Published : 09 May 2025, 09:44 PM
নেদারল্যান্ডসে হেগের একটি ছোট, নির্জন কক্ষে বন্দি জীবন কাটাচ্ছেন ফিলিপিন্সের সাবেক প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতের্তে। তার শাসনামলের মাদকবিরোধী অভিযানে হাজারো মানুষের মৃত্যুর ঘটনায় আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতের (আইসিসি) বিচারের মুখোমুখি তিনি।
কিন্তু ফিলিপিন্সে তার নিজ শহর দাভাওতে, সোমবারের নির্বাচনে মেয়র পদের টিকিটেও লড়ছেন দুতের্তে। পরিবারের শক্ত রাজনৈতিক ঘাঁটি হিসাবে সমর্থনের জোরে স্থানীয়ভাবে এ নির্বাচনে তার জয়ের সম্ভাবনা প্রবল,যদিও জাতীয় পর্যায়ে সেই প্রভাব অতটা নাও হতে পারে।
“তিনি মেয়র ও প্রেসিডেন্ট দুই পদে থেকে যা করে গেছেন, তা আমরা দেখেছি। মাদক কারবারিদের বিরুদ্ধে লড়াই থেকে শুরু করে দেশের জন্য তার অবদান আমাদের মনে আছে,” বলেন ক্যাফে কর্মী জেনিফার মাউম্বাস।
তার দোকানে দুতের্তের ছবি টাঙানো ছিল। তিনি বলেন, “যাই হোক না কেন, আমরা দুতের্তেকেই সমর্থন করি।” চলতি বছরের মার্চে আইসিসি-র অনুরোধে দুতের্তে গ্রেপ্তার হন। এটি ছিল তার প্রভাবশালী পরিবারে বড় ধাক্কা।
দুতের্তে আগে দাভাও নগরীর মেয়র ছিলেন। সে সময় তিনি অপরাধ দমনে কঠোর পন্থা অবলম্বন করেছিলেন। পরে দুতার্তে বলেছিলেন, তিনি প্রেসিডেন্ট হলে একইভাবে দেশজুড়ে অপরাধ দমন করবেন।
এই প্রতিশ্রুতি দিয়ে ২০১৬ সালের নির্বাচনে তিনি বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে ফিলিপিন্সের প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন। প্রেসিডেন্ট হিসাবে তিনি মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করেন।
এই অভিযানে ফিলিপিন্সজুড়ে হাজারো সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে হত্যা করা হয়। পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী, ছয় হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছিল, যদিও অধিকারকর্মীরা বলছেন, প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি। এই হত্যাকাণ্ড নিয়েই এখন তদন্ত করছে আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালত।
তবে দাভাওতে দুতের্তের সমর্থন থাকলেও এর বাইরে তার একইরকম সমর্থন না থাকার সম্ভাবনাই বেশি। ফিলিপিন্সের অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট ফার্দিন্যান্দ মার্কোস সাবেক প্রেসিডেন্ট দুতের্তের জন্মশহরে তার রাজনৈতিক চালিকাশক্তিকে কতটা অবদমন করতে পারবেন তার একটি পরীক্ষা এবারের নির্বাচন।
“দাভাওতে দুতের্তে নামটির এক ধরনের পৌরাণিক মর্যাদা আছে। কিন্তু জাতীয় পর্যায়ে এর প্রভাব অনেকটাই অনিশ্চিত,” বলেন ইউনিভার্সিটি অব মাকাতির প্রশাসন বিশেষজ্ঞ এডারসন তাপিয়া।
যদিও তার মতে, “তারা এখনও শক্ত অবস্থা ধরে রেখেছে, তবে ২০২৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে সেটা কতটা কাজে লাগবে, তা এখনই বলা যাচ্ছে না। বিশেষত, দুতের্তের মেয়ে ভাইস প্রেসিডেন্ট সারা দুতের্তে এখন অভিশংসনের মুখোমুখি।”
সারা ২০২৮ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় আছেন। কিন্তু বর্তমানে তিনি নিজেই রাজনৈতিক সংকটে জর্জরিত।
২০২২ সালে সাবেক প্রেসিডেন্ট ফার্দিনান্দ মার্কোস পরিবারের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়েছিলেন সারা। এই জোট নির্বাচনে সফলও হয়েছিল। কিন্তু নীতি বিভাজন, ক্ষমতা লড়াই ও পরস্পরবিরোধী উচ্চাকাঙ্ক্ষা সেই সম্পর্ক ভেঙে দিয়েছে।
ভাঙনের শুরুটা হয় ফার্দিনান্দের ছেলে বংবং মার্কোস ক্ষমতা নেওয়ার কিছুদিন পর থেকেই। বর্তমানে মার্কোসকে হত্যার হুমকি দেওয়াসহ অন্যান্য অভিযোগে অভিশংসন প্রক্রিয়া চলছে সারার বিরুদ্ধে।
সোমবারের নির্বাচনে দেশজুড়ে ১৮ হাজারের বেশি পদে ভোট হবে, যার মধ্যে রয়েছে ৩১৭টি কংগ্রেস আসন এবং হাজারো স্থানীয় পদ। তবে সবচেয়ে নজর কাড়ছে ১২টি সিনেট আসন, যেখানকার ২৪ সদস্যই জাতীয় রাজনীতিতে প্রভাবশালী এবং অভিশংসন মামলার বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
মার্কোসপন্থি প্রার্থীরা সিনেট দৌড়ে এগিয়ে থাকলেও, দুতের্তের গ্রেপ্তারের পর তার প্রতি সহানুভূতি সঞ্চার হয়েছে, বিশেষ করে দাভাওয়ে।
২০১৬ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট থাকা দুতের্তে তার মাদকবিরোধী অভিযানকে সবসময় সাফাই দিয়েছেন। বলেছেন, এটি দেশের নিরাপত্তার জন্য দরকার ছিল এবং পুলিশকে কেবল আত্মরক্ষার ক্ষেত্রেই গুলি চালাতে বলা হয়েছিল।
তবে তার গ্রেপ্তারের ঘটনা দাভাওয়ের মানুষের ভাবাবেগকে স্পর্শ করেছে। “আমরা কেঁদেছি। তিনদিন ঘুমোতে পারিনি,” বলেন স্থানীয় এক রেস্তোরাঁ মালিক। তার রেস্তোরাঁয় দুতের্তের জীবনের নানা পর্যায়ের ছবি টাঙানো আছে।
আগামী ১২ মে’র নির্বাচনে দুতের্তে জয় পেলে তা তার মেয়ে সারার প্রেসিডেন্ট হওয়ার আকাঙ্খা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
“দুতের্তেও তখন তার ক্ষমতাকে দাভাও এবং মিন্দানাও এলাকায় পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কাজে লাগাতে পারবেন”- বলেছেন, ফিলিপিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিজ্ঞানের অধ্যাপক জেন ফ্রাঙ্কো।
তবে ফিলিপিন্সের কর্মকর্তারা বলছেন, দুতের্তে জয়ী হলেও তিনি মেয়র পদে অধিষ্ঠিত হতে পারবেন না। সেই দায়িত্ব তখন যাবে সহকারী মেয়রের কাছে। খুব সম্ভবত এ দায়িত্ব যেতে পারে দুতের্তের ছোট ছেলে সেবাস্তিয়ানের হাতে।
তবে দাভাওয়ে অনেকেই দুতের্তের প্রত্যাবর্তন চাইলেও সবাই যে তা চাইছেন তা নয়, কেউ কেউ পরিবর্তনও চাইছেন। এমনই একজন বলেন, “আমরা একটু পরিবর্তন চাই। শান্তি চাই, সংঘাত নয়, খুনোখুনি নয়।”