Published : 23 May 2025, 04:23 PM
যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে ইসরায়েলি দূতাবাসের দুই কর্মীকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় দেশটির এক ফেডারেল আদালতে মার্কিন নাগরিক এলিয়াস রড্রিগেজ এর বিরুদ্ধে হত্যা মামলার অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। গ্রেপ্তারের পর সন্দেভাজন রড্রিগেজ পুলিশকে বলেছেন, “আমি এটা ফিলিস্তিনের জন্য করেছি, গাজার জন্য করেছি।”
শিকাগোতে জন্ম নেওয়া রড্রিগেজের (৩১) বিরুদ্ধে বৃহস্পতিবার দুটি পূর্ব-পরিকল্পিত হত্যা, বিদেশি কর্মকর্তা হত্যার অভিযোগসহ আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে সহিংস অপরাধ ঘটানোর অভিযোগ আনা হয়।
রয়টার্স লিখেছে, বুধবার রাতে ওয়াশিংটনে আমেরিকান জিউইশ কমিটি আয়োজিত তরুশ পেশাদার ও কূটনৈতিক এক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে ফেরার সময় একদল লোকের ওপর রড্রিগেজ গুলি চালান বলে অভিযোগে বলা হয়েছে।
নিহতরা হলেন ইয়ারোন লিশিনস্কি (৩০) ও সারা লিন মিলগ্রিম (২৬) । এই দুই ইসরায়েলি তরুণ-তরুণী শিগগিরই বিয়ের পরিকল্পনা করেছিলেন। তাদের বন্ধু ও সহকর্মীরা জানিয়েছেন, এই জুটি ইহুদি-আরব মৈত্রী গড়ে তুলতে কাজ করছিলেন।
ঘটনাস্থলে গ্রেপ্তারের সময় রড্রিগেজ চিৎকার করে বলে, “ফিলিস্তিনের জন্য করেছি, গাজার জন্য করেছি।”
প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য, তাকে আটক করার পরও সে ‘ফ্রি ফিলিস্তিন’ বলে স্লোগান দিতে থাকে।
এদিকে, ঘটনার পরপরই বিভিন্ন দেশে ইসরায়েলি দূতাবাসগুলোর নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে রয়টার্স।
ওয়াশিংটনের প্রধান ফেডারেল প্রসিকিউটর জিনিন পিরো এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে জানান, অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ মৃত্যুদণ্ডযোগ্য।
পিরো বলেন, “আমরা এটিকে ঘৃণাজনিত অপরাধ ও সন্ত্রাসবাদের অপরাধ হিসেবে তদন্ত করছি।”
ফেডারেল তদন্ত সংস্থা এফবিআই জানিয়েছে, তারা রড্রিগেজের রাজনৈতিক মতাদর্শ ও সম্ভাব্য লেখালেখি পরীক্ষা করছে। ঘটনার ঠিক আগে ‘এক্স’-এ পোস্ট হওয়া একটি লেখাকে কেন্দ্র করে সন্দেহ তৈরি হয়েছে, যা ‘রড্রিগেজ’-এর নামে সই করা।
`এস্কেলেট ফর গাজা, ব্রিং দ্যা ওয়ার হোম’ শিরোনামে পোস্টটি ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ তোলে এবং “সশস্ত্র প্রতিক্রিয়ার নৈতিকতা” নিয়ে আলোচনা করে।
রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা ও অতীত পরিচয়
রড্রিগেজ একসময় শিকাগোর ‘পার্টি ফর সোশালিজম অ্যান্ড লিবারেশন’-এর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন; তবে সংগঠনটি জানিয়েছে ২০১৭ সালেই তাদের সঙ্গে তার সম্পর্ক শেষ হয়। একইভাবে ‘আনসার কোয়ালিশন’ নামের একটি সংগঠনের সঙ্গেও তার সম্পৃক্ততা ছিল বলে ২০১৮ সালের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়।
বর্তমানে তিনি ‘আমেরিকান অস্টিওপ্যাথিক ইনফরমেশন অ্যাসোসিয়েশন’-এ চাকরি করছিলেন। এর আগে তিনি ‘দ্য হিস্টরিমেকার্স’ নামক এক আফ্রিকান-আমেরিকান ইতিহাসভিত্তিক সংস্থার গবেষক হিসেবে কাজ করেছেন এবং বিভিন্ন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানে কনটেন্ট রাইটার হিসেবেও কাজ করেছেন।
২০১৮ সালে তিনি ইউনিভার্সিটি অব ইলিনয় শিকাগো থেকে ইংরেজিতে স্নাতক সম্পন্ন করেন। এফবিআইয়ের বরাতে জানা যায়, হামলার একদিন আগে তিনি শিকাগো থেকে ওয়াশিংটনে আসেন।
পরদিন রাতে হামলার আগে তাকে ঘটনাস্থলের বাইরে পায়চারি করতে দেখা যায়। ঘটনার সময়ের এক ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, তিনি গুলি চালান এবং আহত অবস্থায় দুইজন মাটিতে পড়ে যাওয়ার পরও গুলি চালিয়ে যান।
সারা মিলগ্রিম উঠে বসার চেষ্টা করলে তার দিকেও আরও গুলি চালান তিনি। এরপর বন্দুক ফেলে দিয়ে একটি লাল কেফিয়াহ রুমাল বের করে নিজেই বলেন, “আমি করেছি।”
পরে ঘটনাস্থল থেকে একটি ৯ এমএম পিস্তল, ২১টি গুলির খোসা ও একটি ম্যাগাজিন উদ্ধার করা হয়।
রয়টার্সের তথ্য অনুযায়ী, অস্ত্রটি তিনি ৫ বছর আগে ইলিনয় থেকে কিনেছিলেন।
এদিকে, এই হত্যাকাণ্ডের পর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, “এই ভয়াবহ হত্যাকাণ্ড, যেটি স্পষ্টতই ইহুদি-বিদ্বেষ থেকে উৎসারিত, অবিলম্বে বন্ধ হওয়া দরকার। ঘৃণা ও চরমপন্থার কোনও স্থান আমেরিকায় নেই।”
অন্যদিকে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু বলেন, “ইহুদি-বিদ্বেষ এবং ইসরায়েল-বিরোধী উস্কানির ভয়াবহ রূপ আমরা আজ দেখলাম। এর বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যেতে হবে।”
এই হামলার ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রে গাজা যুদ্ধ ঘিরে ইসরায়েল সমর্থক ও ফিলিস্তিনপন্থি আন্দোলনের মধ্যে উত্তেজনা আরও বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ইতোমধ্যে ট্রাম্প প্রশাসন বিক্ষোভকারীদের ‘উগ্র’ আখ্যা দিয়ে গ্রেপ্তার করেছে এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে হওয়া বিক্ষোভ দমনে কঠোর অবস্থান নিয়েছে।