Published : 21 Apr 2024, 02:40 PM
জনপ্রিয় ভিডিও শেয়ারিং অ্যাপ টিকটকে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার দিকে আরও এক ধাপ এগিয়ে গেল মার্কিন কংগ্রেস।
শনিবার দ্বিতীয়বারের মতো চীনা মালিকানাধীন অ্যাপটির ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়াকে আইনে পরিণত করার প্রচেষ্টা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ‘হাউজ অফ রিপ্রেজেন্টেটিভস’, যেখানে অ্যাপটিকে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তায় হুমকি হিসেবে দাবি করে আসছেন আইনপ্রণেতারা।
মার্কিন হাউজে বিলটির পক্ষে ভোট পড়েছে ৩৬০-৫৮। যেখানে উল্লিখিত একটি শর্তে টিকটকের মালিক কোম্পানি বাইটড্যান্সকে এক বছরের মধ্যে কোম্পানি বিক্রি করে দেওয়ার বাধ্যবাধকতা আছে, না হলে যুক্তরাষ্ট্রের সকল অ্যাপ স্টোর থেকে অ্যাপটি সরিয়ে ফেলা হবে। তবে, এর পরও ব্যবহারকারীদের জন্য অন্যান্য উৎস থেকে অ্যাপে প্রবেশ করার সুযোগ আগের মতোই থাকবে।
তবে ধারণা করা হচ্ছে, বাইটড্যান্সের অ্যাপটি বিক্রি করে দেওয়ার যে কোনও ধরনের প্রচেষ্টা আটকে দিতে পারেন চীনা কর্মকর্তারা।
ব্রিটিশ দৈনিক ইন্ডিপেন্ডেন্টের প্রতিবেদন অনুযায়ী, হাউসে শনিবারের অধিবেশনটি ছিল ইউক্রেইন, ইসরায়েল ও তাইওয়ানকে সামরিক সহায়তার উদ্দেশ্যে একটি সম্পূরক বৈদেশিক সহায়তা প্যাকেজ চালুর প্রচেষ্টার অংশ হিসাবে সমন্বিত পাঁচটি আইন পাস করার এক বিরল প্রচেষ্টা।
এর অংশ ছিল টিকটকের বিলটিও, যা পাস করার পক্ষে ছিলেন মার্কিন হাউজের দুই দলের অনেক সদস্যই। আর এর মধ্যে ছিল রাশিয়া ও ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার বিষয়টিও।
শনিবারের অধিবেশনে আরেকটি বিষয় নিয়ে কথা হয়েছে, তা হল অভিবাসন বিল, যার বেশিরভাগক্ষেত্রে মিল রয়েছে গত বছর রিপাবলিকান হাউজের পাস করা ‘এইচ আর ২’ বিলের সঙ্গে।
মার্কিন হাউজে টিকটকের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি বা একে চীনা মালিকানা থেকে সরে আসতে বাধ্য করার দ্বিতীয় প্রচেষ্টা ছিল এটি, যেখানে আইনপ্রণেতারা দাবি করে আসছেন, চীনের জাতীয় নিরাপত্তা আইনের কারণে ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির কর্মকর্তারা আমেরিকানদের স্পর্শকাতর ডেটায় প্রবেশের সুযোগ পাচ্ছেন। তবে, এই যুক্তির পক্ষে এখনও জনসমক্ষে কোনও নির্ভরযোগ্য প্রমাণ উঠে আসেনি বলে প্রতিবেদনে লিখেছে ইন্ডিপেন্ডেন্ট।
এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও ইঙ্গিত দিয়েছেন, টিকটকে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার আইনী নথিপত্র তার ডেস্কে পৌঁছালেই তিনি এতে স্বাক্ষর করে দেবেন।
“তারা আইনটি পাস করলেই আমি এতে স্বাক্ষর দেব,” মার্চে সংবাদকর্মীদেরকে বলেছিলেন তিনি। যেহেতু সিনেটে দুই দলের নেতৃস্থানীয় পর্যায়ের নেতারা এখন এর পক্ষে প্রকাশ্যে সমর্থন জানাচ্ছেন, তাই বিলটি পাস হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
বাইডেন বিলটিকে আইনে পরিণত করার নথিতে স্বাক্ষর করলে কোম্পানিটির জন্য নতুন ক্রেতা খুঁজতে বা বিষয়টি আদালতে চ্যালেঞ্জ জানাতে ১২ মাসের সময় পাবে বাইটড্যান্স। এদিকে, বিলটি পাস হলে কোম্পানি যে মামলা করবে, তা এক রকম নিশ্চিত। এর আগে অ্যাপটি নিষিদ্ধ করার প্রচেষ্টাটি এসেছিল ট্রাম্প প্রশাসনের আমলে।
গত মাসে ব্যবহারকারীদের উদ্দেশ্যে পোস্ট করা একটি ভিডিও’তে টিকটকের সিইও শউ জি চিউ জোর দিয়ে বলেছেন, তিনি এ আইনের বিপক্ষে লড়ে যাবেন। এমনকি কংগ্রেসকে উদ্দেশ্য করে প্ল্যাটফর্মে একটি ঝুঁকিপূর্ণ প্রচারণাও চালায় কোম্পানিটি, যেখানে এই আইনের বিপক্ষে স্থানীয় প্রতিনিধিদেরকে অভিযোগ করার আহ্বান জানানো হয় ব্যবহারকারীদের।
প্ল্যাটফর্মটিতে ছড়িয়ে থাকা কোম্পানির কর্মীদের তথ্য অনুসারে, টিকটকের এমন স্টান্টবাজির পর মাত্র এক দিনেই যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন দপ্তরে কলের বন্যা বয়ে গিয়েছিল যা সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন মার্কিন সরকারি দপ্তরে এত বেশি কল আসার সবচেয়ে বড় ঘটনা। তবে আইনপ্রণেতাদের কেউ কেউ বলেছেন, এমন প্রচেষ্টায় তারা বিরক্ত হয়েছেন, যার ফলে কোম্পানির হিতে বিপরীত ঘটার ঝুঁকি বেড়ে গিয়েছে।
“আমরা এ লড়াই থামাবো না আর আপনাদের পক্ষে কথা বলে যাবো,” মার্চে ব্যবহাকারীদের উদ্দেশ্যে বলেছেন চিউ।
“আমরা নিজেদের সর্বাত্মক চেষ্টা অব্যাহত রাখব। এর মধ্যে রয়েছে আমাদের আইনি অধিকার ব্যবহার করার বিষয়টিও, যার মাধ্যমে আমরা যে আপনাদের জন্য এ অসাধারণ প্ল্যাটফর্মটি বানিয়েছি, সেটিকে রক্ষা করা যায়।”