Published : 15 Jun 2025, 12:28 AM
যুক্তরাজ্যের পথে উড়াল দেওয়ার আগে উড়োজাহাজের ভেতরে স্ত্রীর সঙ্গে তোলা ছবি ফেইসবুকে পোস্ট করেছিলেন বদরুদ্দীন হালানি, পরিবার ও বন্ধু-স্বজনদের উদ্দেশে্য লিখেছিলেন ‘ধন্যবাদ’, এর কয়েক মিনিট পরই তার সেই আনন্দের যাত্রা পরিণত হয় মর্মান্তিক শোকে।
ভারতের আহমেদাবাদে বৃহস্পতিবার এয়ার ইনডিয়ার উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায় মৃত্যুর মিছিলে যোগ হয়েছে বদরুদ্দীন হালানি, তার স্ত্রী ও শ্যালকের নামও।
এনডিটিভি লিখেছে, যুক্তরাজ্যে নাতনিদের দেখতে যাচ্ছিলেন বদরুদ্দীন। সেখান থেকে নিজের একটা কাজে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার কথা ছিল তার। কিন্তু ভারতের আহমেদাবাদ বিমানবন্দর থেকে উড়াল দেওয়ার পরই তার যাত্রা চিরতরে থেমে যায়।
বৃহস্পতিবার দুপুরে ভারতের আহমেদাবাদের সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে লন্ডনের উদ্দেশে উড়াল দেওয়ার পরই দুর্ঘটনায় পড়ে এয়ার ইনডিয়ার বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজ। ওই উড়োজাহাজে ২৩২ জন যাত্রী ও ১০ জন ক্রু ছিলেন।
উড্ডয়নের পর এক পর্যায়ে আরও উপড়ে উঠতে ব্যর্থ হওয়ায় উড়োজাহাজটি নিচে নেমে আসে এবং বিমানবন্দরের কাছে একটি মেডিকেল হোস্টেলের উপর বিধ্বস্ত হয়। উড়োজাহাজটির ২৪১ যাত্রীর প্রাণহানি ছাড়াও ঘটনাস্থলে আরও অনেকে প্রাণ গেছে। সবমিলিয়ে ২৭০ জনের মৃত্যুর কথা লিখেছে রয়টার্স।
ওই উড়োজাহাজে যাত্রীদের মধ্যে ৫৩ জন ব্রিটিশ নাগরিক, একজন কানাডার ও ৭ জন পর্তুগালের নাগরিক ছিলেন। বাকি সবাই ভারতীয় নাগরিক।
বদরুদ্দীন স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার দুপুর ১টা ১৭ মিনিটে ফেইসবুকে পোস্ট করে যুক্তরাজ্য সফরের জন্য স্ত্রী, পরিবার ও স্বজনদের প্রতি ধন্যবাদ জানান। এরপর ১টার ২৭ মিনিটে তার ভাইকে ফোন করেন। কয়েক মিনিট পর এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইটটি উড়াল দেয় এবং ১টা ৩৯ মিনিটে বিধ্বস্ত হয়।
বদরুদ্দীনের ব্যবসায়িক পরিবার; থাকতেন গুজরাটের আনন্দ এলাকায়।
স্ত্রী ইয়াসমিন ও শ্যালক মালেক বদরুদ্দীনের যুক্তরাজ্য সফরের সঙ্গী ছিলেন। ছোট্ট নাতনিদের দেখতে যাচ্ছিলেন তিনি। তবে নিজ এলাকা সিলভাসায় ‘সৈনিক স্কুলের’ জন্য তহবিল সংগ্রহে যুক্তরাষ্ট্রেও যাওয়ার কথা ছিল, যেটা ছিল তার ‘স্বপ্নের প্রকল্প’।
বদরুদ্দীনের ভাই রাজুভাই হালানি এনডিটিভিকে বলেন, “বদরুদ্দীন সামাজিক সেবামূলক কাজে নিবেদিত ছিলেন। সিলভাসায় ‘সৈনিক স্কুল’ তার স্বপ্নের প্রকল্প। দাদা হিসেবে নাতনিদের প্রতিও ছিলেন বেশ আবেগী। লন্ডনে নাতনিদের সময় দিতে চেয়েছিলেন তিনি।”
উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায় প্রাণ হারানো গুজরাটের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রূপানির সঙ্গেও বদরুদ্দীনের সম্পর্ক ছিল বলে জানান রাজুভাই।
দুর্ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে অগ্নিকাণ্ডে যাত্রীদের অনেকে পুড়েছেন। ফলে তাদের পরিচয় শনাক্তে ডিএনএ পরীক্ষার নমুনা সংগ্রহ করছে পুলিশ।
বদরুদ্দীনের ছেলে আসিম হালানি লন্ডন থেকে শুক্রবার আহমেদাবাদে নামেন। এরপর সেখান থেকে যান হাসপাতালে। বাবার লাশ শনাক্তে ডিএনএ পরীক্ষার নমুনা দেন।
আসিম হালানি বলেন, “দাদা-দাদির লন্ডনে আসার খবরে আমার দুই মেয়েই খুব উচ্ছ্বসিত ছিল। তারা দাদা-দাদির জন্য শুভেচ্ছা কার্ডও বানিয়েছে। কিন্তু সেগুলো এখন তারা কাকে দেবে? আমার পরিবারের জন্য এটা অত্যন্ত কঠিন সময়।”