Published : 18 Dec 2024, 10:29 AM
‘গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনে’ জড়িত ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীকে মার্কিন সহায়তা বন্ধ করার চেষ্টায় যুক্তরাষ্ট্র সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করছে পাঁচ ফিলিস্তিনি।
আল জাজিরা জানিয়েছে, গাজা, অধিকৃত পশ্চিম তীর ও যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত পাঁচ ফিলিস্তিনি মঙ্গলবার লেহি আইনের আওতায় এ মামলা করার ঘোষণা দেন।
নব্বইয়ের দশকে প্রণীত ওই মার্কিন ফেডারেল আইনে বিচারবহির্ভূত হত্যা এবং নির্যাতনের মত গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনে জড়িত বিদেশি সামরিক বাহিনীকে যুক্তরাষ্ট্রের তহবিল যোগানো নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের পর শুরু হওয়া গাজা যুদ্ধে ইসরায়েলি বাহিনীকে সহায়তা দেওয়ার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর ওই আইন বাস্তবায়নে ব্যর্থ হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে মামলায়।
গাজা যুদ্ধ শুরুর পর ইসরায়েলের বোমাবর্ষণ এবং স্থল অভিযানে এ পর্যন্ত ৪৫ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী সেখানে গণহত্যাসহ গুরুতর যুদ্ধাপরাধে জড়িত বলে অভিযোগ করে আসছে জাতিসংঘ এবং বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় মানবাধিকার সংস্থাগুলো।
মামলার প্রধান বাদী আমাল গাজা একজন শিক্ষক, যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে সাতবার তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। ইসরায়েলি হামলায় তার পরিবারের ২০ জন নিহত হয়েছেন।
এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, "যে অকল্পনীয় ক্ষতি দুঃখকষ্ট ও ক্ষতি আমাকে এবং আমার পরিবারকে সইতে হয়েছে, তা হয়ত অনেকটা কমত, যদি যুক্তরাষ্ট্র মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘনকারী ইসরায়েলি বাহিনীকে সামরিক সহায়তা দেওয়া বন্ধ করত।"
আল জাজিরা লিখেছে, মামলার বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে তারা যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল। পররাষ্ট্র দপ্তর বলেছে, তারা বিচারাধীন বিষয়ে কোনো মন্তব্য করবে না।
লেহি আইন যুক্তরাষ্ট্রের একটি ফেডারেল আইন, যেখানে বলা হয়েছে, বিদেশি কোনো বাহিনীর বিরুদ্ধে যদি গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিশ্বাসযোগ্য তথ্য উপাত্ত থাকে, তাহলে যুক্তরাষ্ট্র সরকার সেসব বাহিনীকে কোনো ধরনের সহায়তা দিতে পারবে না।
কোনো বাহিনীর বিরুদ্ধে নির্যাতন, বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম এবং ধর্ষণের মত অভিযোগ থাকলে এ আইন প্রযোজ্য হবে।
পাঁচ ফিলিস্তিনিকে এই মামলা পরিচালনার ক্ষেত্রে আইনি সহায়তা দিচ্ছে অলাভজনক সংস্থা ডন, যারা আরব বিশ্বে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের জন্য প্রচার চালিয়ে আসছে।
ডনের অ্যাডভোকেসি ডিরেক্টর রায়েদ জারার আল জাজিরাকে বলেন, "আমরা সরকারকে বলছি, তারা যেন আইন মেনে চলে।”
গাজা যুদ্ধে ইসরায়েলি বাহিনীর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ভয়াবহ চিত্র বিভিন্ন প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলো বহুদিন ধরেই ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীকে সহায়তা বন্ধ করার জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আসছে।
গাজায় বেশ কয়েকটি মারাত্মক হামলায় ইসরায়েলি বাহিনী যে যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি অস্ত্র ব্যবহার করেছে, সে বিষয়টিও তুলে ধরেছে বিভিন্ন মানবাধিকার গ্রুপ। নির্বিচারে এসব হামলায় বহু বেসামরিক ফিলিস্তিনির প্রাণ গেছে।
যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে বছরে কমপক্ষে ৩.৮ বিলিয়ন ডলারের সামরিক সহায়তা দেয়। তবে গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে বাইডেন প্রশাসন ইসরায়েলকে অতিরিক্ত ১৭.৯ বিলিয়ন ডলারের সহায়তা দিয়েছে বলে ব্রাউন ইউনিভার্সিটির গবেষকদের ধারণা।
রায়েদ জারার বলেন, ইসরায়েলি বাহিনীর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো এতটাই গুরুতর, তার মাত্রা এতটাই বিস্তৃত যে, লেহি আইন প্রয়োগ করা হলে ইসরায়েলের বেশিরভাগ সেনা ইউনিট মার্কিন সামরিক সহায়তার জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হবে।
“যুক্তরাষ্ট্র যদি অস্ত্র পাঠানো বন্ধ করে, তাহলে ইসরায়েলের সামরিক অভিযান চালিয়ে যাওয়ার আর উপায় থাকবে না।”