Published : 27 May 2025, 05:44 PM
সফট রোবোটিক্সে এক বড় সাফল্য অর্জন করেছেন বিজ্ঞানীরা। তারা এমন রোবট তৈরি করেছেন, যেগুলো প্রিন্টার থেকে বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই হাঁটতে পারে বলে দাবি তাদের।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, এ উদ্ভাবনে নতুন এক উল্টোভাবে প্রিন্ট করার পদ্ধতি ব্যবহার করেছেন তারা, যা ভবিষ্যতে নমনীয় যন্ত্রপাতি বড় পরিসরে তৈরির পথ খুলে দিতে পারে।
নরম প্লাস্টিকের মতো নমনীয় উপাদান দিয়ে তৈরি এসব সফট মেশিন পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করতে, চিকিৎসা বিজ্ঞান ও মহাকাশ গবেষণার মতো নানা কাজে বড় সম্ভাবনা রাখে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে ব্রিটিশ দৈনিক ইন্ডিপেনডেন্ট।
তবে এখনও এসব যন্ত্রের জন্য একক বা মানসম্পন্ন ডিজাইন ও সহজে বড় পরিসরে তৈরির পদ্ধতি না থাকায় এগুলো ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা সম্ভব হচ্ছে না। এতে প্রযুক্তিগত ও আর্থিক দুই দিক থেকেই চ্যালেঞ্জ রয়েছে।
এ নতুন থ্রিডি প্রিন্টিং প্রযুক্তি এসব সমস্যার সমাধান দিতে পারে ও সফট রোবোটিক্সের জগতে বিপ্লব ঘটাতে পারে বলে দাবি করেছেন এর নির্মাতারা।
এসব চ্যালেঞ্জ কাটিয়ে ওঠার জন্য কম খরচের এক ডেস্কটপ থ্রিডি প্রিন্টিং সিস্টেম তৈরি করেছে ‘এডিনবার্গ ইউনিভার্সিটি’র গবেষণা দল। তারা বলছে, এর মাধ্যমে সহজেই সফট রোবট বানানো সম্ভব।
গবেষকরা বলছেন, তাদের ব্যবহারবান্ধব এ সেটআপটি বাজারে সহজে পাওয়া যন্ত্রাংশ দিয়ে কেবল চারশ পাউন্ডেরও কম খরচে তৈরি করা যেতে পারে।
নিজেদের নতুন সিস্টেমের সক্ষমতা দেখানোর জন্য নরম প্লাস্টিক ও বায়ু চাপের মাধ্যমে চলাচল করা রোবট তৈরি করেছে গবেষক দলটি।
এসব রোবট থ্রিডি প্রিন্টার থেকে বেরিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গেই সেগুলোকে বায়ু চাপ দিয়ে চালানো হয়। তারপরই হাঁটতে শুরু করে এরা।
গবেষকরা বলছেন, প্রক্রিয়াটি এমন ‘বুদ্ধিমান’ নরম রোবট তৈরির পথে সাহায্য করবে যেগুলোতে কোনো ইলেকট্রনিক যন্ত্রাংশ থাকবে না।
এ প্রকল্পের প্রধান ইঞ্জিনিয়ার ম্যাকস গেপনার বলেছেন, “এ ধরনের উপাদান ব্যবহার করে প্রিন্টিং করতে আগে অনেক বছর সময় লাগত। আমাদের নতুন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে এখন কেউ সহজেই এমন কিছু প্রিন্ট করতে পারে, যা আগে অসম্ভব মনে হত।
“ইঞ্জিনিয়ার ও শিল্পীদের জন্য এক বড় পরিবর্তন এটি। আমাদের অনুমান, এই নতুন প্রযুক্তি গবেষণায় নতুন অগ্রগতি আনবে। দীর্ঘদিন ধরে চলা উৎপাদন ও ডিজাইন নানা সমস্যা আর না থাকায় আমাদের ধারণা, সফট রোবোটিক্স এখন বাস্তব জীবনে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে পারে।”
গেপনারকে এই প্রকল্পে সহায়তা করেছেন তার সহকর্মী ‘সেন্টার ফর ডক্টরাল ট্রেনিং ইন রোবোটিক্স অ্যান্ড অটোনোমাস সিস্টেমস’-এর পিএইচডি শিক্ষার্থী জোনাহ ম্যাক ও ইউনিভার্সিটির ‘ইনস্টিটিউট ফর বায়োইঞ্জিনিয়ারিং’-এর প্রধান শিক্ষাবিদ অধ্যাপক অ্যাডাম স্টোকস।
গবেষণা দলটি বলেছে, তাদের নতুন সিস্টেমটি ‘ফ্লেক্স প্রিন্টার’ নামে পরিচিত। এটিকে তৈরি ও চালানোর জন্য আগে বেশি জ্ঞান জানার প্রয়োজন হয় না। নতুন ব্যবহারকারীরাও কয়েক দিনের মধ্যে এটি জড়ো করে রোবট তৈরি শুরু করতে পারেন।
এ রোবটি তৈরির বিভিন্ন ডিজাইন সবার জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছেন গবেষকরা, যাতে সবাই সফট রোবোটিক প্রযুক্তি সহজে ব্যবহার করতে পারে ও সবাই মিলে সেটাকে আরও উন্নত করতে পারেন।
এ গবেষণার ফলাফল প্রকাশ পেয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট ‘ডিভাইস জার্নাল’-এ। গবেষণাটিতে অর্থায়ন করেছে ‘ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ফিজিক্যাল সায়েন্সেস রিসার্চ কাউন্সিল’।