Published : 07 Jan 2025, 02:18 PM
পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীর অংশগ্রহণ বাড়াতে ভালো কোম্পানি তালিকাভুক্তির উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ।
তিনি বলেছেন, “শুধু রাষ্ট্রীয় কোম্পানি না, ভালো ভালো যে প্রাইভেট কোম্পানি আছে- করপোরেশনগুলো আছে না- তারা ওই ফ্যামিলি বেইজড, ইসে (তালিকাভুক্ত) করতে চায় না।
“আমরা উৎসাহ দিচ্ছি তারা যাতে আসে। তাতে আপনার বাজারের ভিত্তি মজবুত হয়। ভালো শেয়ার আসলে লোকজনের পার্টিসিপেশন বাড়ে। রাষ্ট্রীয় কোম্পানিকেও আনার চেষ্টা করব।”
মঙ্গলবার রাজধানীর নিকুঞ্জে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে পুঁজিবাজারের অংশীজনদের সঙ্গে সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
খেলাপি ঋণ কমাতে এবং পুঁজিবাজারে তারল্য প্রবাহ বাড়াতে ব্যাংকের দীর্ঘ মেয়াদী অর্থায়ন কমানো দরকার বলে মনে করেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন।
তিনি বলেন, “পৃথিবীর সব দেশে লং টার্ম ইনভেস্টমেন্ট পুঁজিবাজার থেকে হয়, ব্যাংক থেকে না। ব্যবসায়ীরা শুধু ব্যাংক থেকেই পুরো টাকা নেবেন- তা হয় না। নিজেদের পুঁজি অন্তত ২০ থেকে ৩০ শতাংশ থাকা উচিত। পুরোটা ঋণ নির্ভর হলে কেমনে হয়?”
দীর্ঘমেয়াদী পতনের বৃত্তে ঘুরপাক করতে থাকা পুঁজিবাজারের উন্নয়নে গত অক্টোবরে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন। তিনি তাৎক্ষণিক, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নেওয়ার কথা জানালেও তভন পরিকল্পনা খোলাসা করেননি।
ওই বৈঠকের পর পুঁজিবাজারে মূলধনী আয়ের উপর করহার কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত আসে। ধীরে ধীরে ঘুড়ে দাঁড়াতে শুরু করে পুঁজিবাজার। বেশ কিছুদিন সূচক ও লেনদেন বাড়তে থাকে ডিএসইতে।
কিন্তু ২৭টি কোম্পানিকে জেড শ্রেণিতে পাঠানো এবং আন্দোলনের মুখে আগের অবস্থায় ফেরানোর পর থেকে লেনদেনে খরা দেখা দেয়। এ পরিস্থিতিতে দিনে গড়ে ৩০০-৩৫০ কোটি টাকার লেনদেন দেখা যাচ্ছে।
বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে নানা উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে মন্তব্য করে সালেহউদ্দিন বলেন, ‘‘এখন শুধু সংস্কার হচ্ছে। আমরা নতুন কোনো নীতিমালা করছি না।
“কাউকে ফেবার করা হচ্ছে না, অতীতে যেভাবে করা হয়েছে। কোনো শেয়ারের দর বাড়িয়ে দিতে পলিসি করা হয়েছিল- কার শেয়ারটা কে বাড়াবে তা নিয়ে, আপনারা সবাই জানেন। এখন তা হবে না।’’
তিনি বলেন, “ইতোমধ্যে অনেক মেজারস (পদক্ষেপ) নেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ও আইসিবির মাধ্যমে তারল্যসহ নানা ধরনের সাপোর্ট দেওয়া হচ্ছে।
“ব্রোকারেজ হাউজ, দুই স্টক এক্সচেঞ্জ ও বাজার সংশ্লিষ্টদের নিয়ে বসলাম। তাদের সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে কথা বলেছি। আমরা কনফিডেন্ট যে- বাজার ভালো হবে।’’
নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে এখনো অনেক কর্মকর্তা আছেন, যাদের বিরুদ্ধে কারসাজির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে। তাদের রেখে আস্থা ফেরানো কীভাবে সম্ভব?
এমন প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘‘দু-এক জনের জন্য আমাদের পলিসি বা অ্যাকশন নিতে সমস্যা হবে না। তারা যদি বাধা দেয়, তাহলে ডেফিনেটলি ব্যবস্থা নেব।’’
সভায় অংশ নেওয়া রাষ্ট্রায়ত্ত ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ-আইসিবির চেয়ারম্যান আবু আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘‘আমরা ফিসক্যাল ইনসেনটিভ অর্থাৎ বাজেটে শুল্কসহ বিভিন্ন ছাড় দেওয়ার কথা বলেছি। তাদের (বিদেশি প্রতিষ্ঠান) সুবিধা না দিলে তো আসবে না।
“তিনি (উপদেষ্টা) ফিল করেছেন, ইনসেনটিভ দিতে হবে। বলেছেন, ‘দেওয়া লাগবে’।’’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক এই অধ্যাপক বলেন, ‘‘আমরা প্রত্যাশা করছি, আগামী বাজেটে এরকম কিছু থাকবে।
“বর্তমান উপদেষ্টা তো এর আগে বৈঠক করে মূলধনী আয়ের উপর করছাড় দিয়েছেন। এরকম কিছু ইনসেনটিভ লাগবে দীর্ঘ মেয়াদে বাজারের উন্নয়নে।’’
পুঁজিবাজারের সংকট কাটাতে ডিএসই’র পরিচালনা পর্ষদের উদ্যোগে আয়োজিত সভায় অংশ নেন বিএসইসি চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ, ডিএসই চেয়ারম্যান মোমিনুল ইসলাম, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মেজবাহ উদ্দিন, ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) সভাপতি সাইফুল ইসলাম।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই), বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমবিএ), সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল), সেন্ট্রাল কাউন্টারপার্টি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিসিবিএল) এবং ফাইনান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিলের (এফআরসি) প্রতিনিধিও সভায় অংশ নেন।