Published : 07 Jun 2024, 04:03 PM
বিশ্বে প্রতি বছর কয়েকশ কোটি টন প্লাস্টিক উৎপাদিত হয়ে থাকে, যার বিকল্প খোঁজা বর্তমানে অসম্ভব গুরুত্বপূর্ণ। এমন বাস্তবতায় তথাকথিত ‘সাসটেইনএবল’ প্লাস্টিক সমাধান হতে পারে না বলে সতর্ক করেছেন গবেষকরা।
‘র্যাডবউড ইউনিভার্সিটি’র গবেষক সারা গোনেলা ও ভিনসেন্ট ডি গোয়ের্ট সতর্ক করে বলেছেন, ‘সাসটেইনএবল প্লাস্টিক’ এই কঠিন সমস্যার দ্রুত সমাধান নয়, যেমনটা এর নির্মাতারা ভাবছেন।
বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘এনভায়রনমেন্টাল রিসার্চ লেটারস’-এ প্রকাশিত এ গবেষণার বিভিন্ন ফলাফলে ইঙ্গিত মেলে, এইসব ‘সাসটেইনএবল প্লাস্টিক’ যতটা মনে হয় ততটা পরিবেশবান্ধব না-ও হতে পারে।
প্লাস্টিকের ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তা অনেক বেশি পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে নোরিজ।
বিগত কয়েক বছর ধরে প্লাস্টিকের ব্যবহার কমানোর চেষ্টা চলছে। বিশেষ করে, রিসাইকল বা পুনর্ব্যবহারযোগ্য প্রযুক্তি, বায়োডিগ্রেডেবল (জৈব) প্লাস্টিক ও প্লাস্টিকের উপর কর আরোপের মাধ্যমে প্লাস্টিক ব্যবহারের প্রতি ভোক্তাদের আচরণ পরিবর্তন করার প্রচেষ্টা করা হয়েছে। আর এসব প্রচেষ্টা অবদান রেখেছে ‘সাসটেইনএবল প্লাস্টিক’ ধারণায়।
এ ধারণার প্রতি আগ্রহী হয়ে এক গবেষণা কাযক্রম চালান গবেষক ডি গোয়ের্ট ও গোনেলা।
“সাসটেইনএবল বা টেকসই কিছু বলার অর্থ এটি পরিবেশের উপকার করে,” বলেছেন গোনেলা।
“আমাদের গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, এটি কেবল স্বল্প পরিসরে লাভজনক। এর সর্বশেষ পণ্যটি বিশেষ কিছু কারণে আরও টেকসই হতে পারে। তবে সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিষয়গুলো বিবেচনায় নিলে এর অনেক বেশি খারাপ প্রভাব থাকার ভয়ও আছে।”
একটি উদাহরণ হল— তেলভিত্তিক প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধ করে বায়োমাস-ভিত্তিক বিভিন্ন প্লাস্টিক ব্যবহার করার চাপ। “বায়োমাস ব্যবহারের বিষয়টি এখনও অনেক বেশি শক্তির ব্যবহার ও জীবাশ্ম জ্বালানির উপর নির্ভর করে,” বলেছেন ডি গোয়ের্ট।
“এছাড়াও বায়োমাসের বাড়তি চাহিদার চাপ নিম্ন আয়ের দেশগুলোতে জমির ওপর পড়তে পারে এবং এতে করে সেসব দেশের খাদ্যের উৎপাদন ও গুণগত মানের খারাপ প্রভাব পড়তে পারে।”
“অনেক ক্ষেত্রে মেডিকেল যন্ত্রপাতি ও সোলার প্যানেলের মতো প্রয়োজনীয় বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশনের জন্য সবচেয়ে টেকসই পদ্ধতিগুলো এখনও প্লাস্টিকের ওপরই নির্ভরশীল,” বলেছেন ডি গোয়ের্ট।
গবেষকরা সতর্ক করে বলেন, প্লাস্টিককে টেকসই আখ্যা দেওয়ার বিষয়টি মানুষদেরকে এটি ব্যবহারে অসতর্ক করতে পারে। “লোকজন যদি বিশ্বাস করে যে, বায়োডিগ্রেডেবল বা জৈব-ভিত্তিক বিভিন্ন প্লাস্টিক পরিবেশগতভাবে ভাল তবে প্লাস্টিকের ব্যবহার কমাতে তাদের আগ্রহে ভাটাও পড়তে পারে,” বলেছেন গোনেলা।
“অনেক ভোক্তাই জানেন না যে, বায়োডিগ্রেডেবল বিভিন্ন প্লাস্টিক জৈবভিত্তিক না-ও হতে পারে। এর ফলে বর্জ্য আলাদা করার ক্ষেত্রে ভুল করার ভয় থেকে যায়।”
গবেষণার এসব ফলাফল জাতিসংঘের জন্যও একটি সতর্কবার্তা, যেখানে প্লাস্টিক দূষণ ঠেকাতে একটি সার্বিক চুক্তি তৈরিতে কাজ করছে সংস্থাটি।
“জাতিসংঘের কাছ থেকে শীগগরিই একটি চুক্তি আশা করা হচ্ছে। তবে, জাতিসংঘের অনেক সদস্য দেশেরই ধারণা জৈব-ভিত্তিক প্লাস্টিক পরিবেশবান্ধব।” বলেছেন গোনেলা।
“কীসের ভিত্তিতে প্লাস্টিককে পরিবেশবান্ধব বলা যায় তার একটি স্পষ্ট সংজ্ঞা না থাকলে অন্যদের মতো একই ফাঁদে পড়তে পারে জাতিসংঘ।”
ডি গোয়ের্ট জোর দিয়ে বলেছেন, যতক্ষণ পর্যন্ত যেসব বিষয় বিবেচনা করে কোনো কিছুকে টেকসই বা পরিবেশবান্ধব বলা যায়, তার সবগুলো শর্ত পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আমাদের তথাকথিত ‘সাসটেইনএবল’ প্লাস্টিকের উপর নির্ভর করার বিষয়ে সতর্ক হওয়া উচিত।