Published : 21 May 2025, 02:44 PM
বিশ্বে প্রথমবারের মতো ফ্রান্স থেকে সুইজারল্যান্ড পর্যন্ত অ্যান্টিম্যাটার পরিবহন করেছেন বিজ্ঞানীরা।
এজন্য শিপিং কন্টেইনার তৈরি করেছেন ইউরোপের নিউক্লিয়ার রিসার্চ অর্গানাইজেশন বা ‘সার্ন’-এর বিজ্ঞানীরা, যার মাধ্যমে এই প্রথম ল্যাবরেটরি থেকে অ্যান্টিম্যাটার বাইরে পরিবহন করা সম্ভব হয়েছে বলে দাবি তাদের।
ইউরোপীয় গবেষণা কেন্দ্রের দলটি দুই মিটার দীর্ঘ এক কন্টেইনমেন্ট ডিভাইস তৈরি করেছে এবং সফলভাবে ৪ কিলোমিটার পর্যন্ত অ্যান্টিম্যাটার পরিবহন করে তারপর সেটি আবার ল্যাবরেটরিতে ফিরিয়ে এনেছে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে ব্রিটিশ দৈনিক ইন্ডিপেনডেন্ট।
অ্যান্টিম্যাটার এমন একটি পদার্থ, যা সাধারণ পদার্থের বিপরীতে কাজ করে। আশপাশের সব কিছু যেমন বস্তুর গঠন হয় অ্যাটম দিয়ে, অ্যান্টিম্যাটার ঠিক তেমনই, তবে এতে সব কিছুর বিপরীতে চার্জ থাকে।
যেমন– সাধারণ পদার্থে ইলেকট্রন নেগেটিভ ও প্রোটন পজিটিভ চার্জ ধারণ করে। তবে অ্যান্টিম্যাটারে অ্যান্টি-ইলেকট্রন বা পজিটিভ চার্জ ও অ্যান্টি-প্রোটন বা নেগেটিভ চার্জ থাকে।
গবেষকরা বলছেন, প্রথমবারের মতো এমন একটি প্রদর্শনী অ্যান্টিম্যাটারকে ইউরোপের বিভিন্ন ল্যাবরেটরি থেকে পাবলিক রোড নেটওয়ার্কের মাধ্যমে পরিবহন করার পথ খুলে দিয়েছে।
জার্মানির ‘হেইনরিখ হেইন ইউনিভার্সিটি ডুসেলডর্ফ’-এ অত্যাধুনিক এক সুবিধা রয়েছে, যা সার্ন থেকে প্রায় আটশ কিলোমিটার দূরে। এটিই হতে চলেছে সার্ন থেকে অ্যান্টিম্যাটার গ্রহণকারী প্রথম জায়গা।
মহাকাশ ও মহাবিশ্ব বোঝার জন্য অ্যান্টিম্যাটার নিয়ে গবেষণার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। তবে পৃথিবীতে এমন কেবল হাতে গোনা কয়েকটি ল্যাবরেটরি রয়েছে, যা এটি তৈরি করতে পারে।
অ্যান্টিম্যাটার তৈরি করতে হলে আলোর গতির কাছাকাছি গতিতে চলা বিভিন্ন কণাকে একটি স্থির লক্ষ্যবস্তুর সঙ্গে সংঘর্ষের প্রয়োজন এবং পরে এটিকে কন্টেইনারে আটকে রাখতে চুম্বক ব্যবহৃত হয়।
এসব চৌম্বকীয় ট্যাপ বা ফাঁদ অনেক বিদ্যুৎ ব্যবহার করে এবং অ্যান্টিম্যাটার যাতে সাধারণ পদার্থের সঙ্গে না মেশে এমনকি ধুলোও স্পর্শ করে নষ্ট হয়ে না যায়, সেজন্য একটি বিশেষ পরিবেশও প্রয়োজন।
এ সমস্যা বা পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠার জন্য দুই মিটার লম্বা একটি কন্টেনমেন্ট ডিভাইস তৈরি করেছে ইউরোপীয় গবেষণা কেন্দ্রের দলটি, যা ট্রেলারটির পেছনে অ্যান্টিম্যাটার পরিবহন করতে এবং সার্ন ক্যাম্পাসের আশপাশে ৪০ কিমি/ঘণ্টার বেশি গতিতে চালাতে পেরেছে তারা।
‘প্রোটন ট্রান্সপোর্ট ফ্রম দ্য অ্যান্টিম্যাটার ফ্যাক্টরি অফ সার্ন’ শিরোনামে গবেষণাপত্রটির ফলাফল প্রকাশ পেয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘নেচার’-এ।
গবেষণায় উঠে এসেছে, “আমরা আমাদের পরীক্ষামূলক এলাকার অ্যান্টিম্যাটার ফ্যাক্টরি থেকে আটকে থাকা বিভিন্ন প্রোটন একটি ট্রাকে স্থানান্তরিত করেছি এবং সেগুলোকে সার্ন-এর মেরিন সাইটে পরিবহন করেছি, যেখানে চার ঘণ্টা ধরে বাইরের কোনো শক্তি ছাড়া স্বতন্ত্রভাবে কার্যক্রম পরিচালনা ও প্রোটন স্থানান্তর করা হয়েছে এবং এতে কোনও ক্ষতি হয়নি।
“এভাবে আমরা নিশ্চিত হয়েছি, অ্যান্টিম্যাটার ফ্যাক্টরির কাছাকাছি কম শব্দওয়ালা ল্যাবরেটরিতে এসব কণাকে স্থানান্তর করা সম্ভব এবং ট্রাকে একটি পাওয়ার জেনারেটর ব্যবহার করে ইউরোপের বিভিন্ন ল্যাবরেটরিতেও তা পৌঁছানো সম্ভব।”
সার্ন ক্যাম্পাসের আশপাশে অ্যান্টিম্যাটার বহন করার সময় ট্রাকটি যে রুটটি নিয়েছে তার এক মানচিত্রে দেখা গিয়েছে, ফ্রান্স থেকে সুইজারল্যান্ড হয়ে আবার ল্যাবরেটরিতে ফিরে এসেছে এটি।
বিজ্ঞানীরা বলেছেন, পরিবহনের এই কৃতিত্ব “নির্ভুল অ্যান্টিম্যাটার গবেষণায় এক নতুন যুগের” সূচনা করেছে।