Published : 09 Jun 2025, 01:51 PM
অবৈধ অভিবাসী আটক অভিযানের প্রতিবাদে বিক্ষোভ-সংঘর্ষে উত্তাল যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেস শহরে প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েনকে ‘বেআইনি’ বলে অভিহিত করেছেন ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের গভর্নর গ্যাভিন নিউজম।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে রোববার ট্রাম্পের নির্দেশমতো ন্যাশনাল গার্ডের ২০০০ রক্ষী ক্যালিফোর্নিয়ার সবচেয়ে বড় শহরটির সড়কগুলোতে মোতায়েনের করা হয়েছে। অবৈধ অভিবাসী আটক অভিযানের প্রতিবাদে নগরীটিতে তিন দিন ধরে ব্যাপক বিক্ষোভ ও সংঘর্ষ চলছে।
লস অ্যাঞ্জেলেস পুলিশ স্থানীয় সময় রোববার রাতে এক নিউজ ব্রিফিংয়ে জানিয়েছে, শনিবার রাতে ২৯ জন ও রোববার অন্তত ১০ জনকে গ্রেপ্তারের পরও পুলিশ গ্রেপ্তার অব্যাহত রেখেছে।
নগরীটিতে ফেডারেল ইমিগ্রেশন এনফোর্সমেন্টের অভিযানের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের মধ্যে পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ শুরু হয়। ন্যাশনাল গার্ডের সেনারা লস অ্যাঞ্জেলেসের ফেডারেল ভবনগুলো পাহারা দিচ্ছে, জানিয়েছে রয়টার্স।
লস অ্যাঞ্জেলেস পুলিশ বেশ কয়েকটি সমাবেশকে ‘অবৈধ’ বলে ঘোষণা করেছে। কিছু বিক্ষোভকারী তাদের দিকে ক্রংক্রিটের টুকরা, বোতল ও অন্যান্য দ্রব্য ছুড়ে মারছে বলে অভিযোগ করেছে পুলিশ।
সামাজিক মাধ্যমে আসা ভিডিওগুলোতে দেখা গেছে, লস অ্যাঞ্জেলেসের কেন্দ্রস্থলের সড়কগুলোতে রোববার সন্ধ্যায় আলফাবেটস ওয়েমোর বেশ কয়েকটি গাড়িতে আগুন জ্বলছে। আর ঘোড়ার উপরে থাকা লস অ্যাঞ্জেলেস পুলিশ বিক্ষোভকারীদের নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে।
বিক্ষোভকারীরা পুলিশের দিকে চিৎকার করে বলছে ‘তোমাদের লজ্জা পাওয়া উচিত!’, কিছু বিক্ষোভকারীকে কিছু ছুড়তে দেখা যায়। বিক্ষোভকারীদের একটি দল নগরীর কেন্দ্রস্থলের একটি রাস্তা আটকে রেখেছিল।
বিক্ষোভকারীদের কিছু দলের বেশ কয়েকজন মেক্সিকোর পতাকা বহন করছিলেন আর তারা নগরীর বিভিন্ন অংশে জড়ো হয়ে মার্কিন অভিবাসন কর্তৃপক্ষের নিন্দা জানিয়ে শ্লোগান দিচ্ছিলেন।
পার্টি ফর সোশ্যালিজম এন্ড লিবারেশন এর লস অ্যাঞ্জেলেস শাখা বিকালে নগরীর সিটি হলের সামনে একটি সমাবেশ করে।
ক্যালিফোর্নিয়া গভর্নর নিউজম জানিয়েছেন, তিনি লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টিতে ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েনে আদেশ প্রত্যাহারের জন্য ট্রাম্প প্রশাসনকে অনুরোধ জানিয়েছেন।
এমএসএনবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নিউজম জানিয়েছেন, এই মোতায়েন নিয়ে তিনি ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের পরিকল্পনা করেছেন। তার দাবি, প্রতিবাদকে ঘিরে ‘এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে ট্রাম্পের কারণে’।
তিনি অভিযোগ করে বলেছেন, “ট্রাম্প একটি সংকট তৈরির চেষ্টা করছেন। তিনি ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের সার্বভৌমত্ব লংঘন করছেন।”
সামাজিক মাধ্যম এক্স এ তিনি লিখেছেন, “এগুলো একজন স্বৈরশাসকের কাজ, একজন প্রেসিডেন্টের না।”
লস অ্যাঞ্জেলেসের পুলিশ প্রধান জিম ম্যাকডোনাল রোববার রাতের গণমাধ্যম বিফ্রিংয়ে বলেছেন, প্রতিবাদ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে।
এক্ষেত্রে ন্যাশনাল গার্ড দরকার কি না প্রশ্নে তিনি বলেন, “পুলিশ এখনই সেরকম কিছুতে যাবে না।”
কিন্তু এর সঙ্গে যোগ করে বলেন, “আজ রাতের সহিংসতা দেখে আমার মনে হচ্ছে আমাদের পুনর্মূল্যায়ন করতে হবে।”
সামাজিক মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে এক পোস্টে ট্রাম্প ম্যাকডোনালকে সেটিই করতে বলেছেন।
ট্রাম্প লিখেছেন, “তার করা উচিত, এখনই!!! এরপরও এইসব গুন্ডাদের পর পেতে দিও না। আমেরিকাকে আবার মহান করে তুলুন!!!”
হোয়াইট হাউজ নিউজমের সঙ্গে দ্বিমত করে দেওয়া বিবৃতিতে বলেছে, “প্রত্যেকেই এই বিশৃঙ্খলা, সহিংসতা ও অনাচার দেখেছে।”
যুক্তরাষ্ট্রের নর্দান কমান্ড জানিয়েছে, লস অ্যাঞ্জেলেসের তিন এলাকায় ক্যালিফোর্নিয়া ন্যাশনাল গার্ডের ৩০০ সদস্যকে মোতায়েন করা হয়েছে। তারা শুধু ফেডারেল কর্মী ও সম্পত্তিগুলোর সুরক্ষা দেবে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ সতর্ক করে বলেছেন, যদি লস অ্যাঞ্জেলেসে সহিংসতা অব্যাহত থাকে তাহলে পেন্টাগন সেনা মোতায়েনের জন্য প্রস্তুত আছে। নিকটবর্তী ক্যাম্প পেন্ডলটনে মার্কিন মেরিনা সেনারা ‘উচ্চ সতর্কাবস্থায়’ আছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
নর্দান কমান্ড জানিয়েছে, আদেশ পেলেই প্রায় ৫০০ মেরিন সেনা মোতায়েনের জন্য প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে।
লস অ্যাঞ্জেলেসের মেয়র ক্যারেন ব্যাস ন্যাশনাল গার্ড পাঠিয়ে উত্তেজনা উস্কে দেওয়ার জন্য ট্রাম্প প্রশাসনকে দায়ী করেছেন আর সহিংস হয়ে ওঠার জন্য বিক্ষোভকারীদেরও নিন্দা জানিয়েছেন।