Published : 30 Sep 2024, 04:04 PM
সম্প্রতি প্রত্নতাত্ত্বিকরা মরক্কো’তে এমন এক অজানা নিওলিথিক বা নবপ্রস্তরযুগীয় সমাজের খোঁজ পেয়েছেন, যা বিবেচিত হচ্ছে উত্তর-পশ্চিম আফ্রিকায় কৃষিকাজের প্রথম দিকের প্রমাণ হিসেবে।
আফ্রিকান প্রাগৈতিহাসিক যুগের ওপর নতুনভাবে আলোকপাত করেছে এই আবিষ্কার, যা নিয়ে মানুষের প্রচলিত ধারণা এতদিন খুবই দূর্বল ছিল। এমনকি গবেষণাটি প্রাথমিক ভূমধ্যসাগরীয় বিভিন্ন সমাজ বিকাশে মাগরেব অঞ্চলের গুরুত্বকেও তুলে ধরে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজ।
এ গবেষণার বিভিন্ন ফলাফল উঠে এসেছে মরক্কোর ‘ওয়েদ বেহত’ জলধারায় পরিচালিত ফিল্ডওয়ার্কের ওপর ভিত্তি করে, যা প্রকাশ পেয়েছে প্রত্নতত্ত্বভিত্তিক জার্নাল ‘অ্যান্টিকুইটি’তে।
গবেষণাটিতে কাজ করেছেন কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি’র প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক সাইপ্রিয়ান ব্রুডব্যাংক, ইতালিভিত্তিক গবেষণা সংস্থা ‘সিএনআর-আইএসপিসি’র প্রত্নতাত্ত্বিক জিউলিও লুকারিনি এবং অলাভজনক গবেষণা সংস্থা ‘ইনস্টিটিউট অফ স্ট্র্যাটেজিক অ্যানালিসিস অ্যান্ড পলিসি রিসার্চ (ইনসাপ)’র গবেষক ইউসেফ বেকবট নেতৃত্বাধীন একটি গবেষণা দল।
আফ্রিকার নীল নদ অঞ্চলের বাইরে প্রথম প্রধান কৃষি বসতি কোনটা ছিল, সে রহস্য উন্মোচিত হয়েছে এ গবেষণায় । এর সম্ভাব্য সময়কাল নিওলিথিক যুগের শেষ পর্যায়ে, আনুমানিক খৃষ্টপূর্ব চার হাজার থেকে এক হাজার অব্দের মধ্যে।
মাগরেব অঞ্চল, যার অংশ ছিল আধুনিক মরক্কো, আলজেরিয়া, তিউনিসিয়া ও লিবিয়ার মতো দেশগুলো। ‘প্যালিওলিথিক’ বা আদিম প্রস্তরযুগ, ‘আয়রন এইজ’ বা লৌহযুগ ও ইসলামিক যুগে নিজের গুরুত্বের জন্য অঞ্চলটি দীর্ঘদিন ধরেই বিশেষভাবে পরিচিত।
তবে, এতদিন অঞ্চলটির র্খষ্টপূর্ব চার হাজার অব্দ থেকে এক হাজার অব্দের মধ্যকার ইতিহাস নিয়ে প্রচলিত ধারণায় বড় ঘাটতি ছিল। এটি এমন সময় ছিল, যখন ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের চেহারার খোলনলচে বদলে যায়।
নতুন অনুসন্ধানটি ওই ঘাটতি পূরণের পাশাপাশি প্রমাণ করেছে, ভূমধ্যসাগরীয় আদিম বিভিন্ন সমাজ বিকাশে কেন্দ্রীয় ভূমিকা রেখেছিল মাগরেব।
ওয়েদ বেহতে পরিচালিত গবেষণার এলাকাটিকে তুলনা করা যায় ব্রোঞ্জ যুগের ট্রয় নগরীর সঙ্গে। এমনকি এতে বিভিন্ন গাছ ও প্রাণীর অবশেষ, মৃৎশিল্প এবং পাথরের সরঞ্জামের নজিরও মিলেছে।
গবেষণা দলটি সে এলাকায় বড় বড় সংরক্ষাণাগার গর্তও খুঁজে পেয়েছে, যার মিল রয়েছে জিব্রালটার প্রণালীর অপর পাশে অবস্থিত আইবেরিয়ান উপদ্বীপে খুঁজে পাওয়া বিভিন্ন গর্তের সঙ্গে।
তৎকালীন সময়ে আফ্রিকা ও ইউরোপের মধ্যে বড় যোগসূত্র থাকার ইঙ্গিতও মিলেছে গবেষণাটিতে, যেখানে সাংস্কৃতিক বিনিময়ের গুরুত্বপূর্ণ হাব হিসেবে কাজ করেছে মাগরেব।
গবেষকদের তথ্য অনুসারে, এ অনুসন্ধান আগের বিভিন্ন অনুমানকে চ্যালেঞ্জ করে, যেখানে মাগরেবকে নিওলিথিক যুগের প্রান্তস্থ অঞ্চল বলে দাবি ছিল। শুধু তাই নয়, অঞ্চলটি বিস্তৃত ভূমধ্যসাগরীয় জগতের অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল, যা তৎকালীন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিকাশে বড় ভূমিকা রেখেছে।