Published : 09 Jun 2025, 05:34 PM
এখনও চূড়ান্ত হয়নি যুক্তরাষ্ট্র ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের মধ্যে শত কোটি ডলারের এআই ডেটা ক্যাম্পাস নির্মাণ প্রকল্প চুক্তি।
এ সংশ্লিষ্ট সূত্রদের বরাত দিয়ে রয়টার্স প্রতিবেদনে লিখেছে, বিশ্বের অন্যতম বড় ডেটা সেন্টার হাব গড়ে তোলার জন্য সংযুক্ত আরব আমিরাতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি ব্যবহার করে শত কোটি ডলারের চুক্তির বিষয়ে আলোচনা চলছে। তবে নিরাপত্তা নিয়ে চলমান উদ্বেগের কারণে এখনও চূড়ান্ত হওয়া থেকে অনেক দূরে চুক্তিটি।
গত মাসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের দুই দিনের আবুধাবি সফরের সময় বিশাল এক এআই ক্যাম্পাস প্রকল্পের ঘোষণা দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র ও উপসাগরীয় ধনী দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত। এ ক্যাম্পাসে থাকবে শক্তিশালী একাধিক ডেটা সেন্টার।
প্রস্তাবিত ২৬ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে তৈরি হওয়া এ প্রকল্পে অর্থায়ন করছে ‘জি৪২’ নামের এমিরাতি প্রযুক্তি কোম্পানি, যা দেশটির সরকারের সঙ্গে যুক্ত ও আরব আমিরাতে এআই শিল্প গড়ে তোলার নেতৃত্ব দিচ্ছে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে রয়টার্স।
মার্কিন চিপ নির্মাতা এনভিডিয়া, চ্যাটজিপিটি নির্মাতা ওপেনএআই, সিসকো ও ওরাকলের মতো প্রযুক্তি জায়ান্টের পাশাপাশি জাপানের সফটব্যাংক সংযুক্ত আরব আমিরাতভিত্তিক ‘জি৪২’-এর সঙ্গে মিলে প্রকল্পের প্রথম ধাপ তৈরি করছে। প্রকল্পের নাম ‘স্টারগেইট ইউএই’, যা অনলাইনে চালুর কথা রয়েছে ২০২৬ সালে।
রয়টার্স লিখেছে, উন্নতমানের এনভিডিয়ার এআই চিপ ব্যবহারের পরিকল্পনা রয়েছে এ প্রকল্পে। ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তারা এটিকে সফল এক উদ্যোগ হিসেবে তুলে ধরেছেন। কারণ উপসাগরীয় বিভিন্ন দেশকে চীনা প্রযুক্তির বদলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তির দিকে আগ্রহী করে তুলছে এ প্রকল্প।
তবে প্রকল্প সম্পর্কে জানে এমন পাঁচটি সূত্র রয়টার্সকে বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা এখনও নির্ধারণ করতে পারেননি কী ধরনের নিরাপত্তার শর্তে উন্নত এআই চিপ রপ্তানি হবে বা উপসাগরীয় রাষ্ট্রের সঙ্গে করা চুক্তি কীভাবে কার্যকর হবে। এ কারণে এখনও চূড়ান্ত হয়নি চুক্তিটি।
ট্রাম্প সফরের সময় আবুধাবি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তাদের জাতীয় নিরাপত্তা বিধিনিষেধ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মিলিয়ে নেবে তারা। যার মধ্যে থাকবে এমন সুরক্ষাব্যবস্থাও, যা যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি প্রযুক্তি অন্য কোথাও চলে যাওয়া বা অপব্যবহার হওয়া ঠেকাতে সাহায্য করবে।
ওই পাঁচটি সূত্রের মধ্যে চারটি সূত্রই বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা এখনও সন্দিহান যে চীনের সঙ্গে খুব ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রেখে চলেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত।
তারা বলেছেন, আমিরাত ঠিক কতটা বিশ্বাসযোগ্য ও নির্ভরযোগ্য কৌশলগত অংশীদার হতে পারে, সেটাই বড় প্রশ্ন। এ ধরনের উদ্বেগ সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন ও ট্রাম্প প্রশাসনের প্রথম মেয়াদের সময় থেকেই ছিল।
সূত্ররা বলেছেন, নতুন কোনও প্রমাণ সামনে এসেছে কি না তা জানাননি তারা। তবে বর্তমানে থাকা বিভিন্ন উদ্বেগের এখনও সমাধান হয়নি। ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের আপত্তি থাকার পরও চীনা হুয়াওয়ের ফাইভজি প্রযুক্তি চালুর কাজ এগিয়ে নিয়েছিল সংযুক্ত আরব আমিরাত ও অন্যান্য উপসাগরীয় দেশ।
সূত্র চারটি বলেছে, প্রশাসনের কিছু কর্মকর্তার ধারণা, আরব আমিরাত যতই চেষ্টা করুক না কেন, মার্কিন প্রযুক্তি হয়তো ওয়াশিংটনের শত্রুদের হাতে চলে যেতে পারে।
এ বিষয়ে মন্তব্যের জন্য হোয়াইট হাউসের একজন মুখপাত্র রয়টার্সকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে যেতে বললেও তাতে সাড়া দেয়নি সংস্থাটি। এদিকে, এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেনি সংযুক্ত আরব আমিরাতের সরকারও।
চারটি সূত্র বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসনের কাছে এ চুক্তি চূড়ান্ত করার জন্য কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা নেই। আবুধাবিকেও যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি নিয়ন্ত্রণ শর্তাবলী মেনে নিতে হবে। তবে এসব শর্ত পরিবর্তনের অনুরোধও করতে পারে দেশটি, যা প্রকল্পটির চূড়ান্ত অনুমোদনে বিলম্ব ঘটাচ্ছে।
দুটি সূত্র বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের এসব নিয়ন্ত্রণ শর্তাবলীর মানে হচ্ছে, ওই এআই ক্যাম্পাসে চীনা প্রযুক্তি ব্যবহার করা যাবে না এবং সেখানে চীনা নাগরিকদের কাজ করার ওপরও কিছু সীমাবদ্ধতা থাকবে।
চার সূত্র আরও বলেছে, প্রশাসন এখনও এ চুক্তি সম্পন্নের বিষয়ে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তবে তারা বলেছে, সংযুক্ত আরব আমিরাতের চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক নিয়ে উদ্বেগের কারণে রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট উভয় দলের মধ্যে কিছু বিরোধ রয়েছে।
‘স্টারগেইট ইউএই’ নামের এ প্রকল্প আগামী বছর চালু হওয়ার কথা, যেখানে ব্যবহৃত হবে এনভিডিয়ার প্রায় এক লাখ উন্নত চিপ। এই ১ গিগাওয়াট ক্ষমতার প্রকল্পে ব্যবহৃত হবে এনভিডিয়ার ‘গ্রেস ব্লাকওয়েল জিবি৩০০’ নামের সিস্টেম, যা বর্তমানে এনভিডিয়ার সবচেয়ে উন্নত এআই সার্ভার।
রয়টার্স লিখেছে, আকারে যুক্তরাষ্ট্রের ‘মেইন’ রাজ্যের চেয়ে ছোট হলেও সংযুক্ত আরব আমিরাত মধ্যপ্রাচ্যের শক্তিশালী একটি দেশ। কৌশলগত দিক থেকে সাবধানতার সঙ্গে কাজ করে দেশটি। চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলেছে তারা।