Published : 02 Jun 2025, 02:07 PM
তরলের মধ্যে থাকা কঠিন বস্তু নিয়ন্ত্রণের নতুন উপায় খুঁজে পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। এর মাধ্যমে কেবল শব্দ ব্যবহার করেই তরল ফোঁটার ভেতরে থাকা ছোট ছোট কঠিন কণাকে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে বলে দাবি তাদের।
এ নতুন আবিষ্কার ভবিষ্যতে চিকিৎসা, ওষুধ তৈরি ও ছোট পরিসরে পদার্থবিজ্ঞানের গবেষণায় নতুন যন্ত্র তৈরিতে সাহায্য করতে পারে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজ।
গবেষণায় নেতৃত্ব দিয়েছেন ‘নর্থ ক্যারোলাইনা স্টেট ইউনিভার্সিটি’র অধ্যাপক চুই চেন। গবেষণার মূল বিষয় হচ্ছে, আল্ট্রাসাউন্ড তরঙ্গ ব্যবহার করে কীভাবে তরলের ছোট ছোট বিভিন্ন ফোঁটাকে ঘোরানো যায় ও সেই ফোঁটার ভেতরে থাকা বিভিন্ন কণাকে এক জায়গায় জড়ো বা কেন্দ্রীভূত করা যায়।
এজন্য বিশেষ এক প্লেট ব্যবহার করেছেন গবেষকরা, যেটি আল্ট্রাসাউন্ড তরঙ্গের মাধ্যমে কাঁপে। ওই প্লেটের ওপর তরলের একটা ফোঁটা রাখলেই সেটা নিজে নিজে ঘুরতে শুরু করে, ঠিক যেন ছোট একটা ঘূর্ণি তৈরি হয়।
এ ঘোরার ফলে তরলের ফোঁটার ভেতরে ভেসে থাকা বিভিন্ন কণা ধীরে ধীরে ঘুরতে ঘুরতে মাঝখানে এসে জড়ো হয়। ফলে ফোঁটার মধ্যভাগে একটা ঘন গুচ্ছ বা ক্লাস্টার তৈরি হয়।
‘নর্থ ক্যারোলাইনা স্টেট ইউনিভার্সিটি’র মেকানিকাল ও অ্যারোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক চুই চেন বলেছেন, “এ পদ্ধতিতে তরলের ফোঁটার ভেতরে এক ধরনের ছোট ঘূর্ণি তৈরি হয়, যা কণাগুলোকে ঘুরিয়ে মাঝখানে টেনে আনে।”
চেন আরও বলেছেন, “শব্দ তরঙ্গ ফোঁটার ভেতরের তরলকে ঘূর্ণি আকারে ঘোরায়। আর সেই ঘূর্ণনের কারণে কঠিন বিভিন্ন কণা প্যাঁচানো প্যাটার্নে নড়ে ও শেষে গিয়ে এক জায়গায় জমা হয়।”
এ নতুন পদ্ধতিতে তরলের ভেতরের বিভিন্ন কণাকে জড়ো করতে কোনও ফিল্টার বা রাসায়নিক ব্যবহারের প্রয়োজন নেই গবেষকদের। অর্থাৎ এসব কণা আলাদা করতে ছাঁকনি বা কেমিকেলের দরকার নেই, কেবল শব্দের কম্পনে সহজেই এসব কণাকে এক জায়গায় আনা যায়।
এ পদ্ধতি বিশেষভাবে জৈব-চিকিৎসাবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে খুবই উপকারী হতে পারে। কারণ গবেষকদের প্রায়ই কোষ বা তরলের ভেতরে খুব সামান্য পরিমাণ কোনো পদার্থ খুঁজে বের করতে হয়। এ নতুন পদ্ধতিতে ওইসব পদার্থ যদি এক জায়গায় কেন্দ্রীভূত করা যায় তাহলে বিভিন্ন সেন্সরের পক্ষে সেগুলোর সংকেত ধরা অনেক সহজ হয়ে যাবে।
এখন পর্যন্ত এ ঘোরার পেছনের পদার্থবিজ্ঞান সম্পূর্ণরূপে বোঝা যায়নি। তবে এ ঘূর্ণনের পেছনে কাজ করা বিভিন্ন শক্তি বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করেছেন চেন ও তার গবেষণা দলটি।
গবেষণাটি প্রকাশ পেয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘সায়েন্স অ্যাডভান্সেস’-এ।
গবেষকরা বলছেন, কীভাবে তরলের ফোঁটা ঘোরে ও কী কী জিনিস তা বদলাতে পারে তা বোঝার মাধ্যমে এ প্রযুক্তি আরও ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন বিজ্ঞানীরা। এতে ভবিষ্যতে আরও উন্নত ও কার্যকর যন্ত্র বানানো সম্ভব হবে।
গবেষণায় উঠে এসেছে, তরলের ফোঁটার পৃষ্ঠের টান, আকার বা আল্ট্রাসাউন্ড তরঙ্গের শক্তি পরিবর্তন করলে তা কণাগুলোর চলাচলের ওপর প্রভাব ফেলে। যার মানে বিভিন্ন উপায়ে এই ঘূর্ণন প্রভাবকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন গবেষকরা, যা তাদের কাজের প্রয়োজন অনুযায়ী ঠিকঠাক সামঞ্জস্য করতে সাহায্য করবে।
ওষুধ ও চিকিৎসার কাজে সহায়তার পাশাপাশি পদার্থবিজ্ঞানে নতুন ধরনের গবেষণার পথ খুলে দিয়েছে এ পদ্ধতি। এ ঘূর্ণায়মান তরলের বিভিন্ন ফোঁটা ছোট ছোট ঘূর্ণিঝড়ের মতো কাজ করে, যা গবেষকদের ঘূর্ণায়মান সিস্টেমে বিভিন্ন কণা কীভাবে চলাচল করে তা বড় ও দামি যন্ত্র ছাড়াই সহজে গবেষণা করতে সাহায্য করবে।