Published : 11 Sep 2024, 05:23 PM
সপ্তাহজুড়ে কাজ করার কারণে অনেকেরই ঘুমের ঘাটতি দেখা দেয়। আর ওই ঘাটতি পূরণ করতে ছুটির দিনে ঘুমিয়ে কাটান অনেকে। সপ্তাহান্তে বা ছুটির দিনে এমন ঘুমানোর বিষয়টি মানুষের হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হতে পারে – এমনই উঠে এসেছে সাম্প্রতিক এক গবেষণায়।
নতুন গবেষণা বলছে, ছুটির দিনে ঘুম মানুষের হার্টের উপকার করার পাশাপাশি হৃদরোগ হওয়ার ঝুঁকি ১৯ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়ে আনতে পারে।
কোনও জার্নালে প্রকাশিত না হলেও এ গবেষণাটি রোববার উপস্থাপিত হয়েছে ‘ইউরোপিয়ান সোসাইটি অফ কার্ডিওলজি’র বার্ষিক কংগ্রেসে।
এ গবেষণার জন্য ‘ইউকে বায়োব্যাংক স্টাডি’র ৯০ হাজার নয়শ তিন অংশগ্রহণকারীর তথ্য ব্যবহার করেছেন গবেষকরা, যেখানে যুক্তরাজ্যের ৪০ থেকে ৬৯ বছর বয়সী পাঁচ লাখেরও বেশি মানুষের স্বাস্থ্যতথ্য রয়েছে।
অংশগ্রহণকারীদের ঘুমের পরিমাণের ডেটা ‘অ্যাক্টিভিটি-মনিটরিং’ ওয়াচ বা ঘড়ি ব্যবহার করে পরিমাপ করা হয়েছিল। যারা সাপ্তাহিক ছুটির দিনে ঘুমের ঘাটতি পূরণের জন্য বেশি ঘুমিয়েছেন তাদের থেকে শুরু করে যারা সবচেয়ে কম ঘুমিয়েছেন তাদেরকে ভাগ করে নেওয়া হয় চারটি দলে।
এক নম্বর দলের অংশগ্রহণকারীরা সপ্তাহান্তে ০.২৬ থেকে ১৬.০৫ ঘণ্টা কম ঘুমিয়েছেন। অন্যদিকে চার নম্বর দলের অংশগ্রহণকারীরা সপ্তাহের তুলনায় সপ্তাহান্তে ১.২৮ থেকে প্রায় ১৬ ঘণ্টা বেশি ঘুমিয়েছেন।
১৪ বছরের ফলো-আপ পিরিয়ডের পর এক নম্বর দলটির হৃদরোগ, হার্ট ফেইলিওর, অ্যাট্রিয়াল ফাইব্রিলেশন ও স্ট্রোকের মতো কার্ডিওভাসকিউলার অবস্থা বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি চার নম্বর দলের তুলনায় গড়ে প্রায় ১৯ শতাংশ কম ছিল।
প্রতি রাতে সাত ঘণ্টারও কম ঘুমানোর বিষয়টিকে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে ঘুমের ঘাটতি হিসেবে। অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে যারা ঘুমের ঘাটতি দূর করতে ছুটির দিনে বেশি ঘুমিয়েছেন তাদের হৃদরোগের ঝুঁকির পরিমাণ, যারা কম ঘুমিয়েছিলেন তাদের তুলনায় ২০ শতাংশ কম ছিল। তবে গবেষণার এসব ফলাফলের কোনওটিই নারী-পুরুষের ক্ষেত্রে আলাদা করা হয়নি।
“এ গবেষণায় যুক্তরাজ্যের জনসংখ্যার উপর একচেটিয়াভাবে নজর দেওয়া হলেও এর ফলাফলে হার্টের স্বাস্থ্যের উপর দীর্ঘমেয়াদি ঘুমের ঘাটতির খারাপ প্রভারের উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে,” বলেছেন ‘নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটি’র ‘গ্রসম্যান স্কুল অফ মেডিসিন’-এর ক্লিনিক্যাল অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর ড. নিয়েকা গোল্ডবার্গ। তিনি এ গবেষণায় জড়িত ছিলেন না।
“আরেকটি গবেষণায় ইঙ্গিত মিলেছে, ঘুমের ঘাটতি পূরণের চেষ্টা না করা ও খাবারের চার্টের অবস্থা খারাপ হওয়ার ফলে মানুষের ওজন বাড়ে ও ইনসুলিন সংবেদনশীলতা কমে যায়,” বলেছেন লস অ্যাঞ্জেলেসের ‘সিডার্স-সিনাই মেডিকেল সেন্টার’-এর প্রিভেন্টিভ কার্ডিওলজির পরিচালক ও ‘বারবারা স্ট্রাইসেন্ড উইমেনস হার্ট সেন্টার’-এর কার্ডিওলজি’র সহযোগী পরিচালক মার্থা গুলাটি।
“এ বিষয়টি এখনও পুরোপুরি স্পষ্ট নয়। এমনকি এই গবেষণার ক্ষেত্রেও, যা আসলে ঘটনা।”
এ কারণে হার্টের সুস্থতার জন্য সপ্তাহের প্রতিদিনই নিয়মিত ঘুম সবচেয়ে ভালো বলে পরামর্শ দিয়েছেন গবেষকরা।
ঘুম কীভাবে হার্টের স্বাস্থ্যকে ভাল রাখে?
লেখকরা অবশ্য এখানে জিনগত ঝুঁকির বিষয়টি উল্লেখ করেছেন, যা গবেষণার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তারা বলছেন, ঘুমের ঘাটতি ও কম হৃদরোগের ঝুঁকির মধ্যে সম্পর্ক বজায় থাকার কারণে পরিচিত জিনগত ঝুঁকির মধ্যে থাকা মানুষদের জন্য এটি আশাব্যঞ্জক খবর।
“ঘুমের ঘাটতির কারণে উচ্চ রক্তচাপ, উচ্চ কোলেস্টেরল, হার্ট অ্যাটাক, মেদ, ডায়াবেটিস ও স্ট্রোকসহ হার্টের অসংখ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে। এ ছাড়াও ঘুমের সমস্যা, উচ্চ রক্তচাপ ও অ্যারিথমিয়াসের মতো ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে,” বলেন গোল্ডবার্গ।
গুলাটি বলছেন, এ গবেষণায় আরও কিছু প্রশ্নের উত্তর আমাদের জানা নেই। যেমন– সপ্তাহান্তে বেশি ঘুমের কি কোনো সীমা আছে? মানুষের প্রতিদিন ন্যূনতম কি পরিমাণ ঘুম দরকার, যা কেউ পূরণ করতে পারবেন না? আর যারা ঠিকমতো ঘুমান তাদের কি হৃদরোগ না হওয়ার সম্ভাবনা বেশি?
“হার্টের স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য প্রতি রাতে কমপক্ষে সাত ঘণ্টা ঘুমানো ও একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ ঘুমের ধরন বজায় রাখার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। একইসঙ্গে যতটা সম্ভব প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমাতে যাওয়া ও ঘুম থেকে ওঠার বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে,” বলেন গোল্ডবার্গ।
“ঘুমের সমস্যা হলে আপনি আপনার ডাক্তারের সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা করতে পারেন। মনে রাখবেন, স্বাস্থ্য উদ্ধারে আপনিই আপনার সহযোদ্ধা।”