Published : 13 May 2025, 10:04 AM
ফিলিপিন্সের প্রেসিডেন্ট ফার্দিনান্দ মার্কোস জুনিয়রের মিত্ররা মধ্যবর্তী নির্বাচনে সেনেটের অন্তত অর্ধেক আসনে জয়ের পথে রয়েছে; অনানুষ্ঠানিক ফলে এমনটাই দেখা যাচ্ছে।
এই নির্বাচনকে তার নেতৃত্বের প্রশ্নে গণভোট আর তার ভাইস-প্রেসিডেন্ট সারা দুতের্তের সঙ্গে তিক্ত বিবাদের ছায়াযুদ্ধ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
রয়টার্স লিখেছে, সোমবার মেয়র, গভর্নর ও আইনপ্রণেতার ১৮ হাজার পদে নির্বাচন হলেও, সবচেয়ে বেশি নজর ছিল সেনেটের লড়াইয়ে। মার্কোস ও ভাইস প্রেসিডেন্ট সারার মধ্যে তীব্র বিবাদ এই নির্বাচনে মুখ্য হয়ে ওঠে, যা ১১ কোটি মানুষের দেশটিতে ক্ষমতার ভারসাম্য নতুন করে সাজাতে পারে।
বেশিরভাগ ভোট গণনা শেষে অনানুষ্ঠানিক ফলে দেখা গেছে, ২৪ সদস্যের সিনেটে ১২টি শূন্য পদের অর্ধেকেই মার্কোসের মিত্ররা এগিয়ে রয়েছে। ফলে সারার সঙ্গে একসময়ের শক্তিশালী জোট ভেঙে গেলেও তার নীতিগত কর্মসূচিতে সমর্থন পাওয়া সহজ হল। সারা সাবেক প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতের্তের মেয়ে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, মার্কোস-সমর্থক সেনেট কেবল গুরুত্বপূর্ণ আইন পাস বা মার্কিনঘেঁষা বিদেশি নীতিতে সমর্থনই দেবে না, বরং ২০২৮ সালের সম্ভাব্য প্রেসিডেন্ট প্রার্থী সারার রাজনৈতিক ভাগ্য নির্ধারণেও মার্কোসের প্রভাব বাড়াতে পারে। ফিলিপিন্সের সংবিধান অনুযায়ী, মার্কোস কেবল এক মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হতে পারবেন।
২০২২ সালের নির্বাচনে জয় পেয়েছিল দুটি শক্তিশালী রাজনৈতিক পরিবারের ঐক্যবদ্ধ মোর্চা, কিন্তু গত বছর তা তীব্র বিবাদে রূপ নেয়। সেখানে এখন ব্যক্তিগত অভিযোগের বন্যা বয়ে যাচ্ছে। তহবিলের অপব্যবহার, জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন এবং প্রেসিডেন্ট, ফার্স্ট লেডি ও হাউজ স্পিকারের প্রাণনাশের হুমকির অভিযোগে সারা দুতের্তেকে অভিশংসনের চেষ্টা করা হচ্ছে।
রয়টার্স লিখেছে, সেনেটের লড়াই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ অভিশংসনের বিচার যদি শুরু হয়, তাহলে সেনেট সদস্যরাই জুরি হবেন । সেখানে সারা দুতের্তেকে পদচ্যুত করা হতে পারে এবং রাজনীতিতে আজীবন নিষিদ্ধ করা হতে পারে।
‘আমাদের সঙ্গে থাকুন’
যদিও মার্কোসের সুবিধাজনক অবস্থান রয়েছেন, তবে ভোটের ফলে সারার রাজনৈতিক অস্তিত্ব টিকে যাওয়ার ইঙ্গিত রয়েছে। তার চার মিত্র সেনেটে জয়ের পথে রয়েছেন, যা তাকে ওই গুরুত্বপূর্ণ কক্ষে সমর্থনের গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি দেবে। সেনেটে তাকে দোষী সাব্যস্ত করতে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার প্রয়োজন হবে।
সারা এক বিবৃতিতে বলেন, “এখানেই শেষ নয়, নতুন করে পথাচলা শুরু। যে কোনো পটভূমি বা আগে যেখানেই সংশ্লিষ্টতা থাকুক না কেন- একটি শক্তিশালী ও নীতিবান বিরোধী দল গঠনে আমাদের সঙ্গে যোগ দিতে সব নাগরিককে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। আমরাই একটি ন্যায্য, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও ন্যায়ানুগ ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে পারি। আমাদের সঙ্গে থাকুন।”
মাকাতি বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানী এডারসন টাপিয়া বলেন, যদিও মার্কোস সেনেটে প্রভাব রাখবেন, সিদ্ধান্ত যে সবসময় তার পক্ষে যাবে তা নয়।
"আমরা সেনেটে আরও বেশি বিভক্তি দেখতে পাব, বিশেষ করে যেহেতু অনেকে ২০২৮ সালের (পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের) জন্য প্রস্তুতি নেবে। (সারা) দুতের্তের প্রভাবকে একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যাবে না।”
আগেই উত্তপ্ত হওয়া নির্বাচনি মাঠকে আরও গরম করে দিয়েছে রদ্রিগো দুতের্তেকে গ্রেপ্তারের ঘটনা। গত মার্চে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) অনুরোধে সাবেক প্রেসিডেন্টকে গ্রেপ্তার করে ফিলিপিন্সের পুলিশ। ‘মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’ নামের অভিযানে হাজার হাজার মানুষকে হত্যার অভিযোগে তিনি বর্তমানে হেগে কারাবন্দি রয়েছেন।
তিনি দাবি করেছেন, তার গ্রেপ্তার ছিল অবৈধ, যা অপহরণের সমতুল্য।
সারা দুতের্তে অভিযোগ করেছেন, তার পরিবারকে রাজনৈতিকভাবে ধ্বংসের চেষ্টা করছেন মার্কোস। তিনি সাবেক প্রেসিডেন্টকে বিদেশি আদালতের হাতে তুলে দিয়ে ‘সার্বভৌমত্ব বিক্রি’ করেছেন। দুই অভিযোগই অস্বীকার করে আসছেন মার্কোস।
বয়স্ক রদ্রিগো দুতের্তে হেগে আটক থাকলেও অনানুষ্ঠানিক ফলাফল অনুযায়ী, তিনি তার জন্মস্থান দাভাও সিটির মেয়র পদে বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছেন। তার ছেলে একই শহরে ভাইস-মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন।