে ও। ক্লাবের ইতিহাসের সেরাদের একজন ও। এখন ওর মনে হয়েছে, নতুন চ্যালেঞ্জ নিতে চায়। আমার সঙ্গে এটা নিয়ে কথা বলেছে। এটাই ওর সিদ্ধান্ত, নিশ্চিতভাবেই।”
“২৬ বছর বয়সী সে, দুইবার লিগ জিতেছে এই ক্লাবে। এর চেয়ে বেশি কী আর করতে পারত! নিজেকে বদলানো ও চ্যালেঞ্জ জানানোর প্রয়োজন ছিল ওর। লোকে এসব ব্যাপার বেশি বোঝে না। কিন্তু এই ক্লাবে ২০ বছর ধরে আছে ও। এক ক্লাবে ২০ বছর থাকা মানসিকভাবে খুবই কঠিন। এই জায়গাকে আমরা সবাই ভালোবাসি। অবশ্যই ভালোবাসি। কিন্তু একই জায়গায় প্রতিদিনই যাওয়া, মানসিকভাবে অবসাদময় হতে পারে কারও জন্য।”
সালাহ আবারও বললেন, লিভারপুলে কোনোভাবেই দুয়ো প্রাপ্য নয় অ্যালেকজান্ডার-আর্নল্ডের।
“ওর সবচেয়ে ভালোটাই চাই আমি। সবসময় ওর সঙ্গে যোগাযোগ থাকবে আমার। সমর্থকেরা ওর প্রতি নিষ্ঠুর আচরণ করেছে। এটা ওর প্রাপ্য নয়, কারণ এই সমর্থকদের জন্য সবটুকু উজাড় করে দিয়েছে ও।”