লা লিগা
Published : 24 May 2025, 10:32 PM
নির্ধারিত সময় শেষের খানিক আগে সান্তিয়াগো বের্নাবেউয়ে সবকিছু যেন একরকম থমকে গেল। দুই দলের কয়েকজন খেলোয়াড় দু’পাশে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে গেলেন, মাঝ দিয়ে ধীর পায়ে মাঠ থেকে বেরিয়ে গেলেন লুকা মদ্রিচ। শেষবারের মতো প্রিয় এই আঙিনা ছেড়ে গেলেন ক্রোয়াট গ্রেট। সতীর্থদের কয়েকজন তাকে জড়িয়ে ধরলেন, গত বছর বিদায় নেওয়া আরেক গ্রেট টনি ক্রুসও হাসিমুখে এগিয়ে এলেন দীর্ঘদিনের সতীর্থের বিদায়ের সঙ্গী হতে। মদ্রিচকে কয়েকবার দুই চোখ ডলতে দেখা গেল। হয়তো চোখের অশ্রু মোছার চেষ্টাই করছিলেন রেয়াল মাদ্রিদের অনেক সাফল্যের নায়ক।
এদিন কেবল মদ্রিচই শেষবারের মতো বের্নাবেউয়ের মাঠ ছাড়লেন না। এতদিনের প্রিয় ঠিকানাকে বিদায় বললেন লুকাস ভাসকেসও। এছাড়া শেষ হলো দলটিতে কোচ কার্লো আনচেলত্তির দ্বিতীয় অধ্যায়।
তাদের শেষটা অবশ্য সুখকর হয়েছে। লা লিগার শেষ রাউনেড্ শনিবার রেয়াল সোসিয়েদাদকে ২-০ গোলে হারিয়েছে রেয়াল মাদ্রিদ। দুটি গোলই করেছেন কিলিয়ান এমবাপে।
৩৮ ম্যাচে ২৬ জয় ও ৬ ড্রয়ে ৮৪ পয়েন্ট নিয়ে আসর শেষ করল রেয়াল মাদ্রিদ। আগেই শিরোপা নিশ্চিত করা বার্সেলোনার ৩৭ ম্যাচে ৮৫ পয়েন্ট।
শিরোপা লড়াই আগেই শেষ হয়ে যাওয়ায় এবং সোসিয়েদাদও কোনো দৌড়ে না থাকায়, ম্যাচটি দুই পক্ষের জন্য কেবল ছিল আনুষ্ঠানিকতার। প্রথম ১০ মিনিটে দুই দলই দারুণ দুটি সুযোগ পায়। কেউই অবশ্য পারেনি দলকে এগিয়ে নিতে।
সপ্তম মিনিটে আর্দা গিলেরের ডি-বক্সে বাড়ানো থ্রু বল প্রথম ছোঁয়ায় শটে ঠিকানায় পাঠানোর চেষ্টা করেন এমবাপে, এগিয়ে এসে রুখে দেন গোলরক্ষক। দু্ই মিনিট পর অন্য পাশে গোলরক্ষককে একা পেলেও দুর্বল শটে তাকে কঠিন পরীক্ষায় ফেলতে পারেননি সের্হিও গোমেস।
ত্রয়োদশ মিনিটে আবার গোলরক্ষককে একা পান এমবাপে। এবার ব্রাহিম দিয়াসের থ্রু বল ছয় গজ বক্সের বাইরে পেলেও, গোলরক্ষকের চ্যালেঞ্জের মুখে তাড়াহুড়ো করে উড়িয়ে মারেন ফরাসি তারকা। আট মিনিট পর রাউল আসেন্সিওর ডি-বক্সের বাইরে থেকে নেওয়া শট ঝাঁপিয়ে আটকান সোসিয়েদাদ গোলরক্ষক উনাই মারেরো।
৩৬তম মিনিটে সোসিয়েদাদের বক্সে তাদের মিডফিল্ডার পাবলো মারিনের হাতে বল লাগলে, ভিএআরে মনিটরে দেখে পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি। এমবাপের দুর্বল স্পট কিক অবশ্য রুখে দিয়েছিলেন গোলরক্ষক, যদিও বল হাতে রাখতে পারেননি তিনি। ফিরতি বল দ্বিতীয় প্রচেষ্টায় লক্ষ্যে পাঠিয়ে গোলদাতার তালিকায় শীর্ষে অবস্থান সংহত করেন এমবাপে।
অ্যাঙ্কেলের চোট কাটিয়ে দ্বিতীয়ার্ধের দশম মিনিটে ব্রাহিম দিয়াসের বদলি নামেন ভিনিসিউস। সাত মিনিটের মাথায় গোলও পেতে পারতেন তিনি, তবে ডি-বক্সের বাইরে থেকে শটে গোলরক্ষককে পরাস্ত করতে পারেননি ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড।
৭৭তম মিনিটে লুকাস ভাসকেসকে তুলে গন্সালো গার্সিয়াকে নামান রেয়াল কোচ এবং মুহূর্তটা আবেগময় হয়ে উঠে। মাঠ থেকে ভাসকেস বেরিয়ে যাওয়ার সময় পুরো গ্যালারি দাঁড়িয়ে, করতালিতে তাকে অভিবাদন জানান, তিনিও দুই হাত তুলে যেন বিদায় জানান।
কোচ কার্লো আনচেলত্তি ও গ্রেট লুকা মদ্রিচের বিদায়ের শোরগোলের মাঝে ভাসকেসের চলে যাওয়ার গুঞ্জন অনেকটা চাপা পড়ে যায়। তার নামের পাশেও সেভাবে কখনও তারকা শব্দটা যোগ হয়নি; কিন্তু দলের প্রয়োজনে যেকোনো পজিশনে খেলতে প্রস্তুত এই স্প্যানিয়ার্ড রেয়াল মাদ্রিদে সবসময় কোচের পরিকল্পনায় ছিলেন গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র।
এর ছয় মিনিট পরই দ্বিতীয় গোলটি করেন এমবাপে। ভিনিসিউসের দুর্দান্ত এক থ্রু পাস ছয় গজ বক্সের বাইরে পেয়ে, দুরূহ কোণ থেকে কোনাকুনি শটে দলকে জয়ের পথে এগিয়ে নেন তিনি। পিএসজি ছেড়ে গত জুলাইয়ে বের্নাবেউয়ে পাড়ি জমানো এমবাপে লা লিগায় অভিষেক মৌসুমেই ৩১টি গোল করলেন। তার চেয়ে ছয়টি কম নিয়ে তালিকায় দুইয়ে আছেন বার্সেলোনার রবের্ত লেভানদোভস্কি।
এরপর সেই বিশেষ ক্ষণ। ৮৭তম মিনিটে মদ্রিচকে তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন কোচ এবং তাকে ঘিরে ক্রমেই পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে। সতীর্থ ও প্রতিপক্ষের গার্ড অব অনার পেয়ে মাঠ ছাড়েন তিনি।
সাইডলাইনে মদ্রিচের সতীর্থ ও কোচিং স্টাফদের মাঝেই দেখা যায় জার্মান তারকা ক্রুস এবং মদ্রিচের পরিবারকে। কয়েক মিনিট ধরে চলে তার বিদায় পর্ব এবং পুরোটা সময় ধরে শোনা যায় দর্শকদের করতালির শব্দ। টিভি পর্দায় দেখা যায়, এক দর্শকের হাতে ধরা একটি প্ল্যাকার্ড, যেখানে লেখা ‘গ্রাসিয়াস মদ্রিচ।’
ম্যাচের বাকি সময়ে আর তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটেনি। শেষের বাঁশি বাজতেই বরং আরেক দফা চলে গ্রেটদের বিদায় জানানোর পর্ব। রেয়ালের ডাগআউটে সফল আরেক অধ্যায় শেষ করে আগামী দিন থেকে ব্রাজিলের দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন ইতালিয়ান কোচ আনচেলত্তি।
রেয়াল মাদ্রিদের জার্সিতে মদ্রিচের অবশ্য এখানেই শেষ নয়। জুন-জুলাইয়ের ক্লাব বিশ্বকাপ খেলেই প্রিয় ক্লাবকে বিদায় বলবেন ক্লাবটির হয়ে রেকর্ড ২৮টি ট্রফি জয়ী মদ্রিচ।