Published : 29 May 2025, 04:23 PM
ব্রিটেনের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো উড়ুক্কু ট্যাক্সি সফলভাবে তার প্রথম যাত্রা সম্পন্ন করেছে। দেশটিতে ২০২৮ সালের মধ্যে এ ট্যাক্সি পরিষেবা চালু করতে চায় যুক্তরাজ্য সরকার, তাদের সেই পরিকল্পনারই অংশ এটি।
ইউরোপীয় আকাশযাত্রার ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ‘ভিএক্স৪’ নামের বিদ্যুচ্চালিত উড়োজাহাজের একটি প্রোটোটাইপ পরীক্ষার বাইরে সাধারণভাবে আকাশপথে কটসওল্ডস অঞ্চল থেকে আরেক প্রান্তে সফলভাবে উড়ে গিয়েছে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে ব্রিটিশ দৈনিক ইন্ডিপেনডেন্ট।
এ উড়ুক্কু যানটি তৈরি করেছে ব্রিস্টলের স্টার্টআপ কোম্পানি ‘ভার্টিকাল অ্যারোস্পেস’। এ উড়ুক্কু যানটি একজন পাইলট ও চার জন যাত্রী নিয়ে ঘণ্টায় ২৪০ কিলোমিটার গতিতে ১৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত যেতে পারে।
গত মাসে বাণিজ্যিক ড্রোন ও উড়ুক্কু ট্যাক্সি পরিষেবাকে বাস্তবে রূপ দিতে এ খাতে দুই কোটি পাউন্ড অর্থ সহায়তার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাজ্য সরকার।
এজন্য ‘রেগুলেটরি ইনোভেশন অফিস’ নামের একটি নতুন সংস্থা তৈরি করেছে যুক্তরাজ্যের পরিবহন বিভাগ ও অসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ বা সিএএ।
এ অফিসের কাজ হচ্ছে, নতুন প্রযুক্তি যাতে দ্রুত সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারে সেজন্য নিয়ম-কানুন সহজ করা বা লাল ফিতার দৌরাত্ম্য কেটে ফেলা।
উড়ুক্কু যানটির প্রধান পরীক্ষাকারী পাইলট সায়মন ডেভিস বলেছেন, “এটিকে প্রথমবারের মতো বিমানবন্দরের বাইরে নিয়ে গিয়ে কটসওল্ডস এলাকায় উড়ানো সত্যিই একটা বিশেষ অভিজ্ঞতা ও আমার ক্যারিয়ারের জন্য এটি এক বড় মাইলফলক।”
“আমরা যা আশা করেছিলাম, এটি ঠিক তেমনই হয়েছে এবং আমাদের সব ধরনের পরীক্ষা শেষ করার পরেই এটি উড়েছে। এমন কিছু উড়োজাহাজ রয়েছে যেগুলো নিরাপদ ও সক্ষম হলেও সবসময় ওড়ানোর অভিজ্ঞতা মজার হয় না।”
“ভিএক্স৪ কেবল নিরাপদই নয়, বরং উড়াতেও আনন্দের। এটি দ্রুত সাড়া দেয়, নমনীয় ও সহজে চালানো যায় এবং এর ককপিটে প্রপেলারের শব্দ শান্ত ও মনোরম। এটিকে উড়াতে পারার বিষয়টি গর্বের ও অসাধারণ সফলতার পরিচয় দিয়েছে এর পেছনে কাজ করা দলটি।”
শিল্প বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিভিন্ন উড়ুক্কু ট্যাক্সি ব্রিটেনের বিভিন্ন জায়গার মধ্যে যোগাযোগকে আরও ভালো করবে। যেমন– যুক্তরাজ্যের ব্রাইটন থেকে হিথ্রো বিমান বন্দরে যেতে কেবল ২০ মিনিট লাগবে যাত্রীদের।
এ স্বপ্নকে আরও এগিয়ে নিতে মার্চে ব্রিটিশ এয়ারলাইন ‘ভার্জিন আটলান্টিক’-এর সঙ্গে অংশীদারিত্ব করেছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কোম্পানি ‘জোবি এভিয়েশন’। তাদের লক্ষ্য, যুক্তরাজ্যজুড়ে পরিবেশবান্ধব ও স্বল্প দূরত্বের বিমানযাত্রার এক নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা।
তাদের প্রাথমিক পরিকল্পনায় গুরুত্ব পেয়েছে হিথ্রো ও ম্যানচেস্টার বিমানবন্দরে উড়ুক্কু ট্যাক্সির কেন্দ্র বসানোর মাধ্যমে “নিরবচ্ছিন্ন, পরিবেশবান্ধব ও ছোট দূরত্বের যাত্রার” সেবা দেওয়া, যেখানে ব্যবহার হবে জোবির বিদ্যুচ্চালিত এয়ার ট্যাক্সি।
একজন পাইলট ও সর্বোচ্চ চারজন যাত্রী নিয়ে ঘণ্টায় তিনশ ২০ কিলোমিটার পর্যন্ত গতিতে উড়তে পারে জোবির বিদ্যুচ্চালিত এয়ার ট্যাক্সি।
এর আগে, যুক্তরাজ্যের লেবার দলের এমপি অ্যালিস ম্যাকডোনাল্ড নরউইচ বিমানবন্দরের একটি প্রকল্পের কথা তুলে ধরেন। যার লক্ষ্য হচ্ছে, “পূর্ব ইংল্যান্ডকে বিমান প্রযুক্তির উদ্ভাবনের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করা।”
তিনি যুক্তরাজ্যের পরিবহন মন্ত্রী মাইক কেন’কে আমন্ত্রণ জানিয়ে বলেন, তিনি যেন “বিদ্যুচ্চালিত বিমানে চড়ে এই অভিজ্ঞতা নেন”।
জবাবে কেন বলেছেন, “সরকার চায় ভবিষ্যতের বিভিন্ন ফ্লাইট প্রযুক্তি যেমন উড়ুক্কু ট্যাক্সির সুবিধা কাজে লাগাক যুক্তরাজ্য। যাতে তা দেশের অর্থনীতি ও সাধারণ মানুষের উপকারে আসে।