Published : 09 Mar 2025, 09:56 PM
আওয়ামী রীগের শাসনামলে ‘বঞ্চিতদের’ তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ব্যবসার সুযোগ দেওয়ার কথা বলেছেন প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ এবং তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব।
এছাড়া বিগত ১৫ বছর যারা লাইসেন্স পেয়ে হাতবদল করেছেন, লাইসেন্সের শর্ত প্রতিপালন করেননি তাদের বাদ দেওয়ার কথাও বলেছেন তিনি।
ফয়েজ আহমদ বলেছেন, যাদের বিরুদ্ধে মুদ্রা পাচারসহ অন্য অভিযোগ রয়েছে তাদের আন্তর্জাতিক ব্যবসায় যুক্ত হতে দেওয়া হবে না।
রোববার জাতীয় প্রেস ক্লাবে একটি আলোচনা অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন ফয়েজ আহমদ।
তার বক্তব্যের আগে বিএনপির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক কমিটির বিশেষ সহকারী ইশরাক হোসেন এই খাতের সংস্কারে তাদের পক্ষ থেকে ‘রাজনৈতিক সমর্থন’ জানান এবং আমলাতন্ত্রের অসহযোগিতার চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে এসব করতে হবে বলে উল্লেখ করেন।
‘প্রান্তিক পর্যায়ে দ্রুতগতির মানসম্পন্ন সহজলভ্য ইন্টারনেট প্রাপ্তিতে করণীয়’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠানটির আয়োজন করেছিল বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশন।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ শীর্ষ তিনটি মোবাইল অপারেটর, দুটো শীর্ষ এনটিটিএন কোম্পানি, আইএসপি ব্যবসায়ীদের শীর্ষ নেতারা, বাংলাদেশের তথ্য প্রযুক্তিখাতের ব্যবসায়ীদের সংগঠন বেসিসের সাবেক ও বর্তমান নেতা, মোবাইল টাওয়ার কোম্পানির প্রতিনিধি, ফ্রি ল্যান্সারদের প্রতিনিধি, আইআইজি খাতের ব্যবসায়ীসহ এ খাতের প্রায় সব অংশীজনরা উপস্থিত ছিলেন।
আলোচনায় ফয়েজ আহমদ বলেন, “আমরা এক্সিসটিং রং পলিসিতে নিউ প্লেয়ারকে খেলতে দেব না। আমরা এক্সিসটিং মনোপলিদের ভুল পলিসিকে ব্রেক করব, লাইসেন্স রেজিম ব্রেক করব এবং একইসাথে নতুনদের জন্য আমরা এমন পলিসি তৈরি করব যাতে তারা এখানে এসে ফেয়ার প্লে করতে পারবে।
“নতুন লাইসেন্সে আমরা এনশিউর করব গত ১৫ বছর বা গত ১৭ বছর যাদেরকে বঞ্চিত করা হয়েছে আমরা তাদেরকে বিনিয়োগের সুযোগ দেব। আমরা তাদের ব্লক করব না এবং একই সাথে যারা গত ১৫ বছর লাইসেন্স নিয়ে হাত বদলের ব্যবসা করেছে, যারা লাইসেন্সের বাধ্যবাধকতা মানেননি তারা আর লাইসেন্স পাবে না। তাদের লাইসেন্স আমরা রিপ্লেস করব এবং সেজন্য যত প্রতিরোধই আসুক সেগুলো আমরা আপনাদের নিয়ে মোকাবেলা করব।”
ইন্টারনেটকেন্দ্রীক যেকোনো জুলাই অভ্যুত্থানের স্পিরিটের বিরুদ্ধে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আমরা এমন পলিসি করব যেখানে সরকার বা বেসরকারি কেউ ইন্টারনেট বন্ধ করতে না পারে।
“আমরা সর্বোচ্চভাবে চেষ্টা করব নির্বাহী আদেশ ব্যবহার না করার। কিন্তু যদি আপনারা বিটিআরসি কর্মকর্তাদের প্রভাবিত করার চেষ্টা করেন, যদি আপনারা ব্যুরোক্রেসিতে ইন্টারফেয়ার করার চেষ্টা করেন এবং পলিসি শেপিংয়ে বাধা দেন তাহরে আমরা নির্বাহী আদেশ ব্যবহারে বাধ্য হব এবং সেটা আমরা করব।”
টেলিকমিউনিকেশন খাতের দুর্নীতি তদন্তের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে জানিয়ে ফয়েজ আহমদ বলেন, “আপনারা জানেন আইসিটিতে দুর্নীতি ও অনিয়ম নিয়ে একটা শ্বেতপত্র করেছি। টেলিকমিউনিকেশনে একই তদন্ত করা যায় কি না সেটা নিয়ে আমরা একটা চিন্তা করছি। জনবল নিয়োগে এবং পলিসি তৈরিতে যে দুর্নীতি হয়েছে সেগুলো নিয়ে একটা শ্বেতপত্র এবং একই সাথে কী কী রিফর্ম দরকার এটা আমরা করছি। এটাতে প্রধান উপদেষ্টার সম্মতি আছে।”
বক্তব্যের সময় ফয়েজ আহমদের পাশেই বসে ছিলেন তরুণ বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন। তিনি মাথা নেড়ে ফয়েজকে সমর্থন দেওয়ার কথা জানান।
রাজনৈতিক সমর্থন নিয়ে ইশরাক
ফয়েজের বক্তব্যের আগে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএনপির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক কমিটির বিশেষ সহকারী ইশরাক হোসেন বলেন, “ইন্টারনেট এখন তরুণ প্রজন্মের কাছে অনেকটা বেসিক রাইটসের মতো। আগের সরকার একটি দুষ্টচক্র তৈরি করে দেশের তথ্যপ্রযুক্তির প্রবাহকে নিয়ন্ত্রণ করেছে। এটা একটা চিন্তার বিষয়। এই খাতে এখনো কোনো সংস্কার দৃশ্যমান হয়নি।”
তিনি ফয়েজ আহমেদকে উদ্দেশ্য করে এই খাতে ব্যবস্থা নিতে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান।
এই খাতের সংস্কারে কমিশন গঠনের দাবি জানিয়ে ইশরাক বলেন, “বিগত বছরগুলোতে কী কী দুর্নীতি হয়েছে সে বিষয়ে আমরা একটা শ্বেতপত্র চাই, যাতে দোষীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা যায়। এখানে বোঝাই যাচ্ছে যে, বিগত দিনে রাজনৈতিকভাবে পলিসিকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে একটি বা দুটি গোষ্ঠীকে বিশেষ সুবিধা দেওয়ার জন্য। এটাকে আমাদের ব্রেক করতে হবে।”
তিনি বলেন, “এই ইন্ডাস্ট্রিতে যারা রয়েছেন সবার সাথেই আমাদের রাজনৈতিক সমর্থন থাকবে। আপনারা আবার ব্যুারোক্রেসিকে আবার ইনফ্লুয়েন্স করতে যাইয়েন না যে, আপনারা ব্যারিয়ার দিয়ে রাখেন ওরা শর্ট টার্মের জন্য আসছে। এভাবে চিন্তা করলে কিন্তু লস হয়ে যাবে। এই রিফর্মগুলো আমরা করবই। সেরকম মনোভাব আমাদের। আমাদের রাজনৈতিক সদিচ্ছা অ্যালাইন করে এই বর্তমান সরকারের সাথে।”