Published : 25 Oct 2023, 03:21 PM
যুক্তরাষ্ট্রে এমন এক সম্ভাব্য আইনে অ্যাপল সমর্থন জানানোর ঘোষণা দিয়েছে যেটি বাস্তবায়িত হলে বিক্রি হওয়ার পর নিজেদের তৈরি ডিভাইসে অ্যাপলের নিয়ন্ত্রণ ও বিক্রি পরবর্তী আয় কমে যেতে পারে।
মঙ্গলবার মার্কিন এই টেক জায়ান্ট বলেছে, বেশ কয়েক বছর ধরে গ্রাহকরা অভিযোগ করে আসছেন, অ্যাপলের ডিভাইস মেরামত করা জটিল ও খরচসাপেক্ষ। তাই তারা এই বিলে সমর্থন জানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
রয়টার্স বলছে, ব্যবহারের পর পণ্য সারাই ও অন্যান্য সেবায় মাত্রাতিরিক্ত ফি আদায়ের ফলে গ্রাহকদের জন্য পণ্যের পেছনে মোট খরচ অসম্ভব বেড়ে যায়। ‘জাঙ্ক ফি’ নামে পরিচিত এই খরচের লাগাম টেনে ধরার উদ্যোগ নিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। আর তারই অংশ হিসেবে এই ঘোষণা এল।
অ্যাপল আরও বলেছে, তারা গোটা যুক্তরাষ্ট্রের স্বতন্ত্র রিপেয়ার শপগুলোয় আইফোন ও কম্পিউটার মেরামতের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহ করবে।
অ্যাপলের এই ঘোষণা অন্যান্য কোম্পানিকেও সম্ভাব্য আইনটিতে সমর্থন জানাতে প্রভাব ফেলবে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে রয়টার্স।
ফেডারেল ট্রেড কমিশনের চেয়ারপার্সন লিনা খান বলেন, গোটা প্রযুক্তি সেক্টরে কোম্পানিগুলোর এমন আচরণ গ্রাহকদের খরচ বাড়ানো, উদ্ভাবন বন্ধ করা, স্বতন্ত্র রিপেয়ার শপগুলোর ব্যবসার সুযোগ বন্ধ করার পাশাপাশি অপ্রয়োজনীয় ইলেকট্রনিক বর্জ্য তৈরি করেছে।
“আমরা স্বাস্থ্যখাতে কাজ করা কর্মীদের কথা শুনেছি। তারাই নয়, বিভিন্ন হাসপাতালও উদ্বিগ্ন যে তারা নিজেদের ভেন্টিলেটর নিজেরা ঠিক করতে পারবে কি না। কারণ উৎপাদকরা এগুলো মেরামতের প্রবেশাধিকার দেয়নি তাদের।” --বলেন খান।
সম্ভাব্য ফেডারেল আইনে সমর্থনের সিদ্ধান্ত নিয়ে স্বতন্ত্র রিপেয়ার শপগুলোকে কোম্পানির নিজস্ব পণ্য মেরামতের সুযোগ করে দিয়েছে অ্যাপল। আর যন্ত্রের মেয়াদ ও পণ্যের মূল্যমান নিশ্চিত করা নিয়ে তাদের কয়েক বছর দীর্ঘ প্রচেষ্টার অংশ এটি।
এর মাধ্যমে দোকানগুলোতে পণ্য মেরামত ও কোম্পানির খুচরা যন্ত্রাংশে প্রবেশের সুযোগও বেড়ে যাবে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে রয়টার্স।
২০১৯ সাল থেকে কিছু সংখ্যক স্বতন্ত্র রিপেয়ার শপে নিজেদের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ সরবরাহ শুরু করে কোম্পানিটি। অগাস্টে মার্কিন অঙ্গরাজ্য ক্যালিফোর্নিয়ায় প্রস্তাবিত ‘রাইট-টু-রিপেয়ার’ আইনে সমর্থন জানিয়েছিল অ্যাপল। ওই আইন অনুসারে, বিভিন্ন রিপেয়ার শপকে মেরামতের সুযোগ দেওয়ার পাশাপাশি গ্রাহকদেরও নিজস্ব যন্ত্রাংশে প্রবেশাধিকার দিতে হবে কোম্পানিগুলোকে। আর, সেটি হতে হবে ন্যায্য ও যুক্তিসঙ্গত দামে।
“আমরা চাই, ক্যালিফোর্নিয়ায় প্রণীত নতুন বিধিমালা যেন সমগ্র যুক্তরাষ্ট্রে চালু হয়।” --হোয়াইট হাউজের এক আয়োজনে বলেন অ্যাপলের সেবা ও কার্যক্রম বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট ব্রায়ান নউম্যান।
“অ্যাপল আরও বিশ্বাস করে, পণ্যের মান, ব্যবহারে সুবিধা ও সুরক্ষার পাশাপাশি মেরামতের কাজ সহজ করবে এমন আইন করা গেলে তাতে ক্রেতা ও কোম্পানি উভয়ই লাভবান হবে।”
যুক্তরাষ্ট্রের ‘ন্যাশনাল ইকোনমিক কাউন্সিল’-এর পরিচালক লায়েল ব্রেইনার্ড অ্যাপলের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে মার্কিন কংগ্রেসকে আইনটি পাস করার আহ্বান জানিয়েছেন। এরইমধ্যে নিজস্ব ‘রাইট-টু-রিপেয়ার’ আইন চালু করেছে ক্যালিফোর্নিয়া, কলোরাডো, নিউ ইয়র্ক ও মিনেসোটার মতো অঙ্গরাজ্য। এ ছাড়া, আরও ৩০টি অঙ্গরাজ্যে একই ধরনের প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে।
ব্রেইনার্ড বলেন, অ্যাপলের এমন অঙ্গীকার গ্রাহকের খরচ কমিয়ে আনার পাশাপাশি অপ্রয়োজনীয় ই-বর্জ্যের ঝুঁকিও কমিয়ে দেবে।
তিনি আরও বলেন, মার্কিন গ্রাহকদের বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ডিভাইস মেরামতের মাধ্যমে বছরে চার হাজার ৯৬০ কোটি ডলার খরচ কমানো সম্ভব। আর এতে যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি বছর প্রায় ৭০ লাখ টন ইলেকট্রনিক বর্জ্য কমে আসবে। এ ছাড়া, তুলনামূলক ছোট রিপেয়ার শপগুলোর ব্যবসাও লাভের মুখ দেখবে।
২০১৯ সাল থেকে অ্যাপল বিভিন্ন রিপেয়ার শপে কোম্পানির খুচরা যন্ত্রাংশ সরবরাহ করে থাকলেও ক্যালিফোর্নিয়ার আইন অনুসারে, কোম্পানিগুলোকে মেরামতের যন্ত্রপাতিও সরবরাহ করতে হবে।
অ্যাপল বলেছে, তারা ক্যালিফোর্নিয়ার কার্যক্রম মডেলটি সমগ্র যুক্তরাষ্ট্রে অনুসরণের পরিকল্পনা করছে।
তবে মঙ্গলবারের ঘোষণায় কিছু সংখ্যক গ্রাহক মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন। অতীতে অ্যাপলের মেরামত ব্যবস্থায় বিভিন্ন শর্ত জুড়ে দেওয়াকে এর সম্ভাব্য কারণ হিসেবে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে রয়টার্স।
এমন একটি আইনের দাবি করে আসছে ‘ইউএস পার্জ’ নামের এক সংগঠন। এর প্রধান নাথান প্রক্টর বলেন, প্রস্তাবিত যে কোনো ফেডারেল আইনের খুঁটিনাটি খতিয়ে দেখবে তার সংগঠন।
“এটা আসলে বাস্তব জগতে মানুষের অভিজ্ঞতার ওপর নির্ভর করবে, আর সেটাই আমরা চাই।” --বলেন প্রক্টর।
“আমরা এ বিষয়ে অ্যাপল ও অন্যান্য কোম্পানির ওপর নজর রাখব।”