Published : 07 Oct 2024, 06:13 PM
স্কুল, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হোমওয়ার্ক ও অ্যাসাইনমেন্টের বেলায় মাইক্রোসফট ওয়ার্ডের বিকল্প নেই। তবে, কাজের চাপে অনেক সময়ই এর বিভিন্ন ফিচারের কথা মাথায় থাকে না, আবার অনেকে কিছু লুকোনো ফিচার নাও জেনে থাকতে পারেন।
এমন পরিস্থিতির জন্যই শিক্ষার্থীদের জন্য কিছু টিপস নিয়ে নির্দেশনামূলক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে প্রযুক্তিবিষয়ক সাইট হাও-টু গিক। চলুন জেনে নেওয়া যাক এই পাঁচ টিপসের বিস্তারিত।
অটোসেইভ
ধরুন, পিসিতে কাজ করছেন এমন সময় অপ্রত্যাশিতভাবে সেটি ‘হ্যাং’ হয়ে গেল, বা এমএস ওয়ার্ড ‘ক্রাশ’ করল। পুনরায় সব চালু করে দেখলেন, কয়েক ঘণ্টা সময় নিয়ে করা কাজটি হারিয়ে গেছে, কেমন লাগবে?
এমন পরিস্থিতি এড়াতে নিশ্চিত করুন ফাইলের ওপরে ‘অটোসেইভ’ অপশনের টগলটি চালু করা আছে।
পাশাপাশি, টগলটি স্বয়ংক্রিয়ভাবেই সবসময় চালু রাখতে সেটিংয়ে পরিবর্তন করে নিতে পারেন। প্রথমে ‘ফাইলস’ অপশনে যান, এরপর ‘অপশনস’-এ ক্লিক করুন। পপ-আপ উইন্ডো থেকে ‘সেইভ’ ট্যাব বেছে নিন। এরপর, ‘অটোসেইভ ফাইলস স্টোরড ইন দ্য ক্লাউড বাই ডিফল্ট’ লেখা বাক্সে টিক চিহ্ন দিয়ে দিন। এরপর থেকে ফাইল বা লেখা হারিয়ে ফেলার ভয় অনেকটাই কমবে।
পেইজ ব্রেক রপ্ত করুন
কোনো লেখা লিখতে বসে, দুটি প্যারার মধ্যে স্পেইস বা জায়গার জন্য অনেকেই এন্টার ব্যবহার করেন। এটি ছোট এক দুই পৃষ্ঠার লেখার বেলায় কাজ করলেও, বড় অ্যাসাইনমেন্ট, বা থিসিস পেপারে তেমন কাজ করবে না। বড় কনটেন্ট লিখতে গিয়ে শুধু এন্টার প্রেস করে প্যারার মধ্যে ব্রেক দিলেও, পরবর্তীতে এডিটিং বা প্রুফ রিডিংয়ে বেরিয়ে আসা ভুল সংশোধন করতে সমস্যা পোহাতে পারেন।
ঠিক এমন সময়ই ‘ব্রেকস’ ফিচারটি কাজে আসে। ওয়ার্ডে দুই প্রকারের ব্রেক রয়েছে, একটি হল পেইজ ব্রেক, আরেকটি সেকশন ব্রেক।
পেইজ ব্রেক-এর মাধ্যমে ওয়ার্ডকে নির্দেশ দেওয়া যায় বর্তমান পৃষ্ঠা শেষ করে নতুন পৃষ্ঠা শুরু করার জন্য। এন্টার বোতাম অনেকবার চেপে এ কাজ করার তুলনায় এটি অনেক ভালো পন্থা।
অন্যদিকে সেকশন ব্রেক, একটি লেখা ভাগ করে ফেলে, যেখানে প্রতি সেকশনে আলাদা ফরম্যাটিং করা যায়। অর্থাৎ, একই কনটেন্টের মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন ফরম্যাট, পেইজ লে আউট বা দুই ধরনের পেইজ নম্বর যোগ করার জন্য এটি কাজে আসতে পারে।
কোনো লেখার ব্রেক যোগ করা খুবই সহজ কাজ। প্রথমে, যে জায়গায় ব্রেক যোগ করতে চান সেখানে মাউস কারসর নিন। এরপর, ওয়ার্ড ফাইলের ওপর থেকে ‘লেআউট’ ট্যাব বেছে নিন, ‘ব্রেক’ অপশনে ক্লিক করে সেখান থেকে পেইজ ব্রেক বা সেকশন ব্রেক বেছে নিতে পারবেন।
ডিফল্ট হেডিং স্টাইল আপডেট করুন
স্কুল কলেজের জন্য যে কোনো লেখার বেলায় ‘হেডিং স্টাইল’ অপরিহার্য বিষয়। এটি ফাইলে আলাদা স্ট্রাকচার যোগ করে এবং পাঠককে দ্রুত বিভিন্ন সেকশনে নিয়ে যেতেও সাহায্য করে। পাশাপাশি, কেউ থিসিসের কাজ করতে থাকলে হেডিং স্টাইল প্রয়োজন হবেই। কারণ, হেডিং স্টাইল যোগ করা থাকলে খুব সহজেই স্বয়ংক্রিয় ‘টেবল অফ কনটেন্ট’ তৈরি করে নেওয়া যায়।
মাইক্রোসফট ওয়ার্ডে ডিফল্ট হেডিং স্টাইল রয়েছে, যা খুব সহজেই ওপরের হোম ট্যাব থেকে বেছে নেওয়া যাবে। তবে, অনেক সময় ডিফল্ট হেডিং স্টাইল স্কুল বা কলেজের ফাইলের বেলায় কাজ নাও করতে পারে। এমন হলে হেডিং স্টাইল কাস্টমাইজও করে নিতে পারবেন।
হোম ট্যাব থেকে, স্টাইলস অপশনে যে হেডিং এডিট করতে চান তার ওপরে ডান ক্লিক করুন। এরপর ‘মডিফাই’ অপশনটি বেছে নিলে একটি নতুন উইন্ডো চালু হবে। এখানে হেডিংয়ের লেখা, রং, আকার, ফন্ট সবকিছু পরিবর্তন করে নিতে পারবেন।
পরবর্তীতে ব্যবহারের জন্য এ পরিবর্তন সেইভ করে রাখতে ‘নিউ ডকুমেন্টস বেইসড অন দিস টেমপ্লেট’ অপশনে চাপুন। এরপর ‘ওকে’ অপশনে চাপুন।
ফোকাস মোড
একদিনের মধ্যে পাঁচ হাজার শব্দের রচনা লিখতে হবে, কিন্তু মোটে পাঁচটি শব্দ লেখা হয়েছে? অনেকেই এমন পরিস্থিতে পড়েছেন। আর এমন সময়ে ওয়ার্ড সফটওয়্যারের ওপরের মেনু সাহায্য করার বদলে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে পারে।
ভালো খবর হল, ওয়ার্ড সফটওয়্যারের ফোকাস মোড ফিচারটি ব্যবহার করে বড়তি ঝামেলা এড়িয়ে মনোযোগ বাড়ানো যেতে পারে।
এটি চালু করতে, ওপরের অপশন থেকে ‘ভিউ’ ট্যাবে যান। এরপর ‘ফোকাস’ আইকনে আপুন। এটি চালু হলে পৃষ্ঠা বাদে আর সবকিছু স্ক্রিন থেকে সরে যাবে। ফলে, ব্যবহারকারী কেবল লেখার ওপরেই মনোযোগ দিতে পারবেন।
অপশন ব্যবহারের দরকার হলে, কিবোর্ডের এস্কেপ বোতাম চেপে খুব সহজেই ফোকাস মোড বন্ধ করতে পারবেন।
স্বয়ংক্রিয় রেফারেন্স
থিসিস বা গবেষণা পত্র লিখতে গিয়ে রেফারেন্সিং নিয়ে সমস্যায় পড়েননি এমন মানুষ পাওয়া কষ্টকর। ম্যানুয়ালি কোনো কাজের রেফারেন্সিং করা অনেক সময়ই বিভ্রান্তিকর ও হতাশাজনক হতে পারে। প্রতিটি উদ্ধৃতি বা সাইটেশন স্টাইলের আলাদা নিয়ম ও ধরন রয়েছে। আর এ সবকিছুর ওপর নজর দেওয়া অনেক সময়সাপেক্ষও। তবে, ওয়ার্ডের একটি ফিচারের মাধ্যমে এটি স্বয়ংস্ক্রিয়ভাবে করা সম্ভব।
ওপরের অপশন থেকে ‘রেফারেন্সেস’ ট্যাবে যান, এরপর ‘সাইটেশনস অ্যান্ড বিবিলিওগ্রাফি’ বিভাগটি খুঁজুন। সেখান থেকে সঠিক সাইটেশন স্টাইল বেছে নিয়ে ‘ইনসার্ট সাইটেশন’ অপশনে ক্লিক করুন। এরপর ‘অ্যাড নিউ সোর্স’-এ চাপুন।
এবার ওয়ার্ড একটি নতুন উইন্ডো চালু করবে, যেখানে সব প্রয়োজনীয় তথ্য পূরণ করতে পারেন। তথ্য যোগ করে ‘ওকে’ অপশনে ক্লিক করুন। এরপর ওয়ার্ড সব নিয়ম মেনে সঠিক উদ্ধৃতি তৈরি করে দেবে।
সবচেয়ে ভালো দিক হল, এভাবে সব সাইটেশন যোগ করলে, সহজেই ফাইলের শেষে বিবিলিওগ্রাফি তৈরি করতে পারবেন। প্রথমে ‘বিবিলিওগ্রাফি’ আইকনে চাপুন এরপর যে স্টাইলটি চান সেটি বেছে নিন, বাকিটা ওয়ার্ড নিজে থেকেই করে দেবে।