Published : 21 May 2025, 12:16 PM
ম্যানচেস্টার সিটির জন্য ম্যাচটি ছিল স্বস্তির ও আনন্দের। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে জায়গা না পাওয়ার শঙ্কা দূর হলো অনেকটাই। তবে খুশির সেই আবহে বেজে উঠেছে বিদায়ের রাগিনীও। ক্লাবের কিংবদন্তি ও সর্বকালের সেরাদের একজন ঘরের মাঠে যে খেললেন শেষবার! ইতিহাদ স্টেডিয়ামে কেভিন ডে ব্রুইনের বিদায়ী ম্যাচে বয়ে যায় আবেগের স্রোত। প্রিয় শিষ্যকে কান্নাভেজা চোখে বিদায় জানান কোচ পেপ গুয়ার্দিওলা।
ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের এই ম্যাচে মঙ্গলবার বোর্নমাউথকে ৩-১ গোলে হারিয়ে পয়েন্ট তালিকার তিন নম্বরে উঠে আসে ম্যানচেস্টার সিটি। মৌসুম আর একটি ম্যাচ বাকি তাদের, রোববার সেই ম্যাচটি ফুলহ্যামের মাঠে।
৬৭তম মিনিটে মাতেও কোভাচিচ লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়ার মিনিট দুয়েক পর দলীয় ভারসাম্যের স্বার্থে ডে ব্রুইনেকে তুলে নেন কোচ পেপ গুয়ার্দিওলা। মাঠময় তৈরি হয় আবেগঘন পরিস্থিতি। দর্শকদের তুমুল অভিনন্দনের জবাব দিয়ে, সতীর্থ ও প্রতিপক্ষের ভালোবাসার ছোঁয়া নিয়ে আস্তে আস্তে মাঠ থেকে বেরিয়ে যান ডে ব্রুইনে, প্রিয় আঙিনা থেকে শেষবার!
তার মুখে এক ঝলক হাসি দেখা যায় তখন, চেহারায় ফুটে ওঠে আবেগ ধরে রাখার প্রচেষ্টাও। কোচ গুয়ার্দিওলা তাকে আলিঙ্গনে জড়ান।
ম্যাচের আগে ‘কিং কেভ’ লেখা বিশাল এক টিফো ঝুলিয়ে দেওয়া হয় গ্যালারিতে। ম্যাচের পর গোটা দল ‘গার্ড অব অনার’ দেয় দলের অনেক সাফল্যের নায়ককে।
বিশেষ একটি ভিডিও দেখানো হয় স্টেডিয়ামের বড় পর্দায়, যেখানে ডে ব্রুইনকে স্তুতিতে ভাসান ম্যানচেস্টার সিটির নানা সময়ের তারকা সের্হিও আগুয়েরো, রাহিম স্টার্লিং, রিয়াদ মাহরেজ, ফের্নান্দিনিয়ো, ভিনসেন্ট কোম্পানি, জো হার্ট ও লেরয় সানে।
ভিডিওটি দেখে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন গুয়ার্দিওলা। ডে ব্রুইনেকে নিয়ে কথা বলতে গিয়ে চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি ম্যানচেস্টার সিটি কোচ।
“সবাই ছিল সেখানে, খুবই দারুণ। ১০ বছর, অনেক অনেক ম্যাচ, অনেক শিরোপা, অসাধারণ অনেক মুহূর্ত। তার প্রতি ভালোবাসা কতটা ছিল, সেটির কিছুটা আজকে ফুটে উঠেছে।”
“দিনটি বেদনার। তার অভাব অবশ্যই অনুভূত হবে। অন্য দিকে, দিনটি তার জন্য দারুণ যে দলের জয়ে অবদান রাখতে পেরেছে আরও একবার, যে জয়টি আমাদের জন্য মহাগুরুত্বপূর্ণ।”
১০ বছরে ম্যানচেস্টার সিটিতে ১৬টি ট্রফি জিতেছেন ডে ব্রুইনে। তবে এটুকুতে স্রেফ ফুটিয়ে তোলা যাবে না এই ক্লাবে তার সময়টুকু। বছরের পর বছর তিনি ছিলেন মাঝমাঠের প্রাণভ্রোমরা, যিনি দলকে জীবন্ত রাখতেন, এক সুতোয় গাঁথতেন। ক্লাবের খেলার ধরন নিয়ন্ত্রণ হতো তাকে দিয়েই। একটা সময় তিনি হয়ে উঠেছিলেন এই ক্লাবের প্রতীক।
এমন একজনকে হারানোর ক্ষতি অপূরণীয়, বলছেন গুয়ার্দিওলা।
“কিছু ফুটবলার আছে, যাদের বিকল্প হয় না। খুবই কঠিন বিকল্প কাউকে পাওয়া। ব্য্যাপারটি শুধু কিছু গোল বা অ্যাসিস্ট কিংবা অবিশ্বাস্য কিছু মুহূর্ত নয়, এটি হলো সংযোগের ব্যাপার, যেভাবে তারা খেলে, লোকে যা ভালোবাসে, তেমন কিছুই বছরের পর বছর ধরে ক্লাবকে দিয়ে যাওয়া।”
এই মৌসুম দিয়েই ম্যানচেস্টার সিটিতে চুক্তির মেয়াদ শেষ হচ্ছে ডে ব্রুইনের। গত মসে তিনি ঘোষণা দেন মৌসুম শেষে ক্লাব ছাড়ার। প্রিয় ক্লাবের কাছ থেকে নতুন চুক্তির প্রস্তাব না পাওয়ায় বিস্ময় ও আক্ষেপের কথাও বলেছিলেন তিনি।
তবে বিদায়বেলায় সেই আক্ষেপকে পাশে সরিয়ে ৩৩ বছর বয়সী মিডফিল্ডার পেছনে ফিরে তাকালেন তার পুরো ভ্রমণে।
“কিছুটা অদ্ভুত লাগছে। অবিশ্বাস্য এক ভ্রমণ ছিল এটি। আমি চেয়েছি লোকের মনে আনন্দ জোগাতে, আগ্রাসী ফুটবল খেলতে, সৃষ্টিশীলতা মেলে ধরতে। মাঠে আমি এমনই থাকতে চাই এবং উপভোগ করতে চাই। এত বছর ধরে ঘাম ঝরানো ও ক্লাবের জন্য কিছু করতে পারা ছিল দারুণ। আমি দারুণ গর্বিত।”
ঘরের মাঠে বিদায়ের আয়োজনও হৃদয় ছুঁয়ে গেছে তার।
“গোটা স্টেডিয়াম মিলে আমাকে ও আমার পরিবারের পাশে থাকছে, এতেই সবকিছু ফুটে ওঠে। ৫০ হাজার মানুষের কাছ থেকে এমন বিদায় কজন পায়? অবিশ্বাস্য ছিল এটি।”
ঘরের মাঠে বিদায়ী ম্যাচটি গোল দিয়ে রাঙানোর বড় একটি সুযোগ তিনি পেয়েছিলেন ম্যাচের ২২তম মিনিটে। অবিশ্বাস্যভাবে সুযোগটি কাজে লাগাতে পারেননি তিনি। সেটা নিয়ে কিছুটা মজাও করলেন।
“ভয়ঙ্কর মিস ছিল এটি, কোনো অজুহাত নেই। আমার ছেলে আজকে আমাকে ছাড়বে না!”
কিছুদিন ধরেই যেটি শোনা যাচ্ছিল, এ দিন সেটির আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হয় ক্লাবের পক্ষ থেকে। স্টেডিয়ামের সামনে ডে ব্রুইনের একটি মূর্তি স্থাপন করা হবে। এই ঘোষণায় দারুণ আপ্লুত তিনি, “ এর মানে আমি সবসময় এই ক্লাবের অংশ হয়েই থাকব।”