Published : 10 May 2025, 04:42 PM
পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ বলেছেন, তার দেশ এই মুহূর্তে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের কথা ভাবছে না, কিন্তু সেরকম কোনো পরিস্থিতির উদ্ভব হলে ‘পর্যবেক্ষকরাও’ রেহাই পাবে না।
ভারতের সঙ্গে পাল্টাপাল্টি হামলা ও উত্তেজনার মধ্যে শনিবার জিও নিউজকে তিনি এ কথা বলেন বলে জানিয়েছে ডন।
“বিশ্বকে বলতে চাই যে (তেমন পরিস্থিতি হলে) তা কেবল অঞ্চলের মধ্যে আবদ্ধ থাকবে না, আরও বিস্তৃত এলাকায় ধ্বংসযজ্ঞ হতে পারে।
“ভারত যে পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে তাতে আমাদের হাতে বিকল্প সীমিত হয়ে আসছে,” বলেছেন তিনি।
পাকিস্তানের এ প্রতিরক্ষামন্ত্রী তাদের পারমাণবিক অস্ত্রভাণ্ডার দেখভালের দায়িত্বে থাকা ন্যাশনাল কমান্ড অথরিটির বৈঠকের সম্ভাবনাও নাকচ করেছেন।
এই ন্যাশনাল কমান্ড অথরিটিতে পাকিস্তানের সামরিক-বেসামরিক শীর্ষ নেতারা থাকেন, তারাই পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবস্থাপনা ও এ সংক্রান্ত নীতিগত সিদ্ধান্ত নেন।
ইসলামাবাদ শনিবার আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতের বিরুদ্ধে ‘অপারেশন বুনিয়ান-উন-মারসুস’ অভিযান শুরু করে। এর পরপরই পাকিস্তানের সেনাবাহিনী জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ এ কমান্ড অথরিটির বৈঠক ডেকেছেন।
এ প্রসঙ্গে বার্তা সংস্থা রয়টার্স পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রীর মন্তব্য চাইলেও তাৎক্ষণিকভাবে তার কাছ থেকে কোনো সাড়া পায়নি।
পারমাণবিক শক্তিধর দুই প্রতিবেশীর মধ্যে ১৯৯৯ সালের পর হওয়া সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী এই সংঘাত এরই মধ্যে উভয় পক্ষে কয়েক ডজন মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। উত্তেজনা কমাতে যুক্তরাষ্ট্র বারবার নয়া দিল্লি ও ইসলামাবাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে, শনিবার তাদের সঙ্গে শিল্পোন্নত দেশগুলোর জোট জি৭ও যুক্ত হয়েছে।
একইদিন পাকিস্তান জানিয়েছে, শুক্রবার রাত থেকে শনিবার পর্যন্ত ভারতীয় বাহিনীর গোলায় আজাদ জম্মু ও কাশ্মীরে অন্তত ১৩ জন নিহত ও অর্ধশত আহত হয়েছে।
“আপনি যেটার কথা বলছেন (পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার), সেটা তো হাতে রয়েছেই— কিন্তু চলুন আমরা সেটা নিয়ে কথা না বলি। আমরা এটাকে খুব দূরবর্তী একটা সম্ভাবনা হিসেবে বিবেচনা করি; বর্তমান প্রেক্ষাপটে এটা নিয়ে আলোচনা করাও ঠিক নয়।
“ওই পর্যায়ে যাওয়ার আগে, আমার মনে হয় উত্তেজনা কমে আসবে। ন্যাশনাল কমান্ড অথরিটির কোনো বৈঠক হয়নি, এমন কোনো বৈঠক ডাকাও হয়নি,” পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ পাকিস্তানের আরি টিভিকে এমনটা বলেছেন বলে জানিয়েছে রয়টার্স।
এদিকে শনিবার দুপুরে কয়েকটি পাকিস্তানি ও ভারতীয় গণমাধ্যম দুই দেশের সামরিক কর্মকর্তা পর্যায়ে ফোনে কথা হয়েছে বলে খবর ছড়িয়ে পড়লেও পরে পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী আতাউল্লাহ তারার জানান, তারা জানামতে এমন কোনো আলাপচারিতা হয়নি।
“নানান দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক পর্যায়ে আলাপ-আলোচনা চলছে। কিন্তু আমার জানামতে ভারতের কোনো কর্মকর্তার সঙ্গে এখনও সরাসরি কোনো কথা হয়নি। সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র এ ব্যাপারে আপনাদের আপডেট জানাতে পারবেন,” বলেছেন তিনি।
শনিবার মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনির ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুব্রামানিয়াম জয়শঙ্করকে ফোন করে উভয় পক্ষের প্রতি উত্তেজনা কমিয়ে আনকে এবং ‘ভুল বোঝাবুঝি এড়াতে সরাসরি যোগাযোগ পুনর্স্থাপনে’ আহ্বান জানিয়েছেন।
“ভারতের অবস্থান সবসময়ই পরিমিত ও দায়িত্বশীল ছিল, এখনো তাই রয়েছে,” রুবিওর সঙ্গে ফোনালাপের পর সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্সে এমনটাই লিখেছেন জয়শঙ্কর।
আর পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার স্থানীয় এক টেলিভিশনকে বলেছেন, যদি ভারত এখন থামে, তাহলে ‘আমরাও থামার কথা বিবেচনা করবো’।
শনিবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে ভারতের সেনাবাহিনী পাকিস্তানের আক্রমণ প্রসঙ্গে বলেছে, “সব বৈরি পদক্ষেপ কার্যকরভাবে মোকাবেলা করা হয়েছে এবং উপযুক্ত জবাব দেওয়া হয়েছে।”
“পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে সৈন্য এগিয়ে আনতে দেখা গেছে, যা পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করার লক্ষ্যে তাদের যে আক্রমণাত্মক মনোভাব তারই ইঙ্গিত দেয়।
“ভারতের সশস্ত্র বাহিনী পুরোপুরি প্রস্তুত আছে। পাকিস্তানের সেনারা যদি উত্তেজনা আর না বাড়ায় তাহলে ভারতের সশস্ত্র বাহিনীও উত্তেজনা না বাড়ানোর নীতি পুনর্ব্যক্ত করছে,” সংবাদ সম্মেলনে এমনটাই বলেছেন বলেছেন ভারতীয় বিমান বাহিনীর উইং কমান্ডার ব্যোমিকা সিং।