Published : 12 May 2025, 03:33 PM
পৃথিবীর কক্ষপথে অনিয়ন্ত্রিতভাবে আবর্তন করা সোভিয়েত মিশনের অন্তত একটি ভাঙা অংশ সম্ভবত পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে ফিরেছে।
ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি বা ইএসএ বলেছে, অর্ধ শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে পৃথিবীর কক্ষপথে আটকে থাকার পর সোভিয়েত যুগের মহাকাশযানের ধ্বংসাবশেষ পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে পুনরায় প্রবেশ করেছে।
‘কসমস-৪৮২’ নামে পরিচিত মহাকাশযানটি ১৯৭২ সালের ৩১ মার্চ কাজাখস্তানের বাইকোনুর কসমোড্রোম থেকে ‘মোলনিয়া-৮কে৭৮এম’ রকেটের মাধ্যমে উৎক্ষেপিত হয়েছিল।
এটি কখনই পৃথিবীর কক্ষপথ থেকে বের হতে পারেনি এবং রকেটটি চারটি অংশে বিভক্ত হয়ে যায়, যা পাঁচ দশকেরও বেশি সময় ধরে পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে চলেছে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিবিসি।
‘ইইউ স্পেস সার্ভেইল্যান্স অ্যান্ড ট্র্যাকিং সেন্টার’ বা এসএসটি বলেছে, শনিবার গ্রিনিচ মান সময় সকাল ৬টা ১৬ মিনিটে ‘সম্ভবত’ নভোযানের একটি খণ্ড পুনরায় পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করেছে।
তবে ধ্বংসাবশেষটি পৃথিবীর মাটিতে পড়েছে নাকি বায়ুমণ্ডলেই পুড়ে গেছে সে বিষয়টি এখনও স্পষ্ট নয়। একইসঙ্গে ধ্বংসাবশেষটি ঠিক কোন এলাকার বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করেছে তা-ও এখনও স্পষ্ট নয়।
আরও খবর
সেই সোভিয়েতও নেই, নভোযানও ফিরছে না সেই চেহারায়
বিবিসি লিখেছে, নভোযানটির ধ্বংসাবশেষের এই পুনঃপ্রবেশ সম্পর্কে বিশেষজ্ঞদের অনেক কিছুই জানা নেই। তবে পৃথিবীর ৭০ শতাংশ অংশ জুড়ে সমুদ্র থাকার কারণে এটি যদি ভূপৃষ্ঠে আছড়ে পড়েও তবুও এর কারণে ক্ষতির আশঙ্কা কম।
ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি’র জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষক স্টেইন লেমনস বলেছেন, “এ মহাকাশের ধ্বংসাবশেষের মাধ্যমে কোনো ক্ষতি হওয়ার চেয়ে লটারি জেতার সম্ভাবনা বরং বেশি।”
শুক্র গ্রহের অতিমাত্রার তাপ ও চাপ সহ্য করার জন্য তৈরি করা হয়েছিল মহাকাশযানটির অবতরণ ক্যাপসুলটিকে। যার মানে হচ্ছে, এটি ছিল যথেষ্ট মজবুত ও টেকসই। এ কারণে বিশেষজ্ঞদের অনুমান, পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে অনিয়ন্ত্রিতভাবে ঢোকার পরও টিকে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে এর।
তবে কসমস ৪৮২-এর প্যারাসুট ব্যবস্থা মূলত শুক্র গ্রহে অবতরণের সময় গতি কমানোর জন্য তৈরি হয়েছিল, তা মহাকাশে ৫০ বছরের বেশি সময় থাকার কারণে সেটি নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
লেমনস বলেছেন, “মানুষের তৈরি বিভিন্ন বস্তুর পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে পুনঃপ্রবেশের বিষয়টি প্রায়ই ঘটে।”
তিনি বলেন, বড় আকারের মহাকাশযানের ক্ষেত্রে এমনটি প্রায় প্রতি সপ্তাহেই ঘটে, আর ছোটগুলোর ক্ষেত্রে এ ঘটনা প্রতিদিনই ঘটে। তবে এসব বস্তু সাধারণত মাটিতে পৌঁছানোর আগেই পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের সঙ্গে সংঘর্ষের ফলে তীব্র তাপে পুড়ে যায়।
স্নায়ুযুদ্ধের সময় মহাকাশ প্রতিযোগিতার অংশ হিসেবে সোভিয়েত ইউনিয়ন যেসব মিশন চালু করেছিল, তার অনেক তথ্যই গোপন রাখা হতো। ফলে ‘কসমস-৪৮২’ মিশন সম্পর্কে বিস্তারিত কখনই প্রকাশ করা হয়নি।
মহাকাশ গবেষণার ইতিহাসে একটি উল্লেখযোগ্য ব্যর্থতা হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে এই মিশন।