স্প্যানিশ ফুটবল
Published : 27 Feb 2025, 11:51 AM
প্রথমার্ধ শেষ হওয়ার পথে ছিল তখন। তবে সময় শেষ হওয়ার আগেই খেলা থামানোর বাঁশি বাজালেন রেফারি। খেলা বন্ধও থাকল কিছুক্ষণ। গ্যালারি থেকে যে ভেসে আসছিল ‘আসেন্সিও, মরে যাও…।’ খেলা বন্ধ হওয়ার পর অবশ্য সেই সুরও থেমে যায়। পরে শুরু হয় খেলা। তবে প্রথমার্ধের পর আর রাউল আসেন্সিওকে মাঠে নামাননি কার্লো আনচেলত্তি। ম্যাচের পর রেয়াল মাদ্রিদ কোচ জানালেন, তরুণ ডিফেন্ডারকে তুলে নেওয়ার একটি কারণ দর্শকদের ওই আচরণ।
ঘটনাটি কোপা দেল রের সেমি-ফাইনালের প্রথম লেগের। রেয়াল সোসিয়েদাদের মাঠে এন্দ্রিকের প্রথমার্ধের গোলে জয় পায় রেয়াল মাদ্রিদ।
এই ম্যাচেই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাটি ঘটে। গ্যালারি থেকে ওই স্লোগান ভেসে আসতে থাকায় রেয়াল মাদ্রিদের এই ম্যাচের অধিনায়ক কথা বলেন রেফারির সঙ্গে। রেফারি খেলা থামিয়ে স্পেনের ঘৃণা-বিরোধী প্রটোকল প্রয়োগ করেন। স্টেডিয়ামের বড় পর্দায় ভেসে ওঠে, “কোনো ধরনের বর্ণবাদী, আতঙ্ক ছড়ানো বা আপত্তিজনক স্লোগান নয়। দলকে সমর্থন করুন, প্রতিপক্ষকে সম্মান করুন।” স্টেডিয়ামের ঘোষকও এই বার্তা উচ্চারণ করতে থাকেন বারবার। সেই ঘোষণা শুনেও অবশ্য দুয়ো দিতে থাকে দর্শকদের একটি অংশ। ভিনিসিউসের দিকেও দুয়ো ছুটে যায়।
এমনিতে সেন্টার ব্যাক হলেও এই ম্যাচে রাইট ব্যাক হিসেবে খেলছিলেন আসেন্সিও। দ্বিতীয়ার্ধে তাকে তুলে নিয়ে লুকাস ভাস্কেসকে নামানো হয়।
ম্যাচের পর আনচেলত্তি ব্যাখ্যা করলেন এই পরিবর্তনের প্রেক্ষাপট।
“ভিনিসিউস রেফারির সঙ্গে কথা বলার পর রেফারি খেলা বন্ধ করে এবং প্রটোকল প্রয়োগ করে। সে (রেফারি) ঠিক কাজটিই করেছে। পরে আমি ওকে (আসেন্সিও) তুলে নেই। দুটি ব্যাপার ছিল এখানে, ওই স্লোগান তো ছিলই, সে হলুদ কার্ডও পেয়েছিল। এজন্যই তাকে তুলে নেই।”
“স্টেডিয়ামে সুর উঠেছে ‘তুমি মরে যাও’…. এটা তো কারও ভালো লাগার কারণ নেই। সেদিক থেকে এটা ওকে (আসেন্সিও) অবশ্যই প্রভাবিত করেছি। সে খুব একটা খুশি ছিল না। আমার মনে হয়েছে, ওকে তুলে নেওয়া ভালো। ওর আবেগে এটা প্রভাব ফেলতে পারে।”
সোসিয়েদাদের অধিনায়ক মিকেল ওইয়ারসাবাল ম্যাচ শেষে এই ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন সমর্থকদের প্রতি।
“এই ধরনের অপমানের নিন্দা জানাই আমরা। আমরা এসব পছন্দ করি না। আমার মনে হয়, যা হয়েছে সেটিকে তিরস্কার করার অন্য অনেক পথ বা উপায় আছে, কিন্তু এভাবে করা উচিত নয়।”
অধিনায়কের কথার প্রতিধ্বনি ছিল সোসিয়েদাদের কোচ ইমানল আলগুয়াসিলের কণ্ঠেও।
“আমি নিজে এটা শুনতে পাইনি। তবে যদি হয়ে থাকে, অবশ্যই নিন্দা জানাই। আমার স্টেডিয়ামে বা কোনো স্টেডিয়ামেই এমন কিছু হোক, আমরা তা চাই না। আমরা অবশ্যই নিন্দা জানাই, এসব হতে পারে না।”
একের পর এক ডিফেন্ডারের চোটে রেয়াল মাদ্রিদের চরম বিপর্যয়ের মধ্যে গত ডিসেম্বরে মূল দলের হয়ে অভিষেক হয় একাডেমি ও ‘বি’ দল হয়ে আসা এই ডিফেন্ডারের। শুরু থেকেই অসাধারণ পারফরম্যান্সে চমকে দিয়ে দলে নিজের জায়গা করে নেন ২২ বছর বয়সী ফুটবলার। সম্প্রতি চ্যাম্পিয়ন্স লিগের প্লে-অফে ম্যানচেস্টার সিটির বিপক্ষে দুই লেগেই শুরুর একাদশে থেকে অসাধারণ পারফরম্যান্স মেলে ধরেন তিনি।
মাঠের বাইরে পুরোনো একটি বিতর্কে অবশ্য সম্প্রতি খবরের শিরোণামে উঠে এসেছেন তিনি। ২০২৩ সালে দুই নারীর সঙ্গে রেয়ালের একাডেমির তিন ফুটবলারের যৌনতার একটি ভিডিও আসেন্সিও হোয়াটসঅ্যাপে অন্যদের মাঝে ছড়িয়েছিলেন বলে অভিযোগ আছে। ওই বছরের সেপ্টেম্বরে আসেন্সিও এবং ওই তিন ফুটবলারকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। তাদের ফোনও জব্দ করা হয়েছিল। পরে সেই মামলায় আসেন্সিওর বিরুদ্ধে তদন্ত বাতিলের আবেদন করেছিল রেয়াল মাদ্রিদ। কদিন আগে আদালত সেই আবেদন বাতিল করে জানায়, তদন্ত চলতে থাকবে।