Published : 15 Jul 2024, 04:19 PM
শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে মানুষকে আকৃষ্ট করে চলেছে অরোরা’র মতো ঘটনা। তবে, এর মনমুগ্ধকর দৃশ্যের পেছনে লুকিয়ে আছে নানা ঝুঁকি।
স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশগুলোর আকাশে দেখতে পাওয়া এই প্রাকৃতিক আলোর পেছনে আসলে কাজ করে মহাকাশের আবহাওয়ায় ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনা, যার ফলে এমন বৈদ্যুতিক তরঙ্গ সৃষ্টি হতে পারে, যা বৈদ্যুতিক পাইপলাইন বা গ্রিডের মতো গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোতে আঘাত হানতে সক্ষম।
বিজ্ঞানীদের দাবি, এ ধরনের ‘স্পেস ওয়েদার শক’ যে মাত্রায় পৃথিবীতে আঘাত হানে, তা থেকে এইসব ক্ষতিকর তরঙ্গ কতোটা শক্তিশালী, সে সম্পর্কে ধারণা মিলবে।
গবেষণাটি প্রকাশ পেয়েছে অলাভজনক সাইট ‘ফ্রন্টিয়ার্স ইন অ্যাস্ট্রোনমি অ্যান্ড স্পেস সায়েন্সেস’-এ, যা এ ধরনের ক্ষতিকর ওয়েদার শকের পূর্বাভাস ও এর বিপরীতে সুরক্ষা ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজ।
এ গবেষণার প্রধান লেখক ও নাসার ‘গডার্ড স্পেস ফ্লাইট সেন্টার’-এর গবেষক ড. ডেনি অলিভেইরা বলেছেন, “অরোরা ও ভূ-চৌম্বকীয়ভাবে প্ররোচিত কারেন্ট একই রকম মহাকাশ আবহাওয়ার ঘটনার কারণে ঘটে।”
“অরোরা দেখার মানেই হচ্ছে, এটি একটি চাক্ষুষ সতর্কবার্তা যে, মহাকাশের বিভিন্ন বৈদ্যুতিক কারেন্ট ভূমিতেও ক্ষতিকর কারেন্ট তৈরি করতে পারে।”
সূর্য থেকে বিভিন্ন কণা পৃথিবীর চৌম্বকীয় ক্ষেত্রে পৌঁছালে একটি ভূ-চৌম্বকীয় ঝড় তৈরি হয়, এর ফলে অরোরার দেখা মেলে। এ ছাড়া, বিভিন্ন আন্তঃগ্রহীয় ধাক্কা পৃথিবীর চৌম্বকীয় ক্ষেত্রকে সংকুচিত করলেও এমনটি ঘটতে পারে।
এইসব শক বা ধাক্কা ভূ-চৌম্বকীয়ভাবে প্ররোচিত কারেন্টও তৈরি করতে পারে, যা বৈদ্যুতিক অবকাঠামোর জন্য ক্ষতিকর।
এদের ক্ষমতা যত বেশি, তা থেকে ততটাই শক্তিশালী কারেন্ট ও উজ্জ্বল অরোরা তৈরির ঝুঁকি থাকে। তবে, এর চেয়ে কম ক্ষমতার শক ক্রমাগত ঘটতে থাকলে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেটি বড় ক্ষতির কারণ হতে পারে।
এমনই একটি ঘটনা ঘটেছিল ১৯৮৯ সালের মার্চে, যখন বড় এক ভূ-চৌম্বকীয় ঝড়ের কারণে কানাডার হাইড্রো-কুইবেক ব্যবস্থা নয় ঘণ্টার জন্য বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। ফলে, সে সময় দেশটির লাখ লাখ মানুষ বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছিলেন।
“তবে দুর্বল বা ঘন ঘন এমন ঘটনা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন বিদ্যুৎ ব্যবস্থাকেও হুমকির মধ্যে ফেলতে পারে,” বলেছেন অলিভেইরা।
“আমাদের গবেষণায় দেখা গেছে, বড় ধরনের ভূ-বৈদ্যুতিক কারেন্ট প্রায়শই ঘটে থাকে শকের পর। এ বিষয়ে আরও মনযোগ দেওয়া প্রয়োজন।”
গবেষকদের তথ্য অনুসারে, পৃথিবীতে সরাসরি আঘাত হানা শকগুলো এর চেয়েও শক্তিশালী ভূ-চৌম্বকীয় কারেন্ট সৃষ্টি করে। কারণ, এগুলো পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রকে আরও সংকুচিত করে ফেলে।