Published : 07 Dec 2022, 06:24 PM
ইথেরিয়াম ব্লকচেইনের মূল কার্যপ্রণালীতে বড় পরিবর্তনের জেরে বৈশ্বিক ক্রিপ্টো খাতের বিদ্যুৎ চাহিদা কমেছে লক্ষ্যণীয় হারে।
গবেষকরা বলছেন, ‘দ্য মার্জ’-এর ফলে ক্রিপ্টো খাতে বিদ্যুৎ চাহিদা এতটাই কমেছে যে, আয়ারল্যান্ড বা অস্ট্রিয়ার মতো একটা দেশের সারা বছরের চাহিদা মেটানো সম্ভব তা দিয়ে।
ইথেরিয়াম ব্লকচেইনে বিদ্যুৎ খরচ কমার বিষয়টি গবেষকরা তুলে ধরেছেন বিজ্ঞান সাময়িকী ‘প্যাটার্নস’-এ প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে।
অন্যদিকে, বাজারের বৃহত্তম ক্রিপ্টো মুদ্রা হিসেবে পরিচিতি বিটকয়েনের ব্লকচেইন ফিনল্যান্ডের চেয়ে বেশি বিদ্যুৎ শক্তি খরচ করে বলে অনুমান বিশেষজ্ঞদের।
বিবিসি জানিয়েছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিদ্যুচ্চালিত গাড়ির ব্যবহার বাড়ায় বায়ুমণ্ডলে ক্ষতিকর গ্যাসের নির্গমন যতটা কমেছিল, বিটকয়েন মাইনিংয়ে ব্যবহৃত বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রক্রিয়ায় তার চেয়ে বেশি গ্রিন-হাউজ গ্যাস নির্গমন হচ্ছে বলে প্রতিবেদনে ইঙ্গিত দিয়েছেন গবেষকরা।
হিসেব পাল্টে দিয়েছে ‘দ্য মার্জ’
অন্যান্য ক্রিপ্টো মুদ্রার মতো ইথেরিয়ামও একটি ব্লকচেইনের ওপর নির্ভর করে; প্রতিটি লেনদেনের তথ্য নিয়ে ক্রমাগত আপডেট হতে থাকে ডেটাবেইজটি।
ইথেরিয়াম ব্লকচেইনে হিসাবরক্ষণ এবং নিশ্চিতকরণের কাজটি আগে হতো ‘প্রুফ অফ ওয়ার্ক’ প্রক্রিয়ায়। বিটকয়েনসহ অন্যান্য ক্রিপ্টো মুদ্রাগুলোও একই প্রক্রিয়ায় কাজ করে।
আর ব্লকচেইন নেটওয়ার্ক চালু রাখতে সহযোগিতা করে নতুন কয়েন কামাতেন মাইনিং কোম্পানি এবং স্বেচ্ছাসেবক মাইনাররা। তাদের কম্পিউটারগুলো যত বেশি কাজ করতো, নতুন কয়েন তৈরির সম্ভাবনা ততো বাড়তো।
এ কারণেই বিশাল আকৃতির গুদামে দিন রাত ২৪ ঘণ্টা উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন কম্পিউটার চালু রাখতেন মাইনাররা। কিন্তু এই প্রক্রিয়ার বিদ্যুৎ খরচ শঙ্কিত হওয়ার মতোই।
কিন্তু ১৫ সেপ্টেম্বর এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে এসেছে ইথেরিয়াম। হিসাবরক্ষণ এবং নিশ্চিতকরণের জন্য ‘প্রুফ অফ ওয়ার্ক’ ছেড়ে ‘প্রুফ অফ স্টেক’ ব্যবস্থায় স্থানান্তরিত হয়েছে এর ব্লকচেইন। ফলে কম্পিউটার কতো বেশি কাজ করছে, তার ওপর আর নির্ভর করছে না নতুন কয়েন তৈরির সম্ভাবনা।
দৃষ্টিসীমায় আইনি বিধি-নিষেধ
ইথেরিয়াম ব্লকচেইন ‘প্রুফ অফ ওয়ার্ক’ থেকে ‘প্রুফ অফ স্টেক’-এ নেওয়ার প্রক্রিয়া এতোটাই জটিল ছিল যে, একে বহুতল দালানের ওপরের অংশ অক্ষত রেখে নিচের ভিত নতুন করে নির্মাণের সঙ্গে তুলনা করেছে বিবিসি।
এতে ইথেরিয়াম ব্লকচেইনের বিদ্যুৎ খরচ ৯৯.৮৪ শতাংশ কমেছে বলে অনুমান গবেষকদের। কয়েক কোটি ডলার সমমূল্যের অন্যান্য কয়েন আর নন-ফাঞ্জিবল টোকেন বা এনএফটির মতো ক্রিপ্টো পণ্য আছে এই ব্লকচেইনে।
কিন্তু, গবেষণা প্রতিবেদনটির লেখক ও নেদারল্যান্ডসের ফ্রেইয়ে ইউনিভার্সিটেট অফ আমস্টারডামের ডেটা-সায়েন্স এবং অর্থনীতি গবেষক অ্যালেক্স ডি ফ্রিস সতর্ক করে দিয়েছেন – বড় পরিসরে ইথেরিয়াম মাইনিংয়ের জন্য আগে যে গুদাম জুড়ে রাখা সারি সারি কম্পিউটার ব্যবহৃত হতো, সেগুলো এখন ভিন্ন কোনো ক্রিপ্টো মুদ্রা মাইনিংয়ের কাজে ব্যবহৃত হতে পারে।
এ বছরের সেপ্টেম্বর মাসেই ক্রিপ্টো মাইনিংয়ে মাত্রাতিরিক্ত বিদ্যুৎ খরচের ওপর আইনি সীমাবদ্ধতা আরোপের সম্ভাবনা বিবেচনায় নেওয়ার কথা বলেছিল হোয়াইট হাউজের ‘অফিস অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি পলিসি’।
অল্প কথায় বর্তমান পরিস্থিতির ব্যাখ্যা দিয়ে ডি ফ্রিস বলেন, “বিটকয়েন সংশ্লিষ্টরা অনেকটাই পরিবর্তন বিরোধী – কিন্তু ইথেরিয়াম সংশ্লিষ্টরা দেখিয়ে দিয়েছেন যে, শঙ্কা এবং প্রতিবন্ধকতা থাকলেও লাইভ ব্লকচেইনে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনা সম্ভব। অর্থাৎ, কিছু ঘটানোর জন্য বিটকয়েন সংশ্লিষ্টদের হয়তো বাইরে থেকেই কিছুটা চাপ দেওয়া প্রয়োজন।”
সমীকরণ পাল্টে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে জলবায়ু নিয়ে শঙ্কা
সার্বিক ক্রিপ্টো খাতের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে ইউনিভার্সটি অফ লিভারপুলের সহযোগী অধ্যাপক গ্যাভিন ব্রাউন বিবিসিকে বলেছেন, “ক্রিপ্টো খাতের জন্য ‘টেকসই ভবিষ্যৎ’ প্রশ্নের উত্তর খোঁজা এখন অতি গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে নতুন নীতিমালার সম্ভাবনা একটি গুরুত্বপূর্ণ লিভারের কাজ করছে।”
তবে, ব্যাংক ও পেনশন তহবিলের মতো মূলধারার বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে বিনিয়োগ আনতে চাইলে নিজেদের কর্মকাণ্ডে স্বচ্ছতা এনে এ প্রযুক্তিকে বিতর্কের ঊর্ধ্বে তোলার দায়িত্ব বিটকয়েন ও ইথেরিয়াম ভক্তদেরই বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
“বর্তমানে ক্রিপ্টোতে বিনিয়োগ করতে আগ্রহ থাকলেও অনেকে তা করতে পারছেন না যতোক্ষণ না এর ভবিষ্যৎ নির্ভরযোগ্য হিসেবে প্রমাণিত হয়।”
‘ক্রিপ্টো সম্পদ নিয়ে যে জলবায়ু শঙ্কা’ বিরাজ করছে, ইথেরিয়াম ভক্তদের তার বিরুদ্ধে এখনই জয় ঘোষণা করা থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিয়েছেন ড. ডি ফ্রিস। “কেন্দ্রীভূত অন্যান্য আর্থিক লেনদেন ব্যবস্থার তুলনায় ব্লকচেইন নির্ভর ব্যবস্থাগুলো এখনও নানা বিবেচনায় অস্থিতিশীল,” বলেছেন তিনি।