Published : 02 Mar 2025, 10:34 PM
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টারমার বলেছেন, রাশিয়ার সঙ্গে ইউক্রেইনের যুদ্ধ বন্ধের একটি পরিকল্পনা নিয়ে যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স কিইভের সঙ্গে কাজ করছে। পরে ওই পরিকল্পনা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা হবে।
রোববার বিবিসি ওয়ানের এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, এই মুহূর্তে তার মূল লক্ষ্যই হচ্ছে ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি আর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে ‘সেতু’ হিসেবে কাজ করা।
ইউক্রেইন যুদ্ধ বন্ধে রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তি করা নিয়ে শুক্রবার হোয়াইট হাউজে তুমুল বাকবিতণ্ডায় জড়ান ট্রাম্প ও জেলেনস্কি। এই ঘটনা ইউরোপের সঙ্গে ওয়াশিংটনের সম্পর্কেও কাঁটা হয়ে দাঁড়াতে পারে বলে অনেকে আশঙ্কা করছেন।
হোয়াইট হাউজে ওই উত্তপ্ত বাকবিতণ্ডা দেখেছেন কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে স্টারমার বলেন, কেউই আসলে এমন কিছু দেখতে চায় না। ঘটনাটি নিয়ে কথা বলতে তার যে ‘অস্বস্তি’ হচ্ছে তা স্বীকার করতেও দ্বিধাবোধ করেননি এ ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী, জানিয়েছে বিবিসি।
স্টারমার জানান, ওই ঘটনার পরপরই তিনি ইউক্রেইন ও যুক্তরাষ্ট্রের দুই প্রেসিডেন্টকে ফোন করেন।
“গন্তব্যে যাওয়ার জন্য নানান পথ থাকে। তার একটি হলো, আমরা সবাই কতটা ক্ষুব্ধ বা কতটা নই তা নিয়ে আলাপ করে বাকবিতণ্ডাকে আরও সামনের দিকে নিয়ে যাওয়া, আরেকটি বিকল্প হচ্ছে জামার হাতা গুটিয়ে নিয়ে দ্রুত দু’জনকে ফোন করা,” বলেছেন তিনি।
দুই প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কথা বলার পর ইউরোপের নেতৃস্থানীয় দেশগুলোর ভূমিকা নিয়ে ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি।
“কারণ আমার প্রতিক্রিয়া ছিল- আমাদের সেতুবন্ধন গড়তে হবে, কোনো একটা পথ বের করতে হবে যেখানে আমরা সবাই একসঙ্গে কাজ করতে পারি, কেননা শেষ পর্যন্ত আমাদের হাতে আছে তিন বছরের একটি রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ, আমাদের দীর্ঘস্থায়ী শান্তি অর্জন করতে হবে,” বলেছেন স্টারমার।
লেবার পার্টির এ নেতা স্কটল্যান্ডের ফার্স্ট মিনিস্টার এসএনপি-র জন সুইনির একটি ডাকও উড়িয়ে দিয়েছেন। সুইনি চাইছিলেন, ইউক্রেইনে নিয়ে অবস্থানের কারণে ট্রাম্পের যুক্তরাজ্য সফরের আমন্ত্রণ প্রত্যাহার করে নেওয়া হোক।
“সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় কী, তা উপলব্ধি না করেই এসএনপি বা অন্য কারও দ্বারা প্রভাবিত হবো না আমি, যারা এই কথার লড়াইকে আরও তুমুল করতে চায়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ইউরোপের শান্তি,” বলেছেন তিনি।
লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতা এড ডেভি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর এই অবস্থানকে সমর্থন করেছেন। বলেছেন, আমন্ত্রণ প্রত্যাহার নয়, উল্টো ইউক্রেইনের নিরাপত্তা নিশ্চয়তা নিশ্চিতে ওই আমন্ত্রণকে কাজে লাগানো যেতে পারে।
বিবিসি ওয়ানকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে স্টারমার দৃঢ়তার সঙ্গ বলেছেন, ট্রাম্প দীর্ঘস্থায়ী শান্তি চান।
মার্কিন প্রেসিডেন্টকে বিশ্বাস করা যায় কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবেও তিনি ‘হ্যাঁ’ বলেন।
জেলেনস্কিকেও বিশ্বাস করা যায়, কিন্তু রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে নয়, যে কারণে যে কোনো শান্তি চুক্তির ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে নিরাপত্তা নিশ্চয়তা প্রয়োজন, বলেছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী।
ইউরোপের দেশগুলোকে নিজেদের প্রতিরক্ষায় ব্যয় বাড়াতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
“গত তিন বছর ধরে ইউরোপ এই খাতে ব্যয় বাড়িয়েছে, কিন্তু নিজেদের প্রতিরক্ষা ও সুরক্ষায় আরও অনেক কিছু করতে হবে। যে কারণে আমি ব্যয় বাড়াতে বলছি। আমাদের সক্ষমতা বাড়াতে হবে, সমন্বয়ও বাড়াতে হবে, কেননা ইউক্রেইনের সংঘাতে আমরা সেখানে যে সমন্বয় নেই, তা দেখেছি,” বলেছেন স্টারমার।