Published : 16 Jan 2025, 03:50 PM
পিপল ম্যাগাজিনের সেক্সিয়েস্ট ম্যান অ্যালাইভ খেতাব একাধিকবার পেয়েছেন এমন পুরুষ আছেন কেবল চারজন। তাদের একজন হচ্ছেন অভিনেতা ব্র্যাড পিট। এমন বিশ্বখ্যাত সুপুরুষের সঙ্গে ‘সম্পর্ক’ তৈরি করতে পারলে সেটি সম্ভবত অধিকাংশ নারীর জন্যই হাতে আকাশের চাঁদ পাওয়ার মতোই মনে হবে।
সেই চাঁদের জন্য সামান্য অর্থ খরচ তো করা যেতেই পারে। না?
এমনটাই ভেবেছিলেন ফরাসী নারী অ্যান। বেচারা ব্র্যাড অল্প সময়ের তুচ্ছ এক আর্থিক সংকটে পড়েছেন। আর সেজন্য তিনি নতুন প্রেমিককে পাঠিয়েছেন আট লাখ ৩০ হাজার ইউরো। বাংলাদেশি মুদ্রায় সাড়ে ১০ কোটি টাকা।
সবই ঠিক ছিল, কেবল কিবোর্ডের পেছনের মানুষটি ছিলেন না সত্যিকারের ব্র্যাড পিট!
অর্থ হারানোর পাশাপাশি এখন অ্যানকে বিদ্রুপের মুখেও পড়তে হয়েছে ফরাসি টেলিভিশনে।
বিদ্রুপের তীব্রতা এতাটাই ছিল যে, ফরাসি টেলিভিশন চ্যানেল ‘টিএফ১’-এ অ্যানকে নিয়ে করা অনুষ্ঠানটি কর্তৃপক্ষ প্রত্যাহার করে নিতে বাধ্য হয় বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিবিসি।
রোববার প্রচারিত টেলিভিশনের এক অনুষ্ঠানে ৫৩ বছর বয়সী ইন্টেরিয়র ডিজাইনার অ্যান হয়ে ওঠেন টক অফ দ্য কান্ট্রি। অ্যান বলেন, দেড় বছর ধরে জনপ্রিয় হলিউড অভিনেতা ব্র্যাড পিটের সঙ্গে সম্পর্কে ছিলেন তিনি।
এরপর ফরাসি এক ইউটিউব চ্যানেলে তিনি বলেছেন, আমি পাগল বা বোকা ছিলাম না। আমি কেবল এই পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে গেছি আর সেটা আমি স্বীকারও করেছি। আর, এমন ঘটনা কেবল আমার সঙ্গেই ঘটেছে, এমন তো নয়!”
এ ঘটনায় পিটের এক প্রতিনিধি মার্কিন সংবাদমাধ্যম ‘এন্টারটেইনমেন্ট উইকলি’কে বলেছেন, “এটি একটি ভয়াবহ বিষয়। সেলিব্রিটিদের সঙ্গে ভক্তদের ভাল সম্পর্কের সুযোগ নিচ্ছে এমন সব ঠগবাজ।”
এ কেলেঙ্কারি প্রকাশ্যে আসার পর থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের শত শত ব্যবহারকারী অ্যানকে উপহাস করেছেন। ব্রাড পিটের কারণে পুরো জীবনের সঞ্চয় হারিয়েছেন ও তিনবার আত্মহত্যার চেষ্টাও করেছেন বলে অ্যান এমন উপহাসের মুখে পড়েন।
অ্যান বলেছেন, তার অগ্নিপরীক্ষা শুরু হয় ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইনস্টাগ্রাম ডাউনলোডের পর থেকে। ওই সময় তিনি একজন ধনী উদ্যোক্তার সঙ্গে সংসার করছিলেন।
ইনস্টাগ্রামে অ্যকাউন্ট খোলার পর পিটের মা জেন এট্টা নামের একজন অ্যানের সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং বলেন, তার ছেলের জন্য ‘ঠিক অ্যানের মতো একজন নারীর প্রয়োজন’।
এরপরের দিন পিট বলে দাবি করা একজন অ্যানের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। আর এ লোকই অ্যানের জন্য বিপদ বয়ে আনেন। অ্যান বলেন, “সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নতুন বা এর সঙ্গে খুব একটা অভ্যস্ত না হওয়ায় আমি আসলেই জানতাম না আমার সঙ্গে কী ঘটছে।”
কথাবার্তার এক পর্যায়ে ব্র্যাড পিট বলে পরিচয় দেওয়া ওই প্রতারক অ্যানকে দামী বিভিন্ন উপহার পাঠাতে চেয়েছিলেন। তবে অভিনেত্রী অ্যাঞ্জেলিনা জোলির সঙ্গে বিয়েবিচ্ছেদের মামলার কারণে তার বিভিন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ হয়ে যাওয়ায় উপহারের ওপরে শুল্ক দিতে পারছেন না এমন কথা বলে অ্যানের কাছ থেকে নয় হাজার ইউরো চায় ‘প্রেমিক পিট’।
“আর বোকার মতো আমি সেই অর্থ দিয়েছি... যতবারই আমি তাকে সন্দেহ করেছি ততবারই সে আমার সন্দেহ দূর করতে পেরেছে,” বলেন অ্যান।
কিডনি ক্যান্সারের চিকিৎসার কথা বলে ভুয়া পিট অ্যানের কাছে যখন নগদ অর্থ চাইলেন তখন এই অর্থের পরিমাণ আরও বেড়ে গেল। ওই সময় অ্যানকে হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে থাকা ব্র্যাড পিটের একাধিক ছবি পাঠিয়েছিলেন প্রতারক। আর সেই ছবি তৈরি হয়েছে এআই ব্যবহার করে।
“এসব ছবি আমি ইন্টারনেটে খুঁজেছিলাম কিন্তু পাইনি। আমার মনে হয়েছে এসব ছবি সে কেবল আমার জন্যই তুলেছে,” বলেন অ্যান।
এরইমধ্যে অ্যান ও তার স্বামীর মধ্যে বিচ্ছেদ হয়ে যায় এবং অ্যানকে দেওয়া তার স্বামীর পুরো সাত লাখ ৭৫ হাজার অর্থই যায় ওই প্রতারকের পকেটে।
“ওই সময় আমি নিজেকে বুঝিয়েছি যে, ক্যান্সারমুক্তির পথে রয়েছেন এমন একজন মানুষের জীবন বাঁচাচ্ছি আমি,” অ্যান বলেন।
অ্যানের ২২ বছর বয়সী মেয়ে বলেন, “মাকে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে ‘বোঝানোর চেষ্টা করেছি। তবে মা এই প্রেমে ডুবে ছিলেন। মা কতটা সরল ছিল তা দেখে খারাপ লেগেছে আমার।”
এদিকে, ২০২৪ সালের জুনে অভিনেতা ব্র্যাড পিট ও ইনেস ডি রামন নিজেদের সম্পর্ককে প্রকাশ্যে আনেন তখন অ্যান এই সম্পর্ক শেষ করার সিদ্ধান্ত নেন।
‘বিশেষ এফবিআই এজেন্ট জন স্মিথ’ এর ছদ্মবেশে ধরেও অ্যানের কাছ থেকে আরও অর্থ আদায়ের চেষ্টা করে প্রতারকরা। এরপর এ বিষয়ে পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেন অ্যান। যা নিয়ে এখনও তদন্ত চলছে।
ফরাসি টেলিভিশনটি বলেছে, এসব ঘটনা অ্যানকে ভেঙে দিয়েছে ও তিনবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন তিনি।
“আমাকেই কেন এভাবে আঘাত করার জন্য বেছে নেওয়া হলো?” কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন অ্যান।
“এ মানুষগুলোর জাহান্নামের আগুনে পুড়ে মরা উচিৎ। আমাদের এসব প্রতারকদের খুঁজে বের করতে হবে। আমি আপনাদের কাছে অনুরোধ করছি, দয়া করে আমাকে তাদের খুঁজে পেতে সহায়তা করুন।”
অনেক অনলাইন ব্যবহারকারী অ্যানকে বিদ্রূপ করলেও অনেকে তার পক্ষও নিয়েছেন।
“আমি সমাজের কমিকের প্রভাব বুঝতে পারছি। তবে আমরা ৫০ বছর বয়সী একজন নারীর কথা বলছি যিনি ডিপফেইক ও এআইয়ের মাধ্যমে প্রতারিত হয়েছেন। আর এটি এমন একটি প্রযুক্তি যা আপনার বাবা-মা ও দাদা-দাদিরা বুঝতে পারবেন না,” অ্যানকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স পোস্ট করা অন্যতম জনপ্রিয় লেখা এটি।
ফ্রান্সের সংবাদমাধ্যম ‘লিবারেশন’-এর উপসম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে, অ্যান একজন ‘হুইসেলব্লোয়ার’ ছিলেন। তবে “তার আজকের জীবন সাইবারট্র্যাপে ভরা... এবং এআইয়ের অগ্রগতি এই পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করবে।”
আর, সত্যিকারের ব্যাড পিটের প্রতিনিধি বলেছেন, “যেসব সেলিব্রিটির সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কোনো অ্যাকাউন্ট নেই, ভক্তদের উচিৎ তাদের অনলাইন যোগাযোগে একেবারেই সাড়া না দেওয়া”।