Published : 12 Dec 2024, 12:58 AM
ঢাকায় ব্যস্ততম সফর শেষে ফিরে যাওয়ার দুই দিনের মাথায় ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রিকে দেশটির সংসদ সদস্যদের একের পর এক প্রশ্নের জবাব দিতে হয়েছে; আড়াই ঘণ্টার বেশি সময় ধরে সফরের বিস্তারিত তুলে ধরেছেন তিনি।
ভারতের বৈদেশিক সম্পর্ক বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সামনে বুধবার হাজির হয়ে তিনি সফরের বিষয়ে অবহিত করেন। অনেক প্রশ্নের মুখে তিনি ’একেবারে পুঙ্খানুপুঙ্খ’ ব্রিফ করেছেন বলে পরে সাংবাদিকদের বলেন কমিটির প্রধান কংগ্রেসের সংসদ সদস্য শশী থারুর।
নয়া দিল্লিতে সংসদ ভবনে প্রায় আড়াই ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে কমিটির মুখোমুখি হয়ে ছিলেন তিনি। এতে ২১ থেকে ২২ জন সংসদ সদস্য উপস্থিত ছিলেন।
সফরকালে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে বৈঠক এবং পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠক ‘ফরেন অফিস কনসালটেশন’ (এফওসি) এর আলোচনার বিষয়গুলো তুলে ধরেছেন বিক্রম মিশ্রি।
ভারতীয় বার্তা সংস্থা ইন্দো-এশীয় নিউজ সার্ভিসের (আইএএনএস) প্রতিবেদনে কমিটির প্রধান শশী থারুর ও কমিটির সূত্রের বরাতে বিফ্রিংয়ের বিষয়ে তুলে ধরা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি বলেছেন, বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর হামলার ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে ঢাকার অন্তর্বর্তী সরকার।
সফরকালে বৈঠকের সময় মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন প্রশাসন দিল্লির সঙ্গে স্বাক্ষরিত কোনও চুক্তি পর্যালোচনা করার কথাও তোলেনি বলে তিনি কমিটিকে অবহিত করেছেন।
সোমবার বাংলাদেশ-ভারতের পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠক এফওসিতে যোগ দিতে ঢাকায় এসছিলেন বিক্রম মিশ্রি। সচিব পর্যায়ের বৈঠক শেষে প্রধান উপদেষ্টা ও পররাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতও করেন তিনি।
আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ভারতে আওয়ামী লীগ সভাপতির অবস্থান এবং সংখ্যালঘু নির্যাতনের অভিযোগের নিয়ে পাল্টাপাল্টি বক্তব্যে প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে এক ধরনের কূটনৈতিক টানাপোড়েন চলছে।
বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ভারতের মন্তব্য ‘সমীচীন’ নয়: দিল্লিকে ঢাকা
প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকের পর উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্কে ‘নানা কারণে যে মেঘ জমেছে ‘, তা উভয় দেশই দূর করতে চায় বলে তুলে ধরেন।
একদিনের এ সফরেরে দুদিন পর ভারতের বৈদেশিক সম্পর্ক বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটিকে সফরের বিষয়ে অবহিত করেন বিক্রম মিশ্রি।
কমিটির বিফ্রিংয়ে অংশ নেওয়া একাধিক সূত্রের বরাতে আইএএনএস লিখেছে, ব্রিফ্রিংয়ের সময় বিক্রম মিশ্রির কাছে লোকসভার সদস্যরা শেখ হাসিনা কোন মর্যাদায় দেশটিতে অবস্থান করছেন, সেই সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন।
বৈঠক থেকে বেরিয়ে কমিটির সভাপতি ও কংগ্রেসের সংসদ সদস্য শশী থারুর সাংবাদিকদের বলেন, ব্রিফিংয়ের সময় সচিবকে অনেক প্রশ্ন করা হয়েছিল। বাংলাদেশের বিষয়ে ’চমৎকার ব্রিফিং’ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
”আপনারা জানেন, গতকালই (সোমবার) পররাষ্ট্র সচিব বাংলাদেশ থেকে ফিরে এসেছেন। সফরের বিষয়ে তিনি আমাদের একেবারে পুঙ্খানুপুঙ্খ ব্রিফ করেছেন। আমার সব কিছু বলার সুযোগ নেই। তবে সব ধরনের গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন যা আপনারা কল্পনা করতে পারেন, এমপিরা তাকে (পররাষ্ট্র সচিব) করেছিলেন।”
সংখ্যালঘুদের বিষয়ে ঢাকার ‘গঠনমূলক দৃষ্টিভঙ্গি’ প্রত্যাশা করি: বিক্রম মিশ্রি
বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নিতে চায় ভারত: বিক্রম মিশ্রি
ব্রিফিংয়ে ২১-২২ জন এমপির উপস্থিত থাকার তথ্য দিয়ে তিনি বলেন, অনেক বিষয়ে তার কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে এবং পররাষ্ট্র সচিবও বিস্তারিত ও সোজাসাপ্টা সেসবের জবাব দিয়েছেন।
তবে সেসব বিষয়ের বিস্তারিত কিছু বলেননি শশী থারুর।
ভারতে ফিরে যাওয়ার আগে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব। সেখানে বাংলাদেশের সঙ্গে অতীতের মত ভবিষ্যতেও ভারত ইতিবাচক ও গঠনমূলক সম্পর্ক এগিয়ে নিতে চায় বলে তার দেশের অবস্থান তুলে ধরেন।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে সাক্ষাত শেষে তিনি বলেন, “আমরা অতীতে যেমন দেখেছি এবং ভবিষ্যতেও তেমনই দেখতে চাই। এই সম্পর্ককে আমরা সবসময় জনগণকেন্দ্রিক এবং জনগণের ভিত্তিতে সম্পর্ক হিসেবে মনে করি।”
বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা ও সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় ও কূটনৈতিক স্থাপনায় হামলার ঘটনায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে উদ্বেগও প্রকাশ করেছেন বলেও জানান তিনি।
তিনি বলেন, "একই সঙ্গে, আমাদের সাম্প্রতিক কিছু ঘটনা ও বিষয় নিয়ে আলোচনা করার সুযোগ হয়েছে এবং আমি আমাদের উদ্বেগগুলো তুলে ধরেছি।
যেখানে ছিলাম, সেখান থেকেই আবার শুরু করতে চাই: বিক্রম মিশ্রি
সম্পর্কের 'মেঘ' দূর করতে চায় দুদেশই: রিজওয়ানা
"যার মধ্যে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা ও কল্যাণ সম্পর্কিত বিষয়গুলোও রয়েছে। আমরা কিছু দুঃখজনক ঘটনার বিষয়ে আলোচনা করেছি, যেমন সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় ও কূটনৈতিক স্থাপনার ওপর হামলার ঘটনা।"
অপরদিকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব জসীম উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ভারতের পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে বৈঠকে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা ও তাদের স্বাধীনভাবে ধর্মচর্চার বিষয়টি অভ্যন্তরীণ হিসেবে তুলে ধরে এ নিয়ে অন্য দেশের মন্তব্য ‘সমীচিন নয়’ বলে বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরা হয়েছে।
দু'দেশের মধ্যে আস্থা ফেরাতে বাংলাদেশ সম্পর্কে নেতিবাচক প্রচারণা বন্ধে ভারতের ভূমিকার প্রত্যাশার কথাও বলেন তিনি।
ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে বাংলাদেশে সবার স্বাধীনভাবে ধর্ম চর্চা করে আসছে। এ বিষয়ে কোনো ধরনের বিভ্রান্তি এবং অপপ্রচারের সুযোগ নেই বলেও মন্তব্য করেন তিনি।