Published : 26 May 2025, 05:25 PM
সৃজনশীল বা সৃষ্টিশীল শিল্পের জগতে বড় পরিবর্তন ঘটে গিয়েছে। শক্তিশালী বিভিন্ন এআই টুলের কারণে এখন যে কেউ কয়েক সেকেন্ডেই ছবি, গান বা লেখা তৈরি করতে পারেন।
এজন্য আগের মতো দক্ষতা বা সময়ের দরকার হয় না, কেবল কিছু নির্দেশনা দিলেই এআই বাকিটা তৈরি করে দিচ্ছে।
তবে পেশাদার শিল্পী ও কনটেন্ট নির্মাতাদের জন্য এর মানে কী? এ বিষয়টি সম্পর্কে কিছু ধারণা মিলেছে ‘স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি’ ও ‘যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া, লস অ্যাঞ্জেলেস’ বা ইউসিএলএ-এর গবেষকদের করা নতুন এক গবেষণায়। এতে উঠে এসেছে, এটি একটি মিশ্র চিত্র অর্থাৎ ভালো ও খারাপ দুটোই রয়েছে এর মধ্যে।
কোনো একটি বড় অনলাইন ইমেজ মার্কেটপ্লেস যখন এআইনির্ভর শিল্পকর্ম বিক্রি করতে দেয়, তখন কী ঘটে এ গবেষণায় তা দেখেছেন গবেষকরা। এমন পরিবর্তনের আগে সব ছবি মানুষই তৈরি করত, যেমন শিল্পী, ফটোগ্রাফার বা ডিজাইনাররা।
তবে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে ওপেনএআইয়ের নির্মিত চ্যাটবট চ্যাটজিপিটি’র মাধ্যমে এআইয়ের দরজা খুলে দেওয়ার পর সবকিছু বদলে গেল। প্লাটফর্মে এআইয়ের মাধ্যমে তৈরি ছবির সংখ্যা অনেক বেড়ে গেল ও নতুন বিক্রেতারা সাইটে যোগ দিতে শুরু করলেন। আর ক্রেতারাও নতুন ধরনের ছবি পছন্দ করলেন।
একই সময়ে ভিন্ন রূপেরও দেখা মিলল, অনেক মানব শিল্পী ও নির্মাতা প্ল্যাটফর্মটি ছেড়ে যেতে শুরু করলেন বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজ।
‘স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি’র অধ্যাপক স্যামুয়েল গোল্ডবার্গ বলেছেন, এ গবেষণায় ইঙ্গিত মিলেছে, জেনারেটিভ এআই কেবল নির্মাতাদের সাহায্যই করছে না, বরং তাদের জায়গাও দখল করে নিচ্ছে।
তিনি বলেছেন, মানুষের কাজের ওপর প্রশিক্ষিত হয় এআই অর্থাৎ মানুষের তৈরি কাজ শিখে তারপর এরা এমন ছবি বানায় যেগুলো মানুষ আরও বেশি পছন্দ করে। ফলে কমে যাচ্ছে মানব শিল্পীদের তৈরি শিল্পের বিক্রি।
যেসব মার্কেটপ্লেসে এআইনির্ভর ছবি বিক্রি করতে দিয়েছিল সেখানে প্রতি মাসে নতুন ছবির সংখ্যা বেড়েছে ৭৮ শতাংশ। এ নতুন কনট্রিবিউটরদের অনেকেই এআই টুল ব্যবহার করছিলেন।
অন্যদিকে মানব শিল্পীদের প্লাটফর্মে ছবির সংখ্যা কমে যায় ২৩ শতাংশ। কারণ অনেকেই প্ল্যাটফর্মে তাদের কাজ বিক্রি করা বন্ধ করে দিয়েছেন। তবে এক্ষেত্রে পুরো প্ল্যাটফর্মে বিভিন্ন ছবির মানও ভালো হয়েছে, এমনকি যেগুলো মানুষ বানিয়েছে সেগুলোর বেলায়ও।
গবেষকরা বলছেন, এর কারণ হচ্ছে প্রতিযোগিতা বেড়ে যাওয়ায় দুর্বল শিল্পীরা সরে যান আর যারা ভালো কাজ করেন তারা প্লাটফর্মে থেকে যান ও নতুন পরিস্থিতির সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নেন। তার ওপরে, এআইনির্ভর শিল্প কেবল আগের স্টাইলই নকল করেনি, বরং নতুন ধরনের বৈচিত্র্যও এনেছে। যার ফলে ছবির ধরন ও মান আরও উন্নত হয়েছে।
গবেষণায় উঠে এসেছে, শিল্পের বাজারে এআই আসার পর বিক্রি বেড়েছে ৩৯ শতাংশ। তবে মূল বিষয় হচ্ছে, মানুষ বেশি ছবি কিনতে শুরু করলেও মানুষের বানানো ছবির বদলে এআইয়ের মাধ্যমে তৈরি ছবিই বেছে নিচ্ছেন তারা। যার মানে, এআই কনটেন্ট সরাসরি মানুষের তৈরি কনটেন্টের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করছে এবং অনেক ক্ষেত্রে তা প্রতিস্থাপনও করছে।
বেশি পছন্দ, ভালো মান, আর কম দাম– ভোক্তাদের জন্য এটি হয়তো ভালো খবর মনে হতে পারে। তবে শিল্পীদের জন্য, বিশেষ করে যারা নিজের তৈরি কাজ বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন তাদের জন্য এটি উদ্বেগের বিষয়।
গোল্ডবার্গ সতর্ক করে বলেছেন, মানুষের বানানো শিল্পকর্ম হারিয়ে যেতে থাকলে আমরা কিছু মূল্যবান জিনিস হারাতে পারি। যেমন মানুষের সৃজনশীলতা, অনুভব ও সংস্কৃতির মতো বিষয়।
“আমরা বিশ্বাস করি মানুষের সৃজনশীলতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, এআই যদি এসব বাজার দখল করে নেয় তাহলে মানুষের সৃষ্টিশীল কাজের জায়গা কমে যাবে।”
তবে গবেষকরা বলছেন, এআই নিষিদ্ধ করাই সমাধান নয়। আমাদের দরকার সব মানুষের জন্য এআই টুলের ন্যায্য ব্যবহার নিশ্চিত করা। পাশাপাশি মানব শিল্পীদের সহায়তার জন্য আরও ভালো উপায় খুঁজে বের করা।