Published : 25 Nov 2024, 07:17 PM
জার্মানির সাবেক চ্যান্সেলর আঙ্গেলা মের্কেল বার্লিনে বিবিসি-র সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে তার শাসনামলে নেওয়া বিভিন্ন সিদ্ধান্তের সাফাই গেয়েছেন। বিশেষ করে, রাশিয়ার সঙ্গে তার গ্যাস চুক্তি এবং নেটোতে ইউক্রেইনের সদস্যপদ পাওয়ার চেষ্টা আটকে দেওয়ার সিদ্ধান্তের পক্ষে কথা বলেছেন তিনি।
মের্কেল বলেন, জার্মানির ফার্মগুলোকে সহায়তা করা এবং মস্কোর সঙ্গে শান্তি বজায় রাখার উদ্দেশ্য নিয়ে তিনি রাশিয়ার সঙ্গে গ্যাস চুক্তি করেছিলেন। আর ২০০৮ সালে ইউক্রেইনকে যদি পশ্চিমা সামরিক জোট নেটোতে যোগদানে তিনি বাধা না দিতেন, তাহলে দেশটিতে যুদ্ধ অনেক আগেই শুরু হয়ে যেত।
আঙ্গেলা মের্কেল ১৬ বছর জার্মানি শাসন করেছেন। তিনি অর্থনৈতিক সংকট, ২০১৫ সালের অভিবাসী সংকট এবং ইউক্রেইনে ২০১৪ সালে রাশিয়ার আক্রমণের একটি গুরুতর সময়ে দেশের দায়িত্বে ছিলেন।
আঙ্গেলা মের্কেল কি মস্কোর প্রতি বেশি নমনীয় ছিলেন? কিইভকে সহায়তা করতে বেশি কালক্ষেপণ করেছেন? ২০০৮ সালে তিনি যদি নেটোতে ইউক্রেইনের সদস্যপদ না ঠেকাতেন তাহলে যুদ্ধ কি এখন হত? বিবিসি-কে এসব প্রশ্নেরই জবাবে নিজ শাসনামলের পক্ষে বলিষ্ঠ অবস্থান নেন মের্কেল।
তিনি বলেন, তার বিশ্বাস ইউক্রেইনে যুদ্ধ খুব দ্রুতই শুরু হয়ে যেত এবং হয়ত পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যেত, যদি ২০০৮ সালে ইউক্রেইন নেটো সদস্যপদ পাওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করত।
“আমরা সামরিক সংঘাত আরও অনেক আগেই দেখতে পেতাম। এটা আমার কাছে পুরোই পরিষ্কার ছিল যে, প্রেসিডেন্ট পুতিন (রাশিয়া) চুপচাপ বসে থেকে ইউক্রেইনের নেটো জোটে যোগ দেওয়া প্রত্যক্ষ করতেন না। তাছাড়া, সে সময় ইউক্রেইন একটি দেশ হিসাবে নিশ্চিতভাবেই নেটোতে যোগ দেওয়ার মতো ততটা প্রস্তুত ছিল না, যতটা তারা হয়েছিল ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে,” বলেন মের্কেল।
ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি অবশ্য মের্কেলের এ কথার সঙ্গে একমত পোষণ করেননি। নেটোতে ইউক্রেইনের সদস্যপদ প্রশ্নে মের্কেলের সিদ্ধান্তকে স্পষ্টতই ভুল হিসাব-নিকাশ, যা রাশিয়ার অবস্থানকে শক্ত করেছে বলে অভিহিত করেছিলেন তিনি। তার এই মত সেই সময় সমর্থন করেছিলেন ফ্রান্সের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট নিকোলাস সারকোজি।
আঙ্গেলা মের্কেল তিন বছর আগে রাজনীতি থেকে সরে যাওয়ার পর বিবিসি-তে এই বিরল সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। সাক্ষাৎকারে তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বার বার পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের হুমকি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
তিনি বলেন, “আমাদেরকে পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যবহার ঠেকাতে অবশ্যই যা কিছু সম্ভব করতে হবে। আমাদের ভয়ে জবুথবু হয়ে যাওয়া উচিত না। তবে আমাদেরকে এটাও স্বীকার করতে হবে যে রাশিয়া সবচেয়ে বড় কিংবা যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি বিশ্বে সবচেয়ে বড় দুটো পারমাণবিক শক্তিধর দেশের একটি। পারমাণবিক সংঘাতের সম্ভাবনা ভয় পাইয়ে দেওয়ার মতো।”
রাশিয়ার প্রসঙ্গে মের্কেল বলেন, রাশিয়ার সঙ্গে শান্তিপূর্ণভাবে সহযোগিতা বজায় রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করতে তিনি তার ক্ষমতা বলয়ের মধ্যে থেকে যা কিছু করা সম্ভব করেছেন।
বাস্তবে দেখা গেছে, আঙ্গেলা মের্কেল জার্মানির চ্যান্সেলর পদ থেকে চলে যাওয়ার কয়েকমাস পরই রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন ইউক্রেইণে পূর্ণমাত্রার আগ্রাসন শুরু করেন।
আঙ্গেলা মের্কেল জার্মানির চ্যান্সেলর থাকার সময়টিতে দেশটির জ্বালানি-চাহিদা থাকা বড় শিল্পকারখানাগুলো মস্কোর ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছিল। জার্মানি সরাসরি রাশিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত দুটি গ্যাসপাইপলাইন নির্মাণ করেছিল।
বিবিসি-র সঙ্গে সাক্ষাৎকারে মের্কেল বলেছেন, এই পাইপলাইন নির্মাণের উদ্দেশ্য ছিল দুটো। এক এতে জার্মানির ব্যবসায়িক স্বার্থ জড়িত ছিল। আর দ্বিতীয়ত: রাশিয়ার সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখাটাও দরকার ছিল।
তবে পূর্ব ইউরোপে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এবং নেটো সদস্যদেশগুলো মের্কেলের এই মতের ঘোর বিরোধী। পোলিশ এমপি রাডোস্লো এর মতে, জার্মানির গ্যাসের অর্থ রাশিয়ার লড়াইয়ে তহবিল জুগিয়েছে। ইউক্রেইনে আক্রমণ চালাতে রাশিয়া এই তহবিল ব্যয় করেছে।
মের্কেল অবশ্য জোর দিয়ে এও বলেছেন যে, তিনি কুটনৈতিক পন্থা এবং আলোচনার মধ্য দিয়ে ইউক্রেইনে রাশিয়ার হামলা কমানোর চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তার চেষ্টা শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়েছে- সেকথাও তিনি স্বীকার করেন।