Published : 19 Apr 2024, 05:07 PM
রাক্ষসের প্রাণ ছিল এক ভ্রমরের মধ্যে, আর সেই ভ্রমর ছিল এক সোনার কৌটায়, যেটি ছিল কোন এক সুদূর সাগরের তলদেশে- পুরোনো রূপকথার গল্পে এমন অবিশ্বাস্য বর্ণনা থাকলেও, এখন গবেষকরা বলছেন সত্যিই পানির নিচে দীর্ঘ সময় পর্যন্ত বেঁচে থাকে ভ্রমর।
ভ্রমরের বিভিন্ন প্রজাতি এক সপ্তাহ পর্যন্ত পানির নিচে বেঁচে থাকতে পারে বলে উঠে এসেছে সাম্প্রতিক এক গবেষণায়।
কানাডা’র গবেষকদের এক পরীক্ষায় দেখা গেছে, হাইবারনেট বা শীতনিদ্রার সময় সাধারণ ভ্রমর প্রজাতির ‘ইস্টার্ন বাম্বলবি কুইন্স’ আপাতদৃষ্টিতে কোনও সমস্যা ছাড়াই এক সপ্তাহ পানিতে ডুবে থাকতে পারে।
কানাডা’র অন্টারিও শহরের ‘ইউনিভার্সিটি অফ গেল্ফ’-এর ড. সাবরিনা রনডেউ আগের সমীক্ষায় ভুলের পরে এ বিষয় নিয়ে গবেষণা শুরু করেন।
একটি রেফ্রিজারেটরে তিনশটি ‘হাইবারনেটিং কমন ইস্টার্ন বাম্বলবি কুইন্সে’র প্রজাতি সংরক্ষণ করার পরে ড. রনডেউ দেখেন, পোকামাকড়গুলো চারটি পাত্রে ঘনীভূত অবস্থায় ছিল।
“আমি নিশ্চিত ছিলাম যে রানী ভ্রমররা মারা গেছে,” বলেছেন ড. রনডেউ।
“আমি পানি সরিয়ে ফেলার পর আশ্চর্যজনকভাবে দেখতে পাই এরা এখনও বেঁচে আছে।”
পরবর্তীতে রনডেউ ও তার সহকর্মী অধ্যাপক নাইজেল রেইন ১৪৩ রানী ভ্রমরকে বাছাই করেন। এদেরকে শীতনিদ্রায় রাখতে প্ররোচিত করতে একটি অন্ধকার রেফ্রিজারেটেড ইউনিটে রাখার আগে, মাটিযুক্ত পৃথক প্লাস্টিকের টিউবের উপরে রেখেছিলেন।
ভ্রমররা বেঁচে আছে তা দেখার পরে গবেষকরা ১৭টি রানী ভ্রমরকে নিয়ন্ত্রণ হিসেবে আলাদা গ্রুপে রাখেন ও বাকি ১২৬টি টিউবে ঠাণ্ডা পানি যোগ করেন।
এর মধ্যে ৬৩টি রানীকে পানির উপরে ভাসিয়ে রাখা হয়েছিল এবং বাকি ৬৩টি রানীকে একটি প্লাঞ্জারের (নিমজ্জনকারী) মাধ্যমে পানির নিচে ঠেলে দেওয়া হয়।
এই উভয় গ্রুপই তখন তৃতীয় ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। এর মধ্যের ভ্রমরদের একটি দল আট ঘণ্টার জন্য, একটি দল ২৪ ঘণ্টার জন্য ও অন্য দলটি সাত দিনের জন্য চলে যায়।
গবেষণা দলটি দেখতে পায়, রানীদের ৮১ শতাংশ সাত দিন ধরে পানির নিচে ডুবে ছিল। এরা আট সপ্তাহের কৃত্রিম শীতনিদ্রার পরেও নিয়ন্ত্রণ গ্রুপের তুলনায় ৮৮ শতাংশ বেঁচে ছিল।
আট সপ্তাহের গবেষণায় দেখা গেছে, বাকি দলগুলোর তুলনায় রানী ভ্রমরগুলো পানির কিছুটা উপরের দিকে ছিল।
গবেষকরা পিয়ার-রিভিউড জার্নাল ‘বায়োলজি লেটার্সে’ বলেছেন, বেশি ওজনের রানীদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা বেশি।
ড. রনডেউ বলেছেন, “গোটা বিশ্বের ভ্রমর প্রজাতির এক-তৃতীয়াংশ এই মুহূর্তে কমে যাচ্ছে, তাই আমরা যদি বন্যাকে মৌমাছির জন্য সম্ভাব্য হুমকি থেকে বাদ দিতে পারি, তাহলে আমাদের মনোযোগ আমরা অন্য হুমকির দিকে দিতে পারব। বিশেষ করে যেসব হুমকি সম্পর্কে আমরা নিশ্চিতভাবে জানি।”