Published : 04 Jun 2025, 04:25 PM
ভুয়া তথ্য যাচাইয়ের জন্য অনেকেই নির্ভর করছেন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই চালিত চ্যাটবটের ওপর। কিন্তু এসব চ্যাটবট থেকে পাওয়া তথ্য অনেকক্ষেত্রেই ভুলে ভরা।
মানব ফ্যাক্ট-চেকার কমিয়ে প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো এখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক চ্যাটবটের ওপর নির্ভর করছে। ফলে ব্যবহারকারীরাও চ্যাটজিপিটি, গুগল জেমিনাই, কিংবা ইলন মাস্কের এক্স প্ল্যাটফর্মে থাকা এক্সএআই এর গ্রক এর মতো চ্যাটবটের কাছে যাচ্ছেন তথ্য যাচাইয়ে।
কিন্তু গবেষণা বলছে, এইসব এআই সহকারী নিজেরাই ভুল তথ্য দিচ্ছে।
সাম্প্রতিক এক ভিডিও নিয়ে গ্রক বলেছে, এটি পাকিস্তানের নূর খান বিমানঘাঁটিতে ভারতীয় হামলার দৃশ্য। কিন্তু পরে জানা যায়, সেটি ছিল সুদানের খার্তুম বিমানবন্দরের পুরনো একটি ভিডিও।
আরেকটি ভিডিও, যাতে দেখা যাচ্ছে একটি ভবন আগুনে জ্বলছে, সেটিকে ‘সম্ভবত’ পাকিস্তানের পাল্টা হামলা হিসেবে চিহ্নিত করেছে গ্রক। আসলে ভিডিওটি ছিল নেপালের একটি ঘটনা।
মানব ফ্যাক্ট-চেকিং কমে যাওয়ার ঝুঁকি
‘গ্রক এর ওপর নির্ভরতা বাড়ছে ঠিক তখনই, যখন এক্সসহ বড় বড় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো মানব ফ্যাক্ট-চেকিংয়ে বিনিয়োগ কমাচ্ছে,’ বলেন নিউজগার্ডের গবেষক ম্যাকেঞ্জি সাদেগি।
‘আমাদের গবেষণায় বারবার প্রমাণিত হয়েছে বিশেষ করে তাৎক্ষণিক খবর বা ব্রেকিং নিউজের ক্ষেত্রে এইসব চ্যাটবট নির্ভরযোগ্য নয়,’ তিনি বলেন।
নিউজগার্ডের এক গবেষণায় দেখা গেছে, জনপ্রিয় ১০টি চ্যাটবটই বিভিন্ন ভুল তথ্য বারবার বলছে, এর মধ্যে রয়েছে রুশ প্রপাগান্ডা ও অস্ট্রেলিয়ার নির্বাচন নিয়ে বিভ্রান্তিকর বক্তব্য।
কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির ‘টাও সেন্টার ফর ডিজিটাল জার্নালিজমে’র এক প্রতিবেদন বলছে, ‘এইসব চ্যাটবট এমন প্রশ্নের উত্তর দিতেও দ্বিধা করছে না, যেগুলোর উত্তর তারা সঠিকভাবে জানেই না। এতে করে তারা বরং ভুল বা কল্পনাপ্রসূত তথ্য দিচ্ছে।’
একটি ভাইরাল ভিডিওতে বিশাল অ্যানাকন্ডাকে আমাজন নদীতে সাঁতার কাটতে দেখা যায়। গ্রক এটিকে ‘প্রামাণ্য’ বলে দাবি করে এমনকি ‘বৈজ্ঞানিক গবেষণার’ কথাও উল্লেখ করে, যদিও পরে প্রমাণিত হয়, ভিডিওটি ছিল এআইয়ের তৈরি।
‘কমিউনিটি নোটস’ কতটা কার্যকর?
অনলাইন ব্যবহারকারীরা এখন তথ্য পাওয়ার জন্য গুগলের মতো সার্চ ইঞ্জিন ছেড়ে এআই চ্যাটবটের ওপর ভরসা করছেন। এই পরিবর্তন এমন এক সময়ে এসেছে, যখন মেটা যুক্তরাষ্ট্রে তাদের তৃতীয় পক্ষের ফ্যাক্ট-চেকিং কর্মসূচি বন্ধ করে দিয়েছে এবং এ দায়িত্ব দিয়েছে সাধারণ ব্যবহারকারীদের ওপর, এক্স প্ল্যাটফর্মের মতো ‘কমিউনিটি নোটস’ ব্যবস্থার মাধ্যমে।
তবে গবেষকরা বারবার বলছেন, এই ধরনের ব্যবস্থায় ভুল তথ্য ঠেকানো কঠিন।
বিভ্রান্তিকর বা পক্ষপাতদুষ্ট তথ্য
যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক মেরুকরণে মানব ফ্যাক্ট-চেকিং নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই বিতর্ক রয়েছে। অনেক কট্টরপন্থী বলছেন, এটি তাদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা রুদ্ধ করে। যদিও পেশাদার ফ্যাক্ট-চেকাররা এ অভিযোগ মানতে নারাজ।
এআই চ্যাটবটগুলো কীভাবে প্রশিক্ষিত হয়েছে বা কীভাবে প্রোগ্রাম করা হয়েছে, তার ওপর নির্ভর করে তারা কতটা নিরপেক্ষভাবে তথ্য দেবে। অনেক সময়ই রাজনৈতিক প্রভাব বা পক্ষপাত এআইয়ের উত্তরকে প্রভাবিত করতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
‘আমরা দেখেছি, যখন মানুষের হস্তক্ষেপে এআই চ্যাটবটের নির্দেশনা বদলে ফেলা হয়, তখন সেগুলো ভুয়া বা পক্ষপাতদুষ্ট উত্তর দিচ্ছে,’ বলেন ইন্টারন্যাশনাল ফ্যাক্ট-চেকিং নেটওয়ার্কের পরিচালক অ্যাঞ্জি হোলান।
‘বিশেষ করে সংবেদনশীল বিষয়ে গ্রক-এর মতো এআই চ্যাটবট যে কতটা দায়িত্বজ্ঞানহীনভাবে উত্তর দিচ্ছে, তা সত্যিই উদ্বেগের।’