Published : 16 Apr 2025, 02:21 PM
সুদানে সামরিক সরকারের পাল্টায় বিকল্প সরকার গঠনের ঘোষণা দিয়েছে দুই বছর ধরে লড়াই চালিয়ে যাওয়া র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ)।
আধাসামরিক এই বাহিনীর নেতা মোহামেদ হামদান ‘হেমেদতি’ দাগালো বলেছেন, তারাই কেবল ‘সুদানের বাস্তবসম্মত ভবিষ্যৎ নির্মাণ’ করতে পারবেন।
ক্ষমতার দ্বন্দ্বে দুই বছর আগে সামরিক বাহিনীর সঙ্গে আরএসএফের যে রক্তক্ষয়ী সংঘাত শুরু হয়, তা এরই মধ্যে উত্তর আফ্রিকার দেশটিতে বিশ্বের সর্ববৃহৎ মানবিক সঙ্কট সৃষ্টি করেছে।
গৃহযুদ্ধের দ্বিতীয় বর্ষপূর্তিতে লন্ডনে উচ্চ-পর্যায়ের একটি সম্মেলনের মধ্যেই আরএসএফের এ পাল্টা সরকার গঠনের ঘোষণা এল, জানিয়েছে বিবিসি।
সুদানের দারফুরে সেনাবাহিনীর সঙ্গে আরএসএফের এখনো তীব্র লড়াই চলছে। সেনাবাহিনী বলেছে, তারা আল-ফাশের শহরের বাইরে আরএসএফের অবস্থানে বোমা হামলা চালিয়েছে।
দুই পক্ষের এই লড়াইয়ের কারণে জমজম শরণার্থী শিবির থেকে লাখো মানুষ পালিয়ে অন্যত্র চলে গেছে।
“আমরা আধিপত্য চাই না, ঐক্য চাই। সুদানি পরিচয়ের ওপর কোনো গোষ্ঠী, অঞ্চল বা ধর্মের একচেটিয়া অধিকার নেই বলে আমরা বিশ্বাস করি,” সরকার গঠনের ঘোষণা দিয়ে টেলিগ্রামে দেওয়া বিবৃতিতে বলেন হেমেদতি।
তিনি জানান, তার ‘শান্তি ও ঐক্যের’ সরকার কেবল আরএসএফ-নিয়ন্ত্রিত এলাকাতেই শিক্ষা, স্বাস্থ্যের মতো জরুরি পরিষেবা নিশ্চিত করবে না, সমগ্র দেশেই এসব সুবিধা দেবে।
সুদানের সেনাপ্রধান জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহানের সঙ্গে আরএসএফের প্রধান জেনারেল হেমেদতির দ্বন্দ্বে ২০২৩ সালের ১৫ এপ্রিল থেকে দেশটিতে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। দুই বছরের যুদ্ধ এরই মধ্যে দেশটির দেড় লাখের বেশি মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। বাস্তুহারা হয়েছেন ১ কোটি ২০ লাখের বেশি মানুষ।
জাতিসংঘ বলছে, দারফুরে আরএসএফের সাম্প্রতিক হামলাতেই ৪০০-র বেশি মানুষ নিহত হয়েছে বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জেনেছে তারা।
দুই বছরের যুদ্ধে আরএসএফ ও সেনাবাহিনী উভয়ের বিরুদ্ধেই গণহত্যা, যৌন সহিংসতাসহ যুদ্ধাপরাধের নানান অভিযোগ উঠেছে।
নর্থ দারফুরের রাজধানী আল-ফাশেরে সাম্প্রতিক লড়াই লাখ লাখ মানুষকে জমজম শরণার্থী শিবির থেকে পালিয়ে ৭০ কিলোমিটার দূরের তাওইলা শহরে যেতে বাধ্য করেছে বলে জানিয়েছে মেডিসিনস স্যানস ফ্রন্টিয়ার্স (এমএসএফ)।
অনেকেই মারাত্মক পানিশূন্যতা নিয়ে তাওইলা পৌঁছান, তৃষ্ণায় কিছু শিশু পথেই মারা পড়েছে বলেও জানিয়েছে তারা।
আল-ফাশেরের আশপাশে অস্থায়ী শিবিরগুলোতে আশ্রয় নেওয়া ৭ লাখের বেশি মানুষের সিংহভাগই দুর্ভিক্ষের মতো পরিস্থিতির মুখোমুখি বলে ত্রাণ সংস্থাগুলো অনেক দিন ধরেই বলে আসছিল। নিরাপত্তা ঝুঁকিসহ নানা কারণে সেখানে ত্রাণ সরবরাহও বেশ কঠিন।
মঙ্গলবার লন্ডনে সুদান পরিস্থিতি নিয়ে হওয়া আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যুক্তরাজ্য এই শরণার্থীদের জন্য অতিরিক্ত প্রায় ১৬ কোটি ডলারের খাদ্য ও ওষুধ সহায়তা দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে।
“অনেকেই সুদানের আশা ছেড়ে দিয়েছেন, কিন্তু এটা অন্যায়, এটা নৈতিকভাবে অন্যায় যখন আমরা দেখছি অনেক বেসামরিকের শিরশ্ছেদ, ছোট ছোট বাচ্চারা যৌন সহিংসতার শিকার হচ্ছে, বিশ্বের যে কোনো স্থানের তুলনায় বেশি মানুষ সেখানে দুর্ভিক্ষের মুখোমুখি, তখন আমরা মুখ ফিরিয়ে নিতে পারি না,” বলেছেন ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি।
লন্ডনের সম্মেলন থেকে সুদানে অবিলম্বে স্থায়ী যুদ্ধবিরতি নিশ্চিতের আহ্বানও এসেছে। আফ্রিকান ইউনিয়ন বলেছে, আরএসএফ ও সেনাবাহিনীর হাতে সুদানকে বিভক্ত হতে দেবে না তারা।
সুদানের দারফুরে বিদ্রোহীদের হামলায় 'চারশর বেশি নিহত', বলছে জাতিসংঘ