আন্তর্জাতিক ফুটবল
Published : 30 May 2025, 05:02 PM
কক্ষচ্যূত ব্রাজিল দলকে পথে ফেরাতে এবং সাফল্যের চূড়ায় বসানোর ‘উপায় পেয়ে গেছেন’ কোচ কার্লো আনচেলত্তি। আর সেটা নতুন কিছুও নয়। ক্লাব ফুটবলে যেখানে তিনি সবচেয়ে বেশি সাফল্য পেয়েছেন, সেই রেয়াল মাদ্রিদের খেলার ধরনই সেলেসাওদের ঘুরে দাঁড়ানোর অভিযানে আপন করে নিতে চান বর্ষীয়ান এই কোচ।
সান্তিয়াগো বের্নাবেউয়ে ২০২৪-২৫ মৌসুমটা অবশ্য একেবারেই ভালো কাটেনি আনচেলত্তির। খালি হাতে হতাশাভরা মৌসুম শেষ করেই গত সোমবার ব্রাজিল জাতীয় পুরুষ দলের দায়িত্ব নেন তিনি। মার্কাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তাই তিনি নিজের ভাবনাকে পরিষ্কার করে দিলেন যে, রেয়াল মাদ্রিদ ২০২৩-২৪ মৌসুমে যেভাবে খেলেছে সেভাবেই এই ব্রাজিল দলকে খেলাতে চান তিনি।
“আমার ব্রাজিল দল রেয়াল মাদ্রিদের মতো খেলবে, তবে এই বছরের রেয়াল মাদ্রিদের মতো নয়, গত বছরের রেয়াল মাদ্রিদের মতো। এটাই আমি চাই।”
২০২৩-২৪ মৌসুমে লা লিগা ও চ্যাম্পিয়ন্স লিগসহ মোট পাঁচটি শিরোপা জিতেছিল রেয়াল মাদ্রিদ। সেখানে এবার কিছুই ধরে রাখতে পারেনি ক্লাবটি।
এবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগে কোয়ার্টার-ফাইনালের দুই লেগে আর্সেনালের বিপক্ষে বিধ্বস্ত হয় রেয়াল, এবং কোপা দেল রে ও স্প্যানিশ সুপার কাপে হেরে যায় বার্সেলোনার বিপক্ষে। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের থেকে পিছিয়ে থেকেই লা লিগায় রানার্সআপ হয় দলটি।
গত দুই মৌসুমে রেয়ালের পারফরম্যান্স ও ফলাফলের মাঝে যে বিস্তর ফারাক, সেটা বের্নাবেউ থেকে বিদায়বেলায় মনে করিয়ে দেন আনচেলত্তি।
“ফল প্রত্যাশিত ছিল না। দলের পারফরম্যান্সও ভালো হয়নি। ফলে, এমনটাই হওয়ার ছিল।”
রেয়ালের ভোগান্তি দেখে আনচেলত্তি এখন যে দলের দায়িত্ব নিয়েছেন, তাদের বাজে পথচলা চলছে আরও অনেক দিন ধরে।
পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা সবশেষ বিশ্বকাপ জিতেছে ২০০২ সালে। ২০০৯ সালের পর থেকে দেশের বাইরে অনুষ্ঠিত টুর্নামেন্টগুলোয় সাতবার সেমি-ফাইনালের আগে ছিটকে পড়েছে তারা। তবে এই দলকেই সেরা অবস্থানে ফেরানোর ব্যাপারে আশাবাদী আনচেলত্তি।
“বিশ্বের মধ্যে এটাই সেরা জাতীয় দল। এটা আমার কথা নয়, তাদের জার্সির পাঁচটি তারকাই এটা বলে। অন্য কোনো জাতীয় দলের তা নেই। এখন আমার সামনে চ্যালেঞ্জ ছয় নম্বরটা জয়ের। এবং ব্রাজিলে ষষ্ঠ বিশ্বকাপ ট্রফি নিয়ে আসার চ্যালেঞ্জ আমি সাদরে গ্রহণ করেছি। তবে সেটা করতে হলে পুরো জাতিকে আমাদের পেছনে থাকতে হবে।”
“জাতীয় দলের পেছনে পুরো ব্রাজিলকে থাকতে হবে, খেলোয়াড়দের সমর্থন প্রয়োজন, তাদের বিনয়ী হতে হবে এবং ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। নম্রতা ছাড়া কারো পক্ষে তেমন কিছু করা সম্ভব নয়।”
রেয়াল মাদ্রিদের হয়ে দুই মেয়াদে ১৫টি শিরোপা জিতেছেন আনচেলত্তি। হয়ে গেছেন ক্লাবটির ইতিহাসের সফলতম কোচ। ইউরোপের সফলতম ক্লাবটিতেই নয় কেবল, অন্যান্য ক্লাবেও দারুণ সব সাফল্য পেয়েছেন এই ইতালিয়ান। ইউরোপের শীর্ষ পাঁচ লিগেই শিরোপা জয়ের অনন্য কীর্তি আছে তার। কোচ হিসেবে দুই ক্লাবের হয়ে মোট পাঁচটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতেছেন তিনি।
আরও কত না শিরোপা জিতেছেন ৬৫ বছর বয়সী এই কোচ। কিন্তু, প্রথমবারের মতো কোনো জাতীয় দলের দায়িত্ব নিয়ে তিনি এমন কিছু অনুভব করতে শুরু করেছেন, যা আগে কখনও পাননি।
“বিশ্বকাপ অন্য যেকোনো ক্লাব শিরোপার চেয়ে ভিন্ন। এটার অনুভূতি এমন যে, পুরো একটা জাতি যেন আপনার পেছনে, আর একারণেই এটা সবসময় আমাকে আকর্ষণ করত। আমি এখানে এসেছি আবার ব্রাজিলকে চ্যাম্পিয়ন করানোর জন্য, আমি এই চ্যালেঞ্জ নিয়েছি। আমার বিশ্বাস, আমরা সেটা পারব।”
কঠিন সেই চ্যালেঞ্জে কদিন বাদেই প্রথম মাঠের লড়াইয়ে নামতে যাচ্ছেন আনচেলত্তি। বিশ্বকাপ বাছাইয়ে আগামী ৬ জুন একুয়েডরের বিপক্ষে খেলবে ব্রাজিল। পাঁচ দিন পর দেশের মাটিতে মুখোমুখি হবে প্যারাগুয়ের।
২০২৬ বিশ্বকাপের লাতিন আমেরিকা অঞ্চলের বাছাইয়ে চতুর্থ স্থানে আছে ব্রাজিল। ১৪ ম্যাচে দলটির পয়েন্ট ২১। ৩১ পয়েন্ট নিয়ে চূড়ায় থাকা আর্জেন্টিনা এই অঞ্চল থেকে সবার আগে ২০২৬ বিশ্বকাপের চূড়ান্ত পর্বে খেলা নিশ্চিত করেছে।