Published : 18 Jun 2025, 01:56 AM
ইরানে নজিরবিহীন হামলার পর শুক্রবার এক ভাষণে ইরানিদের উদ্দেশে সরাসরি কথা বলেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ইংরেজিতে দেওয়া সেই ভাষণে তিনি বলেন, ‘দুষ্ট ও নিপীড়ক শাসকের বিরুদ্ধে’ রুখে দাঁড়ানোর সময় এসেছে।
ইসরায়েলের সামরিক অভিযান ইরানিদের ‘স্বাধীনতা অর্জনের পথ পরিষ্কার করছে’ বলেও তিনি দাবি করেন।
এখন, ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে সংঘাত যখন আরও তীব্র হচ্ছে, অনেকেই তখন প্রশ্ন তুলছেন– ইসরায়েলের আসল উদ্দেশ্য কী?
ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের পারমাণবিক ও ব্যালিস্টিক মিসাইল কর্মসূচি বন্ধ করাই কি ইসরায়েলের মূল লক্ষ্য, নেতানিয়াহু যা হামলার প্রথম রাতে বলেছিলেন?
নাকি তিনি যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে চলমান আলোচনাকে পুরোপুরি ভণ্ডুল করে দিতে চান, যাতে পারমাণবিক কর্মসূচি সীমিত রাখার বিনিময়ে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার চাপ কমিয়ে আনার মত কোনো সমঝোতায় তেহরান পৌঁছাতে না পারে।
অথবা ইরানিদের ‘স্বাধীনতা অর্জনের পথ পরিষ্কার করার’ যে বার্তা নেতানিয়াহু দিয়েছেন, সেটা কি দেশটির ধর্মীয় শাসন ব্যবস্থাকে উৎখাতের আরও বড় কোনো লক্ষ্যের ইঙ্গিত?
এমন কথাও তিনি বলেছেন যে ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনিকে হত্যা করারই সংঘাত বন্ধের ‘সবচেয়ে সহজ’ উপায়।
এক বিশ্লেষণী প্রতিবেদনে এসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছে বিবিসি।
জেনারেল থেকে ট্রাম্প: কার কথা শোনেন নেতানিয়াহু?
বিবিসি লিখেছে, সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে ইহুদি রাষ্ট্র ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা নেতানিয়াহু তার রাজনীতির ক্যারিয়ার জুড়ে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানকে ‘হুমকি’ হিসেবে দেখিয়ে এসেছেন।
জাতিসংঘে বোমার কার্টুন দেখানো থেকে শুরু করে, গত ২০ মাস ধরে গাজায় চলা রক্তাক্ত অভিযানের মধ্যেও তিনি বারবার দাবি করে গেছেন–ইরানই ‘সবচেয়ে বড়’ হুমকি ।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট এবং ইসরায়েলি জেনারেলরা গত কয়েক বছরে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালানো থেকে নেতানিয়াহুকে কয়েকবার থামিয়েছেন, এমন কথাও এসেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প যদিও বলেছেন, ইরানে হামলার ‘সবুজ সংকেত’ তিনি দেননি। তবে অন্তত ‘হলুদ’ সংকেতও যদি দেওয়া হয়ে থাকে, সেটাই নেতানিয়াহুর ট্রিগার চেপে ধরার জন্য যথেষ্ট ছিল।
একজন পশ্চিমা কর্মকর্তার ভাষায়, নেতানিয়াহু এখন পুরোপুরি খেলায় নেমে পড়েছেন। তার মতে, ইসরায়েলের প্রধান লক্ষ্য ইরানের পরমাণু কর্মসূচি পঙ্গু করে দেওয়া।
তবে নেতানিয়াহুর ওই পদক্ষেপের কড়া সমালোচনা এসেছে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ এবং আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থা আইএইএ থেকে।
সংস্থাটির মহাপরিচালক রাফায়েল গ্রোসি বলেছেন, “আমি বহুবার বলেছি, কোনো প্রেক্ষাপটেই পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালানো উচিত নয়।”
বিশেষজ্ঞরা বলছে, আন্তর্জাতিক আইনের দৃষ্টিকোণ থেকেও ইসরায়েলের এরকম হামলা অবৈধ।
তবে অনেকেই এখন প্রশ্ন তুলছেন, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী এবং তার শীর্ষ উপদেষ্টা বা মিত্রদের লক্ষ্য এক কি না।
চ্যাথাম হাউজের মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা কর্মসূচির পরিচালক ড. সানাম ভাকিল বলেন, “ইসরায়েলের রাজনৈতিক ও সামরিক নেতৃত্ব ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে বড় ধরনের ধাক্কা দিতে চায়। তবে নেতানিয়াহু ব্যক্তিগতভাবে হয়ত ইরানে ক্ষমতার পট পরিবর্তনের ওপর জোর দিচ্ছেন।
তার মতে, ইরানের পরমাণু কর্মসূচি বাধাগ্রস্ত করা ইসরায়েলের পক্ষে কঠিন হলেও সেটা সম্ভব। কিন্তু হামলা চালিয়ে বা যুদ্ধের মধ্য দিয়ে স্বল্প সময়ে ইরানে ইসলামিক শাসনের অবসান ঘটানো অনেক কঠিন।
ইরানের পরমাণু কর্মসূচি ধ্বংসের লক্ষ্য?
নেতানিয়াহু দাবি করেছেন, এই অভিযান ইসরায়েলের ‘অস্তিত্বের প্রতি এক হুমকির’ ধ্বংস করতে প্রাকপ্রস্তুতিমূলক হামলা। তার ভাষায়, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করার পথে ‘শেষ পর্যায়ে’ পৌঁছে গেছে।
ইসরায়েলের পশ্চিমা মিত্ররাও বার বার বলে আসছে, ইরানকে সীমা লংঘনের সুযোগ দেওয়া চলবে না। তবে অনেকেই নেতানিয়াহুর ওই দাবির বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।
ইরান পারমাণবিক বোমা তৈরির চেষ্টার কথা বরাবরই অস্বীকার করে আসছে। মার্কিন ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্সের প্রধান তুলসী গ্যাবার্ড গত মার্চে কংগ্রেসকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দাদের বিবেচনায় ইরান এখনো পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করছে না।
আইএইএ তাদের সর্বশেষ প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ইরান ৬০ শতাংশ মাত্রায় সমৃদ্ধ যে পরিমাণ ইউরেনিয়াম মজুদ করেছে, তা বোমার তৈরির জন্য ৯০ শতাংশ মাত্রায় সমৃদ্ধ করা থেকে এক ধাপ দূরে। ৯০ শতাংশ মাত্রায় সমৃদ্ধ করা গেলে ওই মজুদ দিয়ে নয়টি পারমাণবিক বোমা বানানো সম্ভব।
ইসরায়েলের হামলার প্রথম কয়েক দিনে ইরানের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাকে নিশানা করা হয়েছে – নাতাঞ্জ, ইস্পাহান ও ফোরদো।
আইএইএ বলছে, নাতাঞ্জে ভূমির ওপরে নির্মিত একটি পরীক্ষামূলক এনরিচমেন্ট প্ল্যান্ট হামলায় ধ্বংস হয়েছে। ইস্পাহানে চারটি ‘গুরুত্বপূর্ণ ভবন’ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ইসরায়েল বলছে, তাদের হামলায় এসব পারমাণবিক কেন্দ্রের ‘গুরুতর’ ক্ষতি হয়েছে। আর ইরানের দাবি, ক্ষতির পরিমাণ ‘সীমিত’।
ইরানের পরমাণু কর্মসূচির পেছনের মাথাগুলোকেও কেটে ফেলতে চায় ইসরায়েল। সেজন্য তারা এখন পর্যন্ত অন্তত ৯ জন পারমাণবিক বিজ্ঞানী এবং অনেক শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তাকে হত্যা করেছে। সামরিক ঘাঁটি, ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণকেন্দ্র ও কারখানার পাশাপাশি তেলকূপ ও অর্থনৈতিক স্থাপনাতেও এখন হামলা করছে ইসরায়েল।
বিবিসি লিখেছে, ইরানের বিশাল পরমাণু কর্মসূচিতে চরম আঘাত হানতে গেলে ফোরদোর গোপন স্থাপনার অনেক বেশি ক্ষতি করতে হবে। ইরানের ওই পারমাণবিক স্থাপনার অবস্থান পাহাড়ের নিচে, ভূগর্ভে। বিশেষজ্ঞদের অনেকের ধারণা, অত্যন্ত সুরক্ষিত ওই কেন্দ্রেই ইরান তার হাতে থাকা ইউরোনিয়ামের বেশিভাগটা মজুদ করেছে।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম বলছে, ফোরদোর ওই কেন্দ্রের ঢোকার রাস্তা কঠিন করে তোলাই এখন তাদের লক্ষ্য।
পাহাড়ের নিচে ভূগর্ভের ওই কেন্দ্র ধ্বংস করার মত বাংকারভেদী বোমা ইসরায়েলের কাছে নেই। তবে মার্কিন বিমান বাহিনীর কাছে আছে এমওপি নামে পরিচিত ৩০ হাজার পাউন্ড ওজনের ওই বোমা আছে। যদিও সেটা কার্যকরভাবে ব্যবহার করতে বহুবার হামলা চালাতে হবে।
সাবেক মার্কিন কর্মকর্তা ও ইরান বিশেষজ্ঞ রিচার্ড নেফিউ বলেন, “পরিস্থিতি এরকম হতে পরে যে, নেতানিয়াহু হয়ত ট্রাম্পকে ফোন করে বলবেন, ‘আমি বাকি সব করে ফেলেছি, আমি এটা নিশ্চিত করেছি যে মার্কিন বি টু বোমারু বিমানগুলো ইরানের আকাশে কোনো বাধার মুখে পড়বে না। কিন্তু ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি আমি শেষ করতে পারছি না’।”
বিবিসি লিখেছে, সেরকম ফোন পেলে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কী করবেন, তা এখনো স্পষ্ট নয়।
শান্তি আলোচনা ভণ্ডুলের কৌশল?
গত সপ্তাহে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ছিলেন অনেকটা দ্যোদুল্যমান। একবার তিনি ইসরায়েলকে সাবধান করে বললেন, ইসরায়েল হামলা করলে ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের পরমাণু আলোচনা ভেস্তে যেতে পারে। কিন্তু ইসরায়েল যখন সত্যিই হামলা করে বসল, তিনি বললেন “চমৎকার, সামনে আরো আসছে।”
আবার তিনি এমন কথাও বললেন, এই হামলা হয়ত ইরানকে আলোচনার টেবিলে ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করবে।
রোববার সোশ্যাল পোস্টে তিনি লেখেন, “ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে খুব শিগগিরই শান্তি আসছে! এখন অনেক ফোনকল ও বৈঠক চলছে।”
তেহরান এখন সন্দেহ করছে, মাসকাটে রোববার যে বৈঠক শুরু হওয়ার কথা ছিল, তা ছিল কেবল এই মিথ্যা ধারণা দেওয়ার কৌশল যে ইসরায়েল আসলে ইরানে হামলা করবে না। ইসরায়েল যখন শুক্রবার ভোরে হামলা করে বসল, ইরান তখন মোটেও প্রস্তুত ছিল না।
ইউরোপীয় কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনস-এর উপপরিচালক এলি জেরানমায়েহ আবার মনে করেন, ইসরায়েলের ওই নজিরবিহীন হামলার উদ্দেশ্য ছিল প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আলোচনার চেষ্টা নস্যাৎ করে দেওয়া, যাতে ইরান নতুন একটি চুক্তি করে তাদের পরমাণু কর্মসূচি জিইয়ে রাখার সুযোগ না পায়।
তিনি বলেন, “কারও কারও মনে হতে পারে যে ইরসালের হামলার পর ইরানকে রাজি করানো অনেক সহজ হয়ে গেছে। কিন্তু হামলার সময় ও পরিসর বিবেচনায় নিলে বোঝা যায়, আলোচনা পুরোপুরি ভণ্ডুল করতেই হামলা চালানো হয়েছে।”
ভেতরের খবর জানেন, এমন কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে বিবিসি লিখেছে, আলোচনা একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর খুব কাছাকাছি ছিল। কিন্তু বিষয়টি নির্ভর করছিল যুক্তরাষ্ট্রের ওপর। ট্রাম্প প্রশাসন চাইছিল ইরান পরমাণু সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি থেকে পুরোপুরি সরে আসুক। কিন্তু ইরান তাতে রাজি ছিল না। ফলে চুক্তি করতে হলে যুক্তরাষ্ট্রকে কিছু ছাড় দিতে হত।
ইরানের সঙ্গে ২০১৫ সালে করা যুক্তরাষ্ট্রের ঐতিহাসিক চুক্তি থেকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যখন সরে এলেন, তখনই ইরান ৩.৬৭ শতাংশ সমৃদ্ধকরণের সীমা অতিক্রম করে মজুদ বাড়াতে শুরু করে।
আর এবারের আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্র ইরানকে চুক্তি করার জন্য ৬০ দিন সময় দিয়েছিল, যা এরকম জটিল বিষয়ে সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর জন্য খুবই কম সময় বলে বিশেষজ্ঞদের ভাষ্য।
ঠিক ৬১তম দিনে ইরানে হামলা করে বসে ইসরায়েল।
ড. ভাকিল বলেন, “ওমানে আলোচনার পথ আপাতত শেষ। তবে আঞ্চলিক পর্যায়ে উত্তেজনা কমিয়ে বিকল্প পথ খোঁজার চেষ্টা চলছে।”
‘অননুমেয়’
তেহরানের অবস্থান থেকে দেখলে, এই সংঘাত কেবল ইউরেনিয়াম মজুদ কিংবা সুপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ে নয়।
জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক অধ্যাপক ভালি নাসর বলেন, “তারা মনে করে, ইসরায়েল চায় ইরানের সামরিক সক্ষমতা চূড়ান্তভাবে ধ্বংস করতে, ক্ষমতার ভারসাম্য পাল্টে দিতে এবং সম্ভব হলে ইসলামি প্রজাতন্ত্রকে উৎখাত করতে।”
বিবিসি লিখেছে, এখন, ইরসায়েল যখন চাপ বাড়িয়ে চলেছে, ইরানি জনগণের প্রতিক্রিয়া কেমন হবে, তা স্পষ্ট নয়।
৯ কোটি জনসংখ্যার দেশ ইরান বহু বছর ধরে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা ও দুর্নীতির চাপে ভুগছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতি, বেকারত্ব, পানি-বিদ্যুৎ ঘাটতি ও নারী স্বাধীনতা নিয়ে সেখানে বারবার বিক্ষোভ হয়েছে। সরকার সেসব বিক্ষোভ দমন করেছে কঠোর হাতে।
নাসর বলেন, “হামলার শুরুর দিকে যখন কিছু অজনপ্রিয় জেনারেল নিহত হল, তখন হয়ত ইরানের কিছু মানুষ স্বস্তি পেয়েছিল। কিন্তু এখন যখন অ্যাপার্টমেন্ট ভবনে হামলা হচ্ছে, বেসামরিক নাগরিক মারা যাচ্ছে, অবকাঠামো ধ্বংস হচ্ছে, তখন জনগণের মনোভাব পাল্টে যাচ্ছে।”
“আমি এমন পরিস্থিতি দেখি না যেখানে ইরানিরা কোনো আগ্রাসনকারীর পক্ষে যাবে; সেই আগ্রাসনকারী যখন তাদের দেশে বোমা ফেলছে, তারা এটাকে ‘মুক্তি’ ভাবতে পারবে না।”
অন্যদিকে নেতানিয়াহু তার বক্তব্যে হামলার লক্ষ্য আরো বিস্তৃত করার ইঙ্গিত দিয়েছেন।
শনিবার তিনি বলেছেন, “আয়াতুল্লাহর শাসনব্যবস্থার প্রতিটি স্থান এবং লক্ষ্যবস্তু আমরা আঘাত হানব।”
রোববার ফক্স নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে যখন তাকে প্রশ্ন করা হয়, এই অভিযানের লক্ষ্য কি ইরান সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরানো? তিনি বলেন, “সেটাও হতে পারে, কারণ ইরান সরকার এখন খুব দুর্বল অবস্থায় আছে।”
ইকোনমিস্ট-এর সাংবাদিক আনশেল পেফার মনে করেন, মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধের অংশ হিসেবে ইসরায়েল এখন ইরাসের শাসকদের মধ্যে নিয়ন্ত্রণ হারানোর ভয় উসকে দিতে চাইছে।
তিনি বলেন, “ইসরায়েলি গোয়েন্দা মহলে একটা কথা চালু আছে। ইরানে কবে সরকার ফেলে দেওয়া যাবে তা নিয়ে পূর্বাভাস দিতে যাওয়া অর্থহীন। সেটা আগামীকাল হতে পারে, আবার ২০ বছর পরও হতে পারে।”
পেফারের মতে, “নেতানিয়াহু সম্ভবত ওই বার্তায় বিশ্বাস করেন। তিনি এখন চার্চিলের মুডে আছেন।”
রোববার সন্ধ্যায় মার্কিন সংবাদমাধ্যমে খবর আসতে থাকে, ইরানের আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে হত্যার ইসরায়েলি পরিকল্পনা ট্রাম্প আটকে দিয়েছেন। দুটি মার্কিন সূত্র উদ্ধৃত করে রয়টার্স প্রথম ওই খবর দেয়।
তবে ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা বলেছেন, ইরানের রাজনৈতিক নেতৃত্ব ‘এই মুহূর্তে’ তাদের লক্ষ্য নয়।
জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা তজাচি হানেগবি এও বলেছেন, ওই ‘এই মুহূর্তে’ কথাটা সীমিত সময়ের জন্যই প্রযোজ্য।
বিবিসি লিখেছে, বর্তমান পরিস্থিতির চূড়ান্ত পরিণতি নির্ভর করছে এক অনিশ্চিত ও বিপজ্জনক সংঘাত এবং এক মার্কিন প্রেসিডেন্টের সিদ্ধান্তের ওপর, যিনি কখন কী করবেন, তা আগে থেকে বোঝা সম্ভব না।
মার্কিন মধ্যপ্রাচ্য প্রকল্পের সভাপতি ও সাবেক ইসরায়েলি সরকারি উপদেষ্টা ড্যানিয়েল লেভি বলেন, “সাফল্য অথবা ব্যর্থতা প্রায় পুরোপুরি নির্ভর করছে এই প্রশ্নের ওপর—যুক্তরাষ্ট্রকে এ সংঘাতে জড়ানো যাবে কি না। কারণ একমাত্র যুক্তরাষ্ট্রই পারে এ পরিস্থিতিকে দ্রুত কোনো নিষ্পত্তির দিকে নিয়ে যেতে।”