Published : 22 Jun 2025, 04:33 PM
অস্ট্রেলিয়ার ব্লু মাউন্টেনস-এ প্রাচীন অস্ট্রেলীয়দের ব্যবহৃত ২০ হাজার বছর পুরানো এক গুহার সন্ধান পাওয়ার দাবি করেছেন বিজ্ঞানীরা।
নতুন এই বিস্ময়কর পুরাতাত্ত্বিক আবিষ্কারে উঠে এসেছে, শেষ বরফ যুগেও ব্লু মাউন্টেনস অঞ্চলে বসবাস করতেন মানুষ। বিজ্ঞানীদের আগের অনুমান ছিল, সেখানে অনেক পরে মানুষের পায়ের ছাপ পড়েছে।
তবে নতুন গবেষণা বলছে, আরও অনেক আগেই সেখানে পৌঁছেছিল মানুষ।
গবেষণায় ফার্স্ট নেশনস বা স্থানীয় আদিবাসী সম্প্রদায়ের সদস্যদের সঙ্গে মিলে কাজ করে ‘দারগান শেল্টার’ নামের এক গুহায় প্রায় সাতশটি পাথরের তৈরি প্রাচীন হাতিয়ার খুঁজে পেয়েছেন অস্ট্রেলিয়ান মিউজিয়াম, সিডনি ইউনিভার্সিটি ও অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি’র বা এএনইউ-এর গবেষকরা।
এ স্থানটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এক হাজার ৭৩ মিটার উঁচুতে অবস্থিত ও এটি প্রায় ২০ হাজার বছর পুরানো বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজ।
এ আবিষ্কারের মাধ্যমে এখন পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ায় চিহ্নিত সবচেয়ে উঁচু প্রাচীন স্থানে মানুষের বসবাসের নিদর্শন হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে ‘দারগান শেল্টার’।
শেষ বরফ যুগে এ এলাকার ভূপ্রকৃতি ছিল গাছশূন্য, কঠিন ও প্রায়ই বরফে ঢাকা। এখন পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা অনুমান করতেন, এমন কঠিন পরিবেশে মানুষের বসবাস একেবারেই অসম্ভব।
তবে গুহায় খুঁজে পাওয়া বিভিন্ন নিদর্শন ও কাঠামো থেকে প্রমাণ মিলেছে, হাজার হাজার বছর ধরে বারবার এ আশ্রয়স্থলেই ফিরে এসেছে মানুষ।
প্রথমে এ স্থানটি নিয়ে গবেষণার জন্য পরামর্শ দিয়েছিলেন ‘গোমেরই’ সম্প্রদায়ের জ্ঞানের ধারক ও সিডনি ইউনিভার্সিটি’র পুরাতত্ত্ব বিষয়ক পরামর্শক ওয়েন ব্রেনান।
এ কাজের জন্য বিজ্ঞানী ও স্থানীয় বিভিন্ন আদিবাসী সম্প্রদায়কে একসঙ্গে করেছেন তিনি। যাদের মধ্যে রয়েছেন ধারুগ, উইরাদুরি, ধরাওয়াল, গোমেরই, ওয়োননারুয়া ও এনগুনাওয়াল জনগোষ্ঠীর সদস্যরা। এ অঞ্চলের সাংস্কৃতিক ইতিহাস খুঁজে দেখা ও এর ঐতিহ্যের আরও ভালো সুরক্ষার জন্য কাজ করছেন তারা।
অস্ট্রেলিয়ান মিউজিয়াম ও সিডনি ইউনিভার্সিটি’র সঙ্গে কাজের পাশাপাশি গবেষণায় নেতৃত্ব দিয়েছেন ড. অ্যামি মোসিগ ওয়ে। তার সঙ্গে এ গবেষণায় কাজ করেছেন ‘অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি’র বা এএনইউ-এর সহযোগী অধ্যাপক ডানকান রাইটও।
মোসিগ বলেছেন, এ আবিষ্কার থেকে ইঙ্গিত মিলেছে, গোটা বিশ্বে বাড়তে থাকা ধারার সঙ্গে কীভাবে জড়িয়ে রয়েছে অস্ট্রেলিয়া। প্রথম মানুষেরা আগের ধারণার চেয়ে বেশি ঠাণ্ডা পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারত। ওই সময় উঁচু ও বরফে ঢাকা বিভিন্ন জায়গায় মানুষের পক্ষে পৌঁছানো কোনো বাধা ছিল না, বরং সেগুলো তাদের বাড়িরই অংশ ছিল।
এএনইউ-এর অধ্যাপক ফিলিপ পাইপার বলেছেন, এ স্থানের নিখুঁত সংরক্ষণের কারণে ২০ হাজার বছর আগের মানুষের কার্যকলাপের এক শক্তিশালী সময়রেখা তৈরি করতে পেরেছেন গবেষকরা।
গবেষকরা বলছেন, খোঁজ পাওয়া বিভিন্ন জিনিসের মধ্যে রয়েছে আগুন জ্বালানোর জায়গা অর্থাৎ চুলার নিদর্শন ও স্তরে জমে থাকা নিদর্শন, যা ধারণ করে রেখেছে হাজার হাজার বছরের আগের মানুষের বসবাসের ইতিহাস।
এএনইউ-এর পিএইচডি শিক্ষার্থী এমিলি নটম্যান বলেছেন, এসব পাথরের হাতিয়ারের রাসায়নিক বিশ্লেষণে দেখা গিয়েছে, বরফ যুগে মানুষ এই স্থানে পৌঁছাতে ‘হান্টার ভ্যালি’ ও ‘জেনোলান’ গুহার মতো অনেক দূর থেকে যাত্রা করেছিলেন।
গবেষণা থেকে ইঙ্গিত মিলেছে, ঠাণ্ডা ও কঠিন সময়েও বিভিন্ন সম্প্রদায় দূর দূরান্ত পাড়ি দিয়ে চলাচল করত ও পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল তাদের।
স্থানীয় ধারুগ নারী ও এ গবেষণার সহ-লেখক লিয়ান ওয়াটসন রেডপাথ ও এরিন উইলকিনস জোর দিয়ে বলেছেন, তাদের জনগণ দীর্ঘদিন ধরেই এই গুহার কথা জানতেন।
তারা বলেছেন, এটি কেবল একটি আশ্রয়স্থান নয়, বরং এটি তাদের পরিচয় ও ইতিহাসের অংশ, যা গল্প বলার, একসঙ্গে জমায়েত হওয়ার এবং বেঁচে থাকার জন্য ব্যবহৃত হত।
১৯৩০-এর দশকে শুরু হওয়া এ গবেষণার কাজ এখনও অব্যাহত রয়েছে, যেটি অস্ট্রেলিয়ার ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ এক অধ্যায় যোগ করার পাশাপাশি স্থানীয় আধিবাসী জনগোষ্ঠী ও ব্লু মাউন্টেনসের কঠিন উঁচু অঞ্চলের মধ্যে দীর্ঘকালীন সম্পর্ককে তুলে ধরেছে।
গবেষণাটি প্রকাশ পেয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নার ‘নেচার হিউম্যান বিহেভিয়ার’-এ।