Published : 11 May 2025, 03:36 PM
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই থেকে রক্ষা পেতে কপিরাইট আইন আপডেট করার জন্য যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন এলটন জন, ডুয়া লিপা, ইয়ান ম্যাককেলেন ও ফ্লোরেন্স ওয়েলচের মতো তারকারা।
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারকে লেখা চার শতাধিক ব্রিটিশ সংগীতশিল্পী, লেখক ও শিল্পীর স্বাক্ষর করা এক চিঠিতে বলা হয়েছে, যুক্তরাজ্য সরকার এই সুরক্ষা না দেওয়ার মানে হবে তাদের কাজ বিভিন্ন প্রযুক্তি কোম্পানির কাছে ‘বিলি’ করে দেওয়া।
তারা লিখেছেন, “মৌলিক শিল্পের পাওয়ার হাউস হিসেবে যুক্তরাজ্যের অবস্থানও ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।”
তারা চান প্রধানমন্ত্রী যেন ডেটা ব্যবহার ও প্রবেশাধিকার বিলের সংশোধনীকে সমর্থন করেন, যাতে এআই মডেল প্রশিক্ষণের জন্য কপিরাইটওয়ালা উপাদান ব্যবহার করলে তা স্পষ্টভাবে জানানো যেন বাধ্যতামূলক হয় বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিবিসি।
সরকারের একজন মুখপাত্র বলেছেন, “আমরা চাই আমাদের মৌলিক শিল্প ও বিভিন্ন এআই কোম্পানি সমৃদ্ধ হোক। সে কারণেই আমরা এমন পদক্ষেপের একটি প্যাকেজ বিবেচনা করছি, যা উভয় সেক্টরের জন্যই কার্যকর হবে বলে আশা করছি আমরা।”
“আমরা স্পষ্ট করে বলছি, শিল্পীদের জন্য এসব পরিবর্তন কার্যকর হবে। এ বিষয়ে পুরোপুরি সন্তুষ্ট না হওয়া পর্যন্ত কোনো পরিবর্তন বিবেচনা করা হবে না।”
চিঠিতে স্বাক্ষর করা অন্যান্য ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন লেখক কাজুও ইশিগুরো, নাট্যকার ডেভিড হেয়ার, গায়িকা কেট বুশ ও গায়ক রবি উইলিয়ামসের পাশাপাশি ব্যান্ড কোল্ডপ্লে, নাট্যকার টম স্টপার্ড ও চিত্রনাট্যকার-পপরিচালক রিচার্ড কার্টিস।
এর আগে, স্যার পল ম্যাকার্টনি জানুয়ারিতে বলেছিলেন, এআইয়ের মাধ্যমে শিল্পীদের কাজ চুরি হয়ে যাওয়া নিয়ে তিনি উদ্বিগ্ন। এই চিঠিতে তিনিও স্বাক্ষর করেছেন।
চিঠিতে লেখা রয়েছে, “আমরাই সম্পদ তৈরি করি, আমরাই জাতীয় বিভিন্ন গল্পকে তুলে আনি ও প্রচার করি, আমরাই ভবিষ্যতের উদ্ভাবক এবং আমাদের যতটা শক্তি ও কম্পিউটার দক্ষতার প্রয়োজন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তারও ঠিক ততটাই প্রয়োজন।”
তারা বলেছেন, যুক্তরাজ্যে সরকার যদি হাউস অব লর্ডসের সদস্য ব্যারোনেস বিবান কিড্রনের প্রস্তাবিত সংশোধনীর পক্ষে সমর্থন দেয়, যেটি সোমবার হাউস অব লর্ডসের গুরুত্বপূর্ণ এক ভোটের জন্য উপস্থাপন করা হবে, তাহলে এআই নিয়ে তাদের উদ্বেগ দূর হতে পারে।
চিঠিতে বলা হয়েছে, ব্যারোনেস কিড্রনের সংশোধনী “এআই ডেভেলপার ও নির্মাতাদের জন্য একটি লাইসেন্সিং ব্যবস্থা তৈরির সুযোগ করে দেবে, যা ভবিষ্যতে মানুষের তৈরি কনটেন্ট ব্যবহারের অনুমতি দেবে।”
তবে, শিল্পীদের সবাই এই পদ্ধতির সঙ্গে একমত নন।
ব্রিটিশ থিঙ্ক ট্যাংক ‘প্রগ্রেস’-এর সহপ্রতিষ্ঠাতা জুলিয়া উইলেমিন্স বলেছেন, এমন প্রস্তাব যুক্তরাজ্য ও তার উন্নতির জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
তিনি বলেছেন, “বিদেশী বিভিন্ন কোম্পানিকে ব্রিটিশ সৃজনশীল শিল্পগুলোর কনটেন্টের ব্যবহার থামাতে কিছুই করবে না এসব পদক্ষেপ।
“সীমাবদ্ধ এই কপিরাইট ব্যবস্থা কেবল এআই উন্নয়নকে বিদেশে নিয়ে যাবে, ঘরোয়া উদ্ভাবনকে ঠেকাবে ও যুক্তরাজ্য অর্থনীতির সরাসরি ক্ষতি করবে।”
চিঠিটি এমন সময়ে এল যখন শিল্পীরা তাদের কাজ ও কপিরাইটের মাধ্যমে সুরক্ষিত বিভিন্ন উপাদান ব্যবহার করে জেনারেটিভ এআই সিস্টেম তৈরির জন্য ব্যবহৃত ডেটার মধ্যে অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে বাড়তি উদ্বেগ প্রকাশ করছেন বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিবিসি।
এসব টুল সহজ টেক্সট প্রম্পটের প্রতিক্রিয়ায় নতুন কনটেন্ট তৈরি করতে পারে এবং এগুলো ক্রমাগত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ও গ্রাহকদের কাছেও সহজে পাওয়া যাচ্ছে।
তবে এদের সক্ষমতার সঙ্গে সঙ্গে ডেটা ব্যবহার এবং শক্তির চাহিদা নিয়ে উদ্বেগ ও সমালোচনার পাল্লাও ভারী হয়েছে।
এর আগে, ফেব্রুয়ারিতে সরকারের প্রস্তাবিত কপিরাইট আইন সংশোধনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে একটি নীরব অ্যালবাম প্রকাশ করেছেন অ্যানি লিনিক্স ও ডেমন অ্যালবার্ন’সহ কিছু শিল্পী।