Published : 11 Oct 2022, 03:53 PM
দিনের মাঝামাঝি সময়ে তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়ালে তাপদাহের সতর্কতা জারি করে বিশ্বের অনেক দেশ। কিন্তু দুবাইয়ের জন্য বিষয়টা নেহাতই স্বাভাবিক। আর দেশটির অ্যালুমিনিয়াম গলানোর কারখানার শ্রমিকদের কাজ করতে হয় জন্য আরও উত্তপ্ত পরিবেশে।
এমিরেটস গ্লোবাল অ্যালুমিনিয়াম (ইজিএ)-তে যে প্রক্রিয়ায় এই ধাতব প্রক্রিয়াজাত করা হয় তাতে ৯৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছুঁতে পারে তাপমাত্রা। এমন উত্তপ্ত পরিবেশে কাজ করার বিষয়টির সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছেন কারখানাটির কর্মীরা; খোলা ওয়্যারহাউজেও তাপমাত্রা ৫৮ ডিগ্রি ছাড়িয়ে যায় গ্রীস্মের মাসগুলোতে।
ইজিএর শ্রমিকরা প্রতিদিন কাজে যান তাপমাত্রা-নিরোধী ওভারহল, হেলমেট, গগলস আর বুট পড়ে। কিন্তু জুন মাস থেকে ৫০ জন শ্রমিক এক পরীক্ষামূলক প্রকল্পের অংশ হিসেবে কাজে যাচ্ছেন বাহুতে নতুন এক ডিভাইস জড়িয়ে।
চার কোণের একটি প্যানেল আটঁসাট করে বাহুর ত্বকের সঙ্গে বেঁধে রাখে চওড়া রাবারের ব্যান্ড। আর পরিধানকারীর হৃদস্পন্দর, ত্বকের তাপমাত্রা, দৈহিক কর্মকাণ্ডের হার আর কতো ঘাম হচ্ছে তার সব তথ্য সংগ্রহ করে প্যানেলের সেন্সর। পরিধানকারীর ‘কোর বডি টেম্পারেচার’ নির্ধারণে করা হয় এ সব ডেটা সমন্বয় করে; একজন মানুষের রক্ত আর অভ্যন্তরীণ অঙ্গপ্রত্যঙ্গের তাপমাত্রাই দেহের ‘কোর বডি টেম্পারেচার’।
ডিভাইসটির নির্মাতা যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি কেনজেন। সহ্যক্ষমতার চেয়ে বেশি তাপমাত্রা থেকে শ্রমিকদের নিরাপদ রাখাই এ ডিভাইসটির মূল উদ্দেশ্য। দেহের তাপমাত্রা ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়ালে এবং ক্লান্তির ইঙ্গিত দেখা দিলেই ভাইব্রেট করা শুরু করে ডিভাইসটি, নোটিফিকেশন চলে যায় ফোনে; পরিধানকারীকে মনে করিয়ে দেয় য়ে সময় হয়েছে বিরতি নেওয়ার।
দেহের তাপমাত্রা মাপার প্রযুক্তি বাজারে নতুন কিছু নয়। ফিটনেস ট্র্যাকার আর স্মার্টওয়াচের মতো ডিভাইসে এই ফিচারের উপস্থিতি স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু কেনজেন বলছে, দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহারের জন্য নয় বরং শিল্পখাতের পেশাদার শ্রমিক যারা প্রতিনিয়ত উত্তপ্ত পরিবেশে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেন তাদের ব্যবহারের কথা মাথায় রেখে বানানো হয়েছে ডিভাইসটি।
মূল উদ্দেশ্য: শ্রমিকের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা
সিএনএন জানিয়েছে, কম্পিউটারে দেখানো ড্যাশবোর্ডে কর্মীদের সঙ্গে থাকা কেনজেন ব্যান্ডের পাঠানো তথ্য দেখার সুযোগ আছে এজিএর কারখানার ব্যবস্থাপকদের। কর্মীদের সার্বিক স্বাস্থ্যের ওপর নজর রাখতে পারেন তারা। তবে, কর্মীদের নিজস্ব প্রাইভেসির খাতিরে সীমিত সংখ্যক তথ্যে প্রবেশাধিকার আছে তাদের।
“কারও নিরাপত্তা হুমকিতে পড়লে অথবা কারও সাহায্য প্রয়োজন হলে হস্তক্ষেপ করার জন্য তাদের (ব্যবস্থাপকদের) যতোটা ডেটা প্রয়োজন, কেবল ততোটাই পান তারা,” সিএনএনকে বলেছেন কেনজেনের বাণিজ্যিক পরিচালন ভাইস প্রেসিডেন্ট কাইল হাব্রাগসে।
কেনজেন ডিভাইসটি উন্মোচন করেছিল ২০২০ সালের মে মাসে। এর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে বিভিন্ন শিল্পখাতের একাধিক কোম্পানির সঙ্গেও জোট বেঁধেছে তারা। দমকলকর্মী থেকে শুরু করে নির্মাণ শ্রমিক, খনির শ্রমিক এবং উৎপাদন শিল্পের শ্রমিকরাও আছেন সে তালিকায়।
আইএলও (আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা)’র তথ্য অনুযায়ী বিশ্বের একশ কোটি কৃষি শ্রমিক আর বস্ত্রশিল্পের ছয় কোটি ষাট লাখ শ্রমিকের জন্য কর্মস্থলে অনেকগুলো ঝুঁকির মধ্যে অন্যতম হল সহ্যক্ষমতার চেয়ে বেশি তাপমাত্রা। এ কারণে সংযুক্ত আরব আমিরাত ২০৩০ সালের মধ্যে দেশের জিডিপির দুই শতাংশের বেশি হারাবে বলে আশঙ্কা করছে সংস্থাটি।
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে তাপমাত্রা যে হারে বাড়ছে, ২০৩০ সালে উৎপাদনশীলতার ওপর বিরূপতার প্রভাব আট কোটি পেশাদার কর্মী হারানোর সমান হতে পারে বলে সংস্থাটির আশঙ্কা।
কেনজেন ডিভাইসটিকে ‘বাড়তি নিরাপত্তা স্তর’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন ইজিএর স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা এবং পরিবেশবিষয়ক নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্ট সালমান আব্দুল্লা।
“ডিভাইসটি ছাড়াও আপনি যদি বাড়তি তাপের বিরূপ প্রভাবের লক্ষণ খুঁজতে নিজের ওপর নজর রাখেন, সেক্ষেত্রে আমাদের কর্মীদের নির্দিষ্ট কিছু পদক্ষেপ নিতে হয়; যেমন পানি খেতে যাওয়া অথবা শীতল ঘরে যাওয়া,” যোগ করেন তিনি।
আব্দুল্লার মতে, কেনজেন ডিভাইসের সবচেয়ে ইতিবাচক দিক হচ্ছে তাৎক্ষণিক ডেটার ভিত্তিতে প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ নেওয়া সহজ হয়। দেহের তাপমাত্রা যে সহ্যক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে তা শ্রমিকরা টের না পেলেও চিহ্নিত করতে পারবেন ব্যবস্থাপকরা।
“এটা বস্তুনিষ্ঠভাবে তাদের স্বাস্থ্যের সার্বিক অবস্থা পরিমাপ করে এবং কোনো সময়ে কেউ যদি মনোযোগ হারিয়ে ফেলে তবে তবে সেটি উচ্চতাপজনিত জটিলতার প্রাথমকি লক্ষণ হতে পারে” যোগ করেন তিনি।
এ বিষয়টির আরও গুরুত্ব পাওয়া উচিত এবং অন্যান্য কোম্পানিরও একই ধরনের নিরাপত্তা পদক্ষেপ নেওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন আব্দুল্লা। “মূল উদ্দেশ্য কেবল আমাদের ওপর ডিভাইসটি নিয়ে পরীক্ষা চালানো নয় বরং আমাদের দেখে অন্যদের শিখতে উদ্বুদ্ধ করা।”