Published : 14 May 2025, 11:29 AM
অনুমোদনের প্রক্রিয়া শেষ না হওয়ায় এখনও বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদন চূড়ান্ত করতে পারেনি ১৮ ব্যাংক, যা সংখ্যায় পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত মোট ব্যাংকের অর্ধেক।
এতে বিনিয়োগকারীদের জন্য ব্যাংকগুলোর পর্ষদের লভ্যাংশ ঘোষণার সুপারিশ আটকে রয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেন, এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রয়োজনীয় সম্মতি দেওয়া হয়েছে। এখন বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদনের পালা, যা মিলবে গভর্নর আহসান এইচ মনসুর আরব আমিরাত সফর থেকে ফেরার পর।
বিষয়টিকে ‘অস্বস্তিকর’ ও বিনিয়োগবান্ধব নয় মন্তব্য করে পুঁজিবাজারের ব্রোকারেজ হাউসগুলোর সংগঠন ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্ত দেওয়ায় বিলম্বের কারণে এমনটি হয়েছে।
‘‘এমনিতে বাজার চাপের মুখে আছে। এই সময়ে ব্যাংকের ঘোষণা না আসা সেই চাপকে আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে। অস্বস্তিকর অবস্থা তৈরি করছে বাজারে। মে মাসের মধ্যে সব ব্যাংকের ডিভিডেন্ড ঘোষণা করা হয়। বিনিয়োগকারীরাও এই সময়ে ব্যাংকের দিকে তাকিয়ে থাকেন। ব্যাংক থেকে সবসময় ভালো রিটার্ন আশা করেন তারা। কারণ হচ্ছে নির্ভরযোগ্য শেয়ারগুলোর মধ্যে ব্যাংক খাত অন্যতম।’’
তিনি বলেন, ডিএসইর মাধ্যমে তারা এটির দ্রুত সমাধানে বিএসইসির দৃষ্টি আকর্ষণ করবেন।
আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারেক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘‘এর আগেও এরকম হয়েছিল একবার। সেই রেফারেন্স বাংলাদেশ ব্যাংকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। তারা সময় চাওয়ায় মে মাস পর্যন্ত লভ্যাংশ দেওয়ার সময়টি বাড়িয়ে দিয়েছে মন্ত্রণালয়।’’
এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘‘মন্ত্রণালয় অনুমোদন দিয়েছে। এখন গভর্নর ফিরলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।’’
মন্ত্রণালয়ের এ সংক্রান্ত চিঠির পর গত ৮ মে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সার্কুলারে বলেছে, ‘‘ব্যাংক কোম্পানী আইন, ১৯৯১ (২০২৩ পর্যন্ত সংশোধিত) এর ১২১ ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে বাংলাদেশ ব্যাংক, সরকারের সহিত পরামর্শক্রমে উক্ত আইন এর ৪০ ধারার বিধান এর বাধ্যবাধকতা হতে অব্যাহতি প্রদানপূর্বক তফসিলি ব্যাংকসমূহের বার্ষিক নিরীক্ষা প্রতিবেদন বাংলাদেশ ব্যাংকে দাখিলের সময়সীমা ৩১ মে, ২০২৫ তারিখ পর্যন্ত নির্ধারণ করিল।’’
গর্ভনর ১২ মে পর্যন্ত অফিস করে দুই দিনের জন্য আরব আমিরাতে গিয়েছেন। সেখানে ১৩ ও ১৪ মে আন্তর্জাতিক সুকুক ফোরামের একটি সভায় অংশ নেওয়ার কথা তার।
সেখানে বাংলাদেশের বেসরকারি কয়েকটি ব্যাংকের ক্রেডিট সীমা বাড়ানোর বিষয়ে কয়েকটি বিদেশি ব্যাংকের সঙ্গেও বৈঠক করার কথা তার। এজন্য কয়েকটি বেসরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এখন আরব আমিরাতে রয়েছেন বলে ব্যাংকাররা বলছেন।
এমন অবস্থায় পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ৩৬ ব্যাংকের মধ্যে ১৮টি ২০২৪ সালের আর্থিক প্রতিবেদন চূড়ান্ত করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদনের অপেক্ষায়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, বিষয়টি ‘স্পর্শকাতর’ হওয়ায় তারা ব্যাংকগুলোর আর্থিক প্রতিবেদন অনুমোদন না করে গভর্নরের অপেক্ষায় রয়েছেন।
কবে নাগাদ বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন মিলবে তা নিয়েও রয়েছে ধোঁয়াশা।
নিয়ম অনুযায়ী গত ৩০ এপ্রিল ছিল ২০২৪ হিসাব বছরের বার্ষিক প্রতিবেদন চূড়ান্ত ও সেটির উপর ভিত্তি করে লভ্যাংশ ঘোষণার শেষ দিন। এজন্য ব্যাংকগুলো আগেভাগে সেগুলো অনুমোদনের জন্য জমা দেয় বাংলাদেশ ব্যাংকে।
তবে শেষ দিনেও এসব ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন ব অনাপত্তি (এনওসি – নো অবজেকশন সার্টিফিকেট) না পাওয়ায় সেগুলোর পর্ষদের সভা সিদ্ধান্ত ছাড়াই শেষ হয়।
এতে বিনিয়োগকারীদের জন্য যেমন লভ্যাংশ ঘোষণা করা যাচ্ছে না, তেমনি চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিক (জানুয়ারি-মার্চ) এর অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনও তৈরি সম্ভব হচ্ছে না।
ব্যাংকগুলো হচ্ছে- রাষ্ট্রায়ত্ত রূপালী, বেসরকারি ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, স্টান্ডার্ড, ওয়ান, প্রিমিয়ার, আইএফআইসি, আল আরাফাহ, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী, এক্সিম, সাউথ ইস্ট, সোশ্যাল ইসলামী, এনআরবিসি, সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার, মার্কেন্টাইল, এনআরবি, এবি, ইউসিবি ও গ্লোবাল ইসলামী।
ধাপে ধাপে প্রভিশন সংরক্ষণের সুযোগ চায় ব্যাংক
ব্যাংকগুলোর কর্মকর্তা ও বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলেন, বিভিন্ন কারণে এসব ব্যাংকের নিরীক্ষিত বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদন অনুমোদন পায়নি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের।
এরমধ্যে খেলাপি ঋণের প্রকৃত চিত্র তুলে ধরে এর বিপরীতে প্রয়োজনীয় প্রভিশন (নিরাপত্তা সঞ্চিতি) সংরক্ষণ করতে না পারা, প্রকৃত খেলাপির কিছু চিত্র না দেখানোর কারণে শেষ মুহূর্তে এই ১৮টির প্রতিবেদন এনওসি পায়নি।
অন্যদিকে ব্যাংকগুলো প্রভিশনের পুরোটা একসঙ্গে সংরক্ষণ না করে ধাপে ধাপে বা পর্যায়ক্রমে রাখার পক্ষে প্রস্তাব দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে।
তাদের যুক্তি হচ্ছে, গত ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আগে ও পরে বেশ লম্বা সময় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাধাগ্রস্ত ছিল। এ কারণে অনেক গ্রাহক কিস্তির অর্থ জমা দিতে পারেননি।
আবার সব খেলাপির চিত্র তুলে আনাটাও প্রথমবার। এ কারণে ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ অন্যান্য সময়ের চেয়ে হঠাৎ করে বেড়েছে। এর বিপরীতে আমানত বাড়েনি আনুপাতিকহারে। এ পরিস্থিতি সবার নিয়ন্ত্রণের মধ্যে ছিল না।
ব্যাংকগুলোর চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের এমন প্রস্তাব নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক ও নির্বাহী পরিচালকদের মধ্যে দ্বিমত তৈরি হলে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। সবশেষ বিষয়টি ছেড়ে দেওয়া হয় গভর্নরের কাছে।
এদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বেশি সময় নেওয়ায় ১৮ ব্যাংকের বিনিয়োগকারীরা গত ছয় মাসের আয়-ব্যয়ের চিত্র জানতে পারছেন না।
এসব ব্যাংকের বাইরে ১৭টি লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। আর বিশেষ নিরীক্ষা শেষ না হওয়ায় ইউনিয়ন ব্যাংক এখনও বার্ষিক প্রতিবেদন প্রস্তুত করতে পারেনি।
ব্যাংকটির চেয়ারম্যান ফরিদউদ্দিন আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, অডিট শেষ হলে তারা প্রতিবেদন তৈরি করবেন।