Published : 26 May 2025, 03:52 PM
নাদাল, ফেদেরার, জোকোভিচ ও মারে-টেনিস সমর্থকদের কাছে যারা ‘দা ফ্যাব ফোর’ কিংবা ‘দা বিগ ফোর’ নামে পরিচিত। দীর্ঘদিন টেনিসবিশ্বে দাপট দেখানো এই চারের উপস্থিতিতে রোলাঁ গারোঁ যেন আরও আলোকিত হয়ে উঠল। ‘রাজা’ রাফায়েল নাদালের বিদায়ের উপলক্ষ পেল ভিন্ন এক মাত্রা।
রজার ফেদেরার ও অ্যান্ডি মারে আগেই ক্যারিয়ারের ইতি টেনেছেন। বিগ ফোরের তৃতীয়জন হিসেবে গত বছরের নভেম্বরে অবসরে যান নাদাল। কিন্তু তিনি যে আঙিনায় ক্যারিয়ারে সবচেয়ে সফল সময় কাটিয়েছেন, অবিশ্বাস্য সব রেকর্ড-কীর্তি গড়েছেন, সত্যিকার অর্থেই যেখানে হয়ে উঠেছিলেন অবিসংবাদিত সম্রাট, সেই ফরাসি ওপেন থেকে তার আনুষ্ঠানিক বিদায় নেওয়া কখনো হয়নি।
বছরের দ্বিতীয় গ্র্যান্ড স্ল্যামে রোববার সেই আয়োজনই করে টুর্নামেন্ট কর্তৃপক্ষ।
টুর্নামেন্টের পুরুষ ও নারী এককের ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন কার্লোস আলকারাস ও ইগা শিয়াওতেকসহ স্টেডিয়ামে হাজারো সমর্থকের পরণে ছিল ‘মেখসি রাফা’ বা ‘ধন্যবাদ রাফা’ লেখা পোশাক। এখানে ১৪ বারের চ্যাম্পিয়নকে অমর করে রাখতে ফিলিপ শাথুইয়ে কোর্টের একটা অংশে নাদালের নামে ফলক স্থাপন করা হয়।
তার হাতে তুলে দেওয়া হয় একটি স্মারক, যেখানে বড় করে লেখা ‘লেজেন্ড’, সত্যিই তো তিনি কিংবদন্তি।
এত এত আয়োজনের মাঝেও যদি কিছু অপূর্ণতা রয়ে যায়, সেটা পূর্ণতা পায় ফ্যাব ফোরের বাকি তিনের উপস্থিতিতে। কোর্টে হয়তো তারা ছিলেন প্রবল প্রতিপক্ষ; কিন্তু লড়াই শেষ হলেই সেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়ে যেত উধাও। তারা ছিলেন বন্ধুর মতো। নানা সময়ে নাদাল ও ফেদেরারের বন্ধুত্বের কথা তো শোনা গেছে আগেও।
ফেদেরার, জোকোভিচ ও মারে কোর্টে আসা মাত্র চারিদিকের গর্জন, ভক্ত-সমর্থকদের উল্লাসের ধ্বনি বেড়ে যায় কয়েক গুণ। বন্ধু নাদালের সঙ্গে তাদের কিছু কথা বলতে দেখা যায়, হাসতে দেখা যায়। এরপর বড় পর্দায় ভেসে ওঠে নাদালের ক্যারিয়ারের অবিস্মরণীয় কিছু মুহূর্ত।
এত এত আয়োজনের মাঝে বন্ধুদের পাশে পেয়ে, স্মৃতির পাতায় ক্যারিয়ারের সেরা সময়ে ফিরে গিয়ে আরও আপ্লুত হয়ে পড়েন নাদাল। অনেক কষ্টে চোখের জল আটকে রাখেন তিনি। পরে জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে ওই সময়ের মনের ভাবনা জানান এককে ২২টি গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়ী তারকা।
“আমি জানতাম না, তবে কল্পনা করেছিলাম যে তারা আসবে…নোভাক এখানে খেলছে, তাই (তার জন্য) এটা সহজ। কিন্তু অ্যান্ডি ও রজারের এখানে আসা আমার জন্য অনেক কিছু, কারণ তারা আমার ক্যারিয়ারের খুব গুরুত্বপূর্ণ অংশের প্রতিনিধিত্ব করে। কিছু ক্ষেত্রে আমরা একে অপরকে আরও ভালো করতে তাড়িত করেছিলাম।”
“আমরা চারজন সেরা প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলাম। কখনও দুজন (প্রতিদ্বন্দ্বী) হলে, একজন কিছুটা অনুপ্রেরণা হারাতে পারে কারণ আরেকজন হারতে শুরু করতে পারে অথবা চোটাক্রান্ত হতে পারে। কিন্তু এখানে সেটা কখনও কল্পনাতেও আসত না, কারণ সবসময় চার জনের একজন টুর্নামেন্ট জিতত।”
নাদাল যেমন ফরাসি ওপেনের রাজা, তেমনি অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে জোকোভিচ। বছরের প্রথম এই গ্র্যান্ড স্ল্যামে সর্বোচ্চ ১০টিসহ, গ্র্যান্ড স্ল্যামের ইতিহাসে মার্গারেট কোর্টের সমান সর্বোচ্চ ২৪টি শিরোপা জিতেছেন সার্ব তারকা। আর ২০টি গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতে ২০২২ সালে দ্যুতিময় ক্যারিয়ারের ইতি টানেন সুইস তারকা ফেদেরার।
এদের মাঝে ব্রিটিশ তারকা মারের অর্জনের ভাণ্ডার অতটা সমৃদ্ধ নয়। ক্যারিয়ারে বারবার চোটের ছোবলে তাকে ভুগতেও হয়েছে অনেক। তবে তিনটি গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়ী ও অলিম্পিকসে দুবার সোনা ও একবার রুপার পদক জয়ী মারে কোর্টে ছিলেন শক্তিশালী প্রতিপক্ষ।
নাদালের কণ্ঠে সেই সময়ে তাদের মাঝের প্রবল লড়াইয়ের কথাই শোনা গেল।
“আমরা আমাদের স্বপ্ন পূরণ করেছি। এবং হয়তো ওই মানের প্রতিদ্বন্দ্বিতার কারণেই টেনিসের ইতিহাসের (গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়ের) সংখ্যাকে আমরা এতটা উঁচুতে তুলে ধরতে পেরেছি। আর এটা পরবর্তী প্রজন্মকে তাদের নিজেদের উন্নতিতে সাহায্য করবে। আমি নিশ্চিত, এমনটাই হবে।”