Published : 30 Apr 2025, 01:50 PM
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআইয়ের মাধ্যমে শতাব্দী প্রাচীন এক ধাঁধার সমাধান করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানীরা। তাদের দাবি, শক্তিশালী ও দীর্ঘমেয়াদি ব্যাটারির বিকাশের সময়কাল এগিয়ে দিতে পারে এটি।
দীর্ঘদিনের এ সমস্যাটি হচ্ছে, ব্যাটারি তৈরিতে ন্যানোক্রিস্টালের সঠিক পারমাণবিক কাঠামো বা গঠন নির্ধারণ করা। ন্যানোক্রিস্টাল মূলত ইলেকট্রনিক্স থেকে প্রত্নতত্ত্ব পর্যন্ত সবকিছুর অগ্রগতির জন্য “অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ক্ষুদ্র ও বিশৃঙ্খল উপাদান” বলে উঠে এসেছে ব্রিটিশ দৈনিক ইন্ডিপেনডেন্টের প্রতিবেদনে।
ব্যাটারি তৈরির জন্য আগের বিভিন্ন পদ্ধতিতে বড় ও বিশুদ্ধ স্ফটিকের মধ্য দিয়ে এক্স-রে রশ্মির বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তবে এ নতুন পদ্ধতিটি বিভিন্ন ন্যানোক্রিস্টালে কাজ করে না, যা পাউডার আকারে আসে ও এক্স-রে রশ্মিকে অস্পষ্টভাবে ছড়িয়ে দেয়।
একটি কাস্টম-বিল্ট এআই অ্যালগরিদম ব্যবহার করে উপাদানটির পারমাণবিক কাঠামো অনুমানের জন্য ন্যানোক্রিস্টালের মাধ্যমে তৈরি ধরনটি পর্যবেক্ষণ করেছে নিউ ইয়র্কের ‘কলম্বিয়া ইঞ্জিনিয়ারিং’য়ের একটি দল।
কলম্বিয়া ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ‘ম্যাটিরিয়াল সায়েন্স ও অ্যাপ্লাইড ফিজিক্স অ্যান্ড অ্যাপ্লাইড ম্যাথমেটিক্স’ বিভাগের অধ্যাপক সাইমন বিলিঞ্জ বলেছেন, “কয়েক হাজার পরিচিত কিন্তু সম্পর্ক নেই এমন কাঠামোর এক ডেটাবেইজ থেকে যা যা সম্ভব সবকিছু শিখে এই সমস্যার সমাধান করেছে এআই।
“চ্যাটজিপিটি যেভাবে ভাষার ধরন শেখে, তেমনি এআই মডেলও এদের ডেটা অনুসারে পারমাণবিক বিন্যাসের ধরন শেখে।”
তাদের তৈরি ‘পিএক্সআরডিনেট’ নামের যন্ত্রটি হাজার হাজার পরিচিত উপাদানের ওপর প্রশিক্ষিত, যা এটিকে ১০ অ্যাংস্ট্রোনমের মতো ছোট স্ফটিকের কাঠামো বের করতে সাহায্য করেছে। এটি মানুষের চুলের চেয়ে হাজার গুণ পাতলা।
অ্যাংস্ট্রনম হচ্ছে, দৈর্ঘ্যের একটি ছোট একক, যা পারমাণবিক আকারের মতো ক্ষুদ্র দূরত্ব পরিমাপ করতে ব্যবহৃত হয়।
গবেষকরা বলছেন, পদার্থ বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে বড় এক অগ্রগতিকে চিহ্নিত করেছে এটি, যা গবেষকদের নাটকীয়ভাবে বিভিন্ন ন্যানোম্যাটিরিয়াল শনাক্ত করতে পেরেছে, যা প্রচলিত পদ্ধতিতে সম্ভব ছিল না।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এআইয়ের যে ব্যাপক অগ্রগতি হয়েছে তারও ঝলক মিলেছে এ উদ্ভাবনে। গবেষকরা বলেছেন, এ ধরনের উদ্ভাবন আগে অর্থাৎ এআই না থাকলে সম্ভব হত বলে মনে হয় না।
কলম্বিয়ার এ প্রকল্পের নেতৃত্ব দেওয়া গ্যাবে গুও বলেছেন, “আমি যখন মাধ্যমিকে ছিলাম তখন এই ক্ষেত্রটি এমন অ্যালগরিদম তৈরি করতে হিমশিম খাচ্ছিল যা বিষয়টি বুঝতে আমাদের সাহায্য করতে পারে।
“এখন আমাদের মতো বিভিন্ন গবেষণায় বিজ্ঞানীদের শক্তি বাড়ানো ও উদ্ভাবনকে নতুন স্তরে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে এআইয়ের বিশাল সক্ষমতার ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে।”
সোমবার ‘অ্যাব ইনিশিও স্ট্রাকচার সলিউশনস ফ্রম ন্যানোক্রিস্টালাইন পাউডার ডিফ্র্যাকশন ডেটা ভায়া ডিফিউশন মডেলস’ শিরোনামে গবেষণাপত্রটি প্রকাশ পেয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘নেচার ম্যাটিরিয়ালস’-এ।
কলম্বিয়া ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ‘মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং’ বিভাগের চেয়ারম্যান হড লিপসন বলেছেন, “আমাকে যে বিষয়টি বিস্মিত করে তুলেছে তা হলো পদার্থবিজ্ঞান বা জ্যামিতিতে তুলনামূলকভাবে কম জ্ঞান নিয়েও এআই এমন এক ধাঁধার সমাধান করতে শিখেছে, যা এক শতাব্দী ধরে গবেষকদের বিভ্রান্ত করেছে।”
“দীর্ঘমেয়াদি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে আছে এমন অন্যান্য অনেক ক্ষেত্রের জন্য ভবিষ্যতে কিছু ঘটতে চলেছে তারই লক্ষণ এটি।”