Published : 02 Jun 2025, 04:05 PM
যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ও কপিরাইট নিয়ে চলছে বড় ধরনের বিতর্ক। একদিকে সরকার এআই কোম্পানিগুলোকে সহজে কনটেন্ট ব্যবহারের সুযোগ দিতে চাইছে, অন্যদিকে শিল্পীরা বলছেন এতে তাদের জীবিকা হুমকির মুখে পড়বে।
এই বিষয়টি নিয়ে হাউস অব লর্ডসে (পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ) সোমবার আবার আলোচনা শুরু হচ্ছে। কিন্তু এখনো কোনো পক্ষই সমঝোতায় আসেনি।
বিতর্কের মূল কারণ একটি নতুন আইন ‘ডেটা (ইউজ অ্যান্ড অ্যাকসেস) বিল’। এই বিল অনুযায়ী, এআই ডেভেলপাররা যে কোনো কনটেন্ট ব্যবহার করতে পারবে যদি না কনটেন্ট মালিক স্পষ্টভাবে বলেন যে, তারা চান না এটি ব্যবহার হোক।
তবে শত শত পার্লামেন্ট সদস্য এই ধারার বিরুদ্ধে। তারা চান, এআই কোম্পানিগুলো যেন জানায় তারা কোন কোন কপিরাইটপ্রাপ্ত কনটেন্ট ব্যবহার করেছে, এবং তার জন্য অনুমতি নিতে ও আর্থিক ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য হয়।
এক সময়ের চলচ্চিত্র নির্মাতা ব্যারোনেস বিবান কিডরন বলেন, ‘সরকার যদি এই আইন পাস করে, তাহলে এটা শিল্পীদের প্রতি অন্যায় হবে। এটি যেন ‘চুরি করার’ অনুমতি দেওয়া।’
অন্যদিকে মেটার (ফেইসবুকের মূল কোম্পানি) সাবেক নির্বাহী স্যার নিক ক্লেগ বলছেন, ‘যদি প্রতিটি কনটেন্ট ব্যবহারের জন্য অনুমতি নিতে হয়, তাহলে যুক্তরাজ্যে এআই শিল্প টিকে থাকতে পারবে না।’
কী নিয়ে এত আলোচনা?
এআই ডেভেলপাররা শুরু থেকেই ইন্টারনেট থেকে অনেক ছবি, লেখা ও গান কপি করে নিজেদের সিস্টেমকে প্রশিক্ষিত করেছে। এখন এসব সিস্টেম দিয়ে এক ক্লিকে গান লেখা, ছবি আঁকা বা লেখা তৈরি করা যায়।
এই কাজের জন্য তারা মূল শিল্পীদের কিছুই দেয়নি। তাই প্রবীণ সঙ্গীতশিল্পী এলটন জন, পল ম্যাককার্টনি, বা হাল আমলের ডুয়া লিপার মতো তারকারা বলছেন এটা তাদের কাজ চুরি করার মতোই।
স্যার এলটন তো এক সাক্ষাৎকারে বলেই ফেলেছেন, ‘সরকার তরুণদের ভবিষ্যত কেড়ে নিচ্ছে।’
তবে অন্য পক্ষ বলছে, এসব গান বা লেখা এমনিতেই অনলাইনে পাওয়া যায়। যুক্তরাজ্য যদি কঠোর আইন করে, তাহলে এআই কোম্পানিগুলো অন্য দেশে চলে যাবে যাতে দেশ বিনিয়োগ হারাবে।
বিলের ভবিষ্যৎ কী?
এই বিল নিয়ে যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে এখন হাউস অব লর্ডস ও হাউস অফ কমন্সের মধ্যে টানাপড়েন চলছে। কোনো সমঝোতা না হলে পুরো বিলই বাতিল হয়ে যেতে পারে, যদিও সেই সম্ভাবনা কম।
বিলটিতে আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আছে যেমন মৃত সন্তানের তথ্য পাওয়ার অধিকার, স্বাস্থ্য তথ্য আদান-প্রদান সহজ করা, এবং ভূগর্ভস্থ পাইপের ৩ডি মানচিত্র তৈরি করা।
পার্লামেন্টে এই পুরো বিতর্কে প্রযুক্তি আর সৃজনশীলতা একে অন্যকে চ্যালেঞ্জ করছে। কোথায় সীমা টানতে হবে, তা নিয়ে এখনো স্পষ্ট সমাধান মেলেনি।