Published : 18 Mar 2025, 01:06 PM
আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও ভেনেজুয়েলানদের কীভাবে উড়োজাহাজে ভরে যুক্তরাষ্ট্র থেকে তাড়ানো হল, ট্রাম্প প্রশাসনের কাছে সে বিষয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা চেয়েছেন একজন মার্কিন ফেডারেল বিচারক।
সোমবার এই সমন জারি করে মঙ্গলবারের মধ্যে এর জবাব দিতে বলা হয়েছে।
তাড়িয়ে দেওয়া ওই ভেনেজুয়েলানরা কারাগারের অপরাধী দল ‘ত্রেন দে আরাগুয়া’-র সদস্য বলে দাবি করেছেন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। এই দলটিকে বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন বলে চিহ্নিত করেছেন তিনি।
শনিবার হোয়াইট হাউজ ট্রাম্পের একটি ঘোষণা প্রকাশ করে, তাতে ১৭৯৮ সালের ‘বহিঃশত্রু আইন’অনুযায়ী এই অপরাধী দলটি যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অনিয়মিত যুদ্ধ পরিচালনা করছে বলে জানানো হয়।
এর কয়েক ঘণ্টা পর ওই দিনই মার্কিন জেলা জজ জেমস বোসবার্গ ওই ভেনেজুয়েলানদের যুক্তরাষ্ট্র থেকে তাড়ানোর ওপর সাময়িক নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। কিন্তু আদালতের এই আদেশ সত্ত্বেও ওই ২৬১ জন ভেনেজুয়েলানকে উড়োজাহাজে ভরে এল সালভাদরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
ট্রাম্প প্রশাসনের একজন আইনজীবী যুক্তি দেখিয়ে বলেন যে, বিচারক ওই ফ্লাইটগুলো আটকানোর প্রাথমিক মৌখিক আদেশ দিয়েছিলেন, পরে তার বদলে আরও সংক্ষিপ্ত একটি লিখিত আদেশ দেন, কিন্তু ততক্ষণে ওই ফ্লাইটগুলো যুক্তরাষ্ট্রের আকাশসীমা ছেড়ে যায় আর দেশের বাইরে চলে যাওয়ার পর সেটির যাত্রা অব্যাহত রাখার আইনি অধিকার সরকারের আছে।
জানুয়ারিতে ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই ট্রাম্প নির্বাহী ক্ষমতার সীমা আরও বাড়ানোর চেষ্টা করছিলেন। এর মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের শাখাগুলোর মধ্যে বিদ্যমান ঐতিহাসিক ‘চেক এন্ড ব্যালান্স’কে চ্যালেঞ্জ করছেন তিনি।
রয়টার্স জানিয়েছে, সোমবার আদালতে শুনানি চলাকালে বোসবার্গ বিচার বিভাগের অ্যাটর্নি অভিষেক কাম্বলিকে ভেনেজুয়েলানদের বহন করে নিয়ে যাওয়া ফ্লাইটগুলো কখন ছেড়ে গেছে তার বিস্তারিত জানানোর জন্য বারবার চাপ দিচ্ছিলেন। তার আদেশের পর ফ্লাইটগুলো ছেড়ে গেছে কি না, তা জানতে চাইছিলেন তিনি।
“উত্তর ছাড়া আপনি আজ আসছেন কেন?” অ্যাটর্নি কাম্বলিকে বলে বোসবার্গ।
বিচারক শনিবার তার দেওয়া আদেশকে কেন্দ্র করে কখন ঘটনাগুলো ঘটেছে তার প্রকৃত সময়, ফ্লাইটগুলো কখন ছেড়েছে, সেগুলোতে কারা কারা ছিল সে সম্পর্কে নিশ্চিত হতে চাইছিলেন।
হোয়াইট হাউজের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলাইন লেভিট জানিয়েছেন, মোট ২৬১ জনকে বিতাড়িত করা হয়েছে। এদের মধ্যে ১৩৭ জনকে ‘বহিঃশত্রু আইন’ এর অধীনে এবং আরও শতাধিক জনকে বিধিসম্মত অভিবাসন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে পাঠানো হয়েছে।
এদের সঙ্গে এমএস-১৩ অপরাধী দলের ২৩ জন সালভাদোরিয়ান সদস্যও ছিলেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
রয়টার্সের টাইমলাইন অনুযায়ী, বোসবার্গের মৌখিক আদেশে দেওয়া হয়েছিল স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টা ৪৫ মিনিট থেকে ৬টা ৪৮ মিনিটের মধ্যে। এই আদেশে বলা হয়েছিল, “এই লোকদের বহনকারী যে কোনো ফ্লাইটকে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে আসতে হবে।”
এই সময়টিতে ভেনেজুয়েলানদের বহনকারী দু’টি ফ্লাইট আকাশে ছিল। তৃতীয় ফ্লাইটটি ৭টা ৩৭ মিনিটে উড়াল দেয়, এর ১২ মিনিট আগেই বিচারক বোসবার্গের লিখিত আদেশটি প্রকাশিত হয়েছিল।
ট্রাম্পের টিমের দাবি, তৃতীয় ওই ফ্লাইটে বহিঃশত্রু আইন’ এর অধীনে বিতাড়িত কেউ ছিল না, ছিল অভিবাসন কর্তৃপক্ষের বিধিসম্মত প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে বহিষ্কার হওয়া লোকজন, তাই এটি (ফ্লাইটটি) ওই আদেশের আওতাধীন ছিল না।
আরও পড়ুন:
আদালতের নির্দেশ উপেক্ষা করে ভেনেজুয়েলানদের তাড়ালেন ট্রাম্প
ভেনেজুয়েলার গ্যাং সদস্যদের বিতাড়নে ট্রাম্পের যুদ্ধকালীন আইন ব্যবহারে স্থগিতাদেশ