Published : 25 Aug 2024, 05:50 PM
সম্প্রতি শিকারী ডাইনোসরদের এক বিস্ময়কর নতুন প্রজাতির সন্ধান পেয়েছেন জীবাশ্মবিদরা, যার স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য হিসেবে ‘হাড়ওয়ালা ভ্রু’ রয়েছে।
‘আল্পকারাকুশ কিরগিজিকাস’ নামের এই ডাইনোসরটি কিরগিজস্তানে পাওয়া প্রথম বড় আকারের জুরাসিক যুগের শিকারী প্রাণী বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজ। পাশাপাশি মধ্য এশিয়ার ডাইনোসরদের ধাঁধার একটি হারানো সূত্র মেলানোর বেলাতেও সহায়তা করেছে এটি।
‘থেরোপড’ ডাইনোসরদের দলের মধ্যে ‘টিরান্নোসরাস’ ও ‘অ্যালোসরাস’-এর মতো সুপরিচিত শিকারী ডাইনোসর রয়েছে। এসব ডাইনোসরের উপস্থিতি সাধারণত মেসোজোয়িক যুগিই ছিল, যেটি ডাইনোসরের যুগ হিসাবে পরিচিত।
আধুনিক যুগে সিংহ যেমন আফ্রিকা ও বাঘ এশিয়ায় বাস করে তেমনি জুরাসিক যুগে বিভিন্ন ধরনের ‘থেরোপড’ প্রজাতির ডাইনোসরও নির্দিষ্ট কিছু অঞ্চলে বাস করত।
যেমন– উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপের কিছু অংশে পাওয়া গিয়েছে ‘অ্যালোসরাস’ প্রজাতির ডাইনোসর। এ সময় একই আকারের ‘মেট্রিয়াক্যান্থোসরাস’ নামের আরেকটি শিকারী প্রজাতির ডাইনোসর দেখা গেছে চীনে।
এখনও পর্যন্ত কিরগিজস্তানের মতো জায়গা’সহ মধ্য ইউরোপ ও পূর্ব এশিয়ার মধ্যবর্তী বিস্তীর্ণ অঞ্চলটি জুরাসিক যুগের বড় আকারের শিকারী প্রজাতির ডাইনোসরদের ক্ষেত্রে অনাবিষ্কৃতই ছিল।
২০০৬ সালে পশ্চিম কিরগিজস্তানের তাশকুমারি শহরের কাছে থাকা এক মরুভূমির পাহাড়ে প্রথম ‘আল্পকারাকুশ কিরগিজিকাস’ ডাইনোসরের সন্ধান পান কিরগিজ জীবাশ্মবিদ আইজেক বাকিরভ।
এ জীবাশ্মটির সন্ধান মিলেছে ‘বালাবানসাই’ গঠনের পাথরে, যেটি মধ্য জুরাসিক যুগ থেকে প্রায় সাড়ে ১৬ কোটি বছর আগের।
২০০৬ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে বেশ কয়েকটি খনন প্রক্রিয়ায় এই ডাইনোসরের বিভিন্ন অংশের সন্ধান পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। যার মধ্যে রয়েছে মাথার খুলির হাড়, পিঠ ও শ্রোণী কশেরুকা, কাঁধ ও সামনের বিভিন্ন অঙ্গের কিছু অংশ এবং ডাইনোসরের দেহের প্রায় পুরো শ্রোণী ও পিছনের অঙ্গ।
এই ডাইনোসরটি ৮ থেকে ৯ মিটার লম্বা বলে অনুমান করা হচ্ছে, যা এটিকে শক্তিশালী শিকারী প্রাণী হিসেবে গড়ে তুলেছে।
অন্যান্য প্রাণী থেকে ‘আল্পকারাকুশ কিরগিজিকাস’কে আলাদা করেছে এর অত্যন্ত প্রসারিত ‘ভ্রু’। ডাইনোসর প্রজাতিটির ‘পোস্টঅরবিটাল’ হাড়ের উপর পাওয়া একটি বৈশিষ্ট্য এটি, যা এর চোখের ঠিক পিছনে অবস্থিত একটি খুলির হাড়। এ থেকে বোঝা যায়, ডাইনোসরটির চোখের উপরে শিংয়ের মতো গঠন ছিল।
এ ছাড়াও এই ডাইনোসরের মেরুদণ্ড ও উরুর হাড়ের বিশেষ এক বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা এটিকে অন্যান্য ‘থেরোপড’ প্রজাতি থেকে আলাদা করেছে।
অন্যান্য পরিচিত থেরোপডে’র প্রজাতির সঙ্গে তুলনা করার পর আল্পকারাকুশ’কে ‘মেট্রিয়াকান্থোসরিড’ ডাইনোসর পরিবারের অন্তর্গত হিসেবে উল্লেখ করেছেন বিজ্ঞানীরা, যার পূর্ব এশিয়ার বড় শিকারী প্রজাতির বিভিন্ন ডাইনোসরের সঙ্গে নিবিড়ভাবে মিল রয়েছে।
এই অনুসন্ধান থেকে ইঙ্গিত মেলে, ‘মেট্রিয়াকান্থোসরিড’ ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ‘থেরোপড’ প্রজাতি ডাইনোসর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় উদ্ভূত হতে পারে এবং এরা মধ্য এশিয়া ও ইউরোপের মাধ্যমে অন্যান্য মহাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে।
“জুরাসিক যুগের থেরোপড প্রজাতির ডাইনোসর সম্পর্কে আমাদের বোঝার ক্ষেত্রে একটি বড় শূন্যস্থান পূরণ করেছে এই অনুসন্ধান। পাশাপাশি এইসব প্রাণী কীভাবে বিবর্তিত হয়েছে ও পুরো বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে সে সম্পর্কেও নতুন ধারণা দিয়েছে,” বলেছেন গবেষণার নেতৃত্বে থাকা মিউনিখ শহরের ‘বাভারিয়ান কালেকশন অব প্যালিওন্টোলজি অ্যান্ড জিওলজি’র অধ্যাপক ওলিভার রাউহুট।
মজার বিষয় হল এই জীবাশ্ম সাইটটিতে ‘আল্পকারাকুশ কিরগিজিকাস’-এর একটি দ্বিতীয় ও ছোট নমুনারও সন্ধান মিলেছিল। বড় আকারের নমুনাটি ছিল প্রায় ১৭ বছর বয়সের একটি প্রাপ্তবয়স্ক ডাইনোসর ও ছোটটি ছিল কিশোর ডাইনোসর। যা থেকে বিজ্ঞানীদের অনুমান, সম্ভবত সাড়ে ১৬ কোটি বছর আগে একসঙ্গে বাস করত মা-বাবা ও এদের বাচ্চা ডাইনোসররা।
অগাস্টে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘জুলজিক্যাল জার্নাল অব দ্য লিনিয়ান সোসাইটি’তে প্রকাশিত এক গবেষণাপত্রে এই অনুসন্ধানের কথা জানানো হয়েছে।